কোনো নোটিস ছাড়ই ব্লগটি বন্ধ করে দেওয়ায় সরকারের নিন্দা জানিয়ে ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু আকাশ ইকবাল লিখেছেন, ‘‘এটা ঠিক করেনি সরকার৷ এভাবে একটা ওয়েবসাইটকে কোনোরকম নোটিস ছাড়া বন্ধ করে দিতে পারে না তারা৷ সরকার যে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার দিচ্ছে, এটাও তো গণতান্ত্রিক নিয়মে হয়নি৷ আর তারা শুধু বন্ধ করে থেমে থাকেনি, সাইটের প্রধান অ্যাডমিনকে গ্রেপ্তার করার জন্য আবার খোঁজ করছে৷ সরকারের এই কর্মকাণ্ডে আমি নিন্দা জানাই৷''
পুরোপুরি উলটো মত প্রকাশ করেছেন পাঠক আখলাক রাজ৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এ রকম একটা জঘন্য ব্লগ আরো আগে বন্ধ করা উচিত ছিল৷''
ডয়চে ভেলের পাতায় এই তথ্যটি দেখে পাঠক আখলাক রাজ আমাদের ওপরও খানিকটা অসন্তুষ্ট৷ আখলাকের ধারণা, এই ব্লগ সাইটটি নাকি বাকস্বাধীনতা বলতে শুধুমাত্র ইসলামের বিরুদ্ধে লেখা-লেখিকেই বোঝে৷ তাই তাঁর কথায়, ‘‘সরকার সঠিক কাজটাই করছে৷''
সালেক মোহাম্মদ লিখেছেন, তিনি নাকি ‘ইস্টিশন' ব্লগ সাইটটির নাম আগে কখনো শোনেননি৷ ডিডাব্লিউ-র পাতা থেকেই প্রথম জেনেছেন এ সম্পর্কে৷ এরপরেও তিনি সারকারের খানিকটা সাফাই গেয়ে লিখেছেন, ‘‘সরকার নিশ্চয়ই খারাপ কিছু দেখেছে৷ আর এ জন্যই হয়ত বন্ধ করেছে৷ সরকার দেশের আইন ও সংবিধানের বাইরে নিশ্চয়ই কিছু করে নাই৷ তবে বিশ্ব মানবাধিকার সনদের ধারা অনুযায়ী সরকার কাজটা ঠিক করে নাই...৷''
অন্যদিকে পাঠক জহিরুল ইসলাম ব্লগারদের লক্ষ্য করে তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন এভাবে: ‘‘মুক্তমনার লেবাস নিয়ে অন্যের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়ে আবোল-তাবোল লিখবেন আর জীবনের নিরাপত্তা নেই বলে ইউরোপ-অ্যামেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের নামে ‘ইমিগ্রেন্ট' হওয়ার ধান্দা করবেন৷ বেশ ভালোই জমিয়েছেন তাঁরা৷''
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
শাম্মী হক, অ্যাক্টিভিস্ট, বাংলাদেশ
‘‘বাংলাদেশের মানুষ তাদের মনের কথা বলতে পারেন না৷ সেখানে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই এবং প্রতিদিন পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে৷ একজন সামাজিক অ্যাক্টিভিস্ট এবং ব্লগার হিসেবে আমি ধর্ম নিয়ে লেখালেখি করি, যা ইসলামিস্টরা পছন্দ করেনা৷ তারা ইতোমধ্যে ছয় ব্লগারকে হত্যা করেছে৷ ফলে আমি দেশ ছাড়তে বাধ্য হই৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ভেনেজুয়েলা
‘‘বাকস্বাধীনতা হচ্ছে এমন এক ধারণা যার অস্তিত্ব আমার দেশে নেই৷ সাংবাদিকরা জরিমানা আর নিজের জীবনের উপর ঝুঁকি এড়াতে সরকারের সমালোচনা করতে চায়না৷ সরকারের সমালোচনা করলে সাংবাদিকদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়৷ এরকম পরিস্থিতির কারণে অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন৷ দেশটির আশি শতাংশ গণমাধ্যমের মালিক সরকার, তাই সাধারণ মানুষের মত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
রোমান দবরোখটভ এবং একাতেরিনা কুজনেটসোভা, সাংবাদিক, রাশিয়া
রোমান: ‘‘রাশিয়ায় সরকার আপনাকে সেন্সর করবে৷ আমাদের ওয়েবসাইটটি ছোট এবং লাটভিয়ায় নিবন্ধিত৷ ফলে আমি সেন্সরশিপ এড়াতে পারছি৷ তা সত্ত্বেও সরকার মাঝে মাঝে আমাদের সার্ভারে হামলা চালায়৷’’ একাতেরিনা: ‘‘রাশিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ইউরোপের মানুষ রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে স্বাধীন৷ আমি আশা করছি, রাশিয়ার পরিস্থিতিও বদলে যাবে৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, সিরিয়া
‘‘বেশ কয়েক বছর ধরেই সিরিয়ায় বাকস্বাধীনতার কোনো অস্তিত্ব নেই৷ এমনকি আসাদের শাসনামল সম্পর্কে অনুমতি ছাড়া মতামতও প্রকাশ করা যায়না৷ এটা নিষিদ্ধ৷ কেউ যদি সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তাহলে খুন হতে পারে৷ আমি যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনামূলক কিছু লিখি, তাহলে বেশিদিন বাঁচতে পারবো না৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
আয়েশা হাসান, সাংবাদিক, পাকিস্তান
‘‘পাকিস্তানে ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা’ শব্দ দু’টি খুবই বিপজ্জনক৷ এগুলোর ব্যবহার আপনার ক্যারিয়ার বা জীবন শেষ করে দিতে পারে৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
রাবা বেন দউখান, রেডিও সাংবাদিক, টিউনিশিয়া
‘‘আমাদের অভ্যুত্থানের একমাত্র ফল হচ্ছে বাকস্বাধীনতা৷ আমরা এখন আমাদের সরকারের সমালোচনা করার ব্যাপারে স্বাধীন৷ এবং আমি যখন আমাদের অঞ্চলের অন্য দেশের বাসিন্দাদের বাকস্বাধীনতার কথা জিজ্ঞাসা করি, তখন একটা বড় ব্যবধান দেখতে পাই৷ আমাদের দেশে দুর্নীতিসহ নানা সমস্যা আছে সত্যি, তবে বাকস্বাধীনতা কোনো সমস্যা নয়৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
খুসাল আসেফি, রেডিও ম্যানেজার, আফগানিস্তান
‘‘বাকস্বাধীনতা আফগানিস্তানে একটি ‘সফট গান৷’ এটা হচ্ছে মানুষের মতামত, যা সম্পর্কে সরকার ভীত৷ এটা চ্যালেঞ্জিং হলেও আমাদের প্রতিবেশীদের তুলনায় আমাদের অবস্থা ভালো৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
সেলিম সেলিম, সাংবাদিক, ফিলিস্তিন
‘‘ফিলিস্তিনে সাংবাদিকদের খুব বেশি স্বাধীনতা নেই৷ একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, সাংবাদিকরা মুক্তভাবে ঘোরাফেরা করতে পারে না৷ ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করছে৷ তারা যদি ফেসবুকে তাদের মতামত জানায়, তাহলেও সরকার গ্রেপ্তার করে৷ তবে সিরিয়া বা ইরাকের চেয়ে অবস্থা ভালো৷’’
-
বাকস্বাধীনতা যেখানে যেমন
অনন্য আজাদ, লেখক, বাংলাদেশ
‘‘আমাদের দেশে কোনো বাকস্বাধীনতা নেই৷ আপনি ইসলাম বা সরকারের সমালোচনা করে কিছু বলতে পারবেন না৷ ইসলামী মৌলবাদীরা ঘোষণা দিয়েছে, কেউ যদি ইসলামের সমালোচনা করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে৷ আমি একজন সাংবাদিক এবং গত বছর আমাকে ইসলামিস্ট জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে৷ ফলে আমাকে দেশ থেকে পালাতে হয়েছে৷’’
লেখক: এন-সোফি ব্রান্ডলিন, কার্ল নাসমান / এআই
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ