যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০৭০ সালে বিশ্বে থাকবে সবচেয়ে বেশি মুসলমান ধর্মের মানুষ৷ পাঠক মোহাম্মদের ধারণা, মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়ে যাবে ২০৭০ সালের আগেই৷
পাঠক রাকিবও বিশ্বাস করেন যে, ২০৭০ সালে মুসলমানের সংখ্যাই হবে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি৷
আর পাঠক শুকুর বলছেন, ‘‘২০৭০ সালে হবে আবার কী? ইসলাম ধর্ম সর্বকালেই সর্বশ্রেষ্ঠ, সবচেয়ে বড় ধর্ম ছিল, আছে এবং থাকবে৷ এতে বিন্দু পরিমাণ সন্দেহের অবকাশ নাই''৷ পাঠক তামিম তাহমিদেরও ঠিক একই বিশ্বাস৷
তবে সাইফ আহমেদ মনে করেন, মুসলিম বেশি হবে ঠিকই কিন্তু তাদের ঈমানের কোনো ক্ষমতা থাকবে না৷
পাঠক আমিনুল ইসলাম শাহিন মনে করেন, ধর্ম নিয়ে এসব তথ্য প্রচার না করাই ভালো৷
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
নিজেকে কি জার্মান মনে করেন?
জার্মানির বিলেফিল্ডে থাকেন মরোক্কান বংশোদ্ভূত আয়া৷ গত মার্চে বার্লিনে অনুষ্ঠিত হলো ‘ইয়ং ইসলাম কনফারেন্স ২০১৭’৷ তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল – নিজেকে কি জার্মান মনে করেন? জবাবে ১৮ বছর বয়সি এই তরুণী বলেন, ‘‘আমি নিজেকে যতটা মরোক্কান মনে করি, তার চেয়ে বেশি জার্মান মনে করি৷ জার্মান সংস্কৃতির মাঝেই বেড়ে উঠেছি আমি৷ এর (জার্মান সংস্কৃতির) সঙ্গে যোগাযোগ আমার অন্য দেশের (মরক্বো) চেয়ে অনেক বেশি৷’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
ইউরোপে কি ইসলামীকরণ চলছে?
২২ বছর বয়সি মার্টিন থাকেন ফ্লেনসবুর্গে৷ ইউরোপে কি ইসলামীকরণ চলছে? – এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, ইউরোপে অনেক সংস্কৃতি এসে মিলছে৷আমার মনে হয়, ইউরোপ এ মুহূর্তে বেদনাদায়ক কিছু শিক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ ব্রেক্সিট এর একটা উদাহরণ৷ কিন্তু তথ্য এবং পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ইউরোপে মোটেই ইসলামীকরণ চলছে না৷ এটা পুরোপুরি বাজে কথা৷’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
আপনার কাছে সংহতির মানে কী?
ফলকান বললেন, ‘‘আমার কাছে এর মূল কথা হলো, কোথাও অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে থাকা বা না থাকার অনুভূতি৷ শরণার্থীদের অনেককে এমন অনেক প্রশ্নই শুনতে হয় যা থেকে বোঝা যায় যে, আপনি আসলে এ সমাজের বাইরের কেউ৷ ছোটবেলায় এ বিষয়টি আমার খুবই খারাপ লাগত৷ মনে হতো, কোথায় আছি, কী কাজ করছি– এসব ছাপিয়ে সবসময় আমি যেন শুধুই একজন বহিরাগত ’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
মুসলিম আর অমুসলিমদের সম্পর্কোন্নয়নে কী কী করা যেতে পারে?
‘ইয়ং ইসলাম কনফারেন্স ২০১৭’-এর সংলাপের শিরোনাম ছিল ‘রিপেয়ারিং ডায়ালগ’৷ হানা-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ‘‘মুসলিম আর অমুসলিমদের সম্পর্ক মেরামতের জন্য কী করা দরকার?’’ হানা বললেন, ‘‘বড় সমস্যা হলো, এখানে একজন আরেকজনের বিষয়ে যত কথা বলে, একজন আরেকজনের সঙ্গে ততটা বলে না৷ আরেকজনের কাছে গিয়েই কিন্তু জানতে চাওয়া যায়, ‘‘তুমি কেন হেডস্কার্ফ পরো?’’ আমরা যেন এভাবে জানার আগ্রহ প্রকাশ করতে শিখিইনি৷’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
মুসলমানদের মিডিয়া যেভাবে তুলে ধরে
ডুইসবুর্গের মার্ভ-এর কাছ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘যখন নির্দিষ্ট একটা বিষয়ের দিকেই পুরো গুরুত্ব দিয়ে মুসলিমদের তুলে ধরা হয়, তখন খুব খারাপ লাগে৷ ধরা যাক, আমি হেডস্কার্ফ পরেছি৷ এর মানে তো এই নয় যে, আমি খুব গরিব৷ আমার তো এর বাইরেও অনেক কিছু আছে৷ আমি যে ডুইসব্যুর্গের মানুষ হিসেবে গর্বিত সেটাও তো খুব গুরুত্বপূর্ণ৷’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
মুসলিমবিরোধী ‘হেটস্পিচ’ বা ভুয়া খবর রুখতে কী করণীয়?
কোলনের ২৫ বছর বয়সি তরুণ আহমেদ মনে করেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হেটস্পিচ বা ভুয়া খবরের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি দরকার সরাসরি কথা বলা৷ এসব নিয়ে আলোচনা করতে আমি সবসময় প্রস্তুত৷ বিশেষ করে ফেসবুকে যে কোনো বিষয়ে মন্তব্য করার সাহস থাকা উচিত৷ তুরস্ক নিয়ে বিতর্কে অংশ নেয়ার জন্য আমি সম্প্রতি আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রি-অ্যাক্টিভেট করেছি৷’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
শরণার্থীবিরোধী পেগিডা বা এএফডি সম্পর্কে ভাবনা
১৯ বছর বয়সি আয়লিন বললেন, ‘‘এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না৷এসব লোকের সঙ্গে কথা বলার কোনো মানে হয় না৷ কিছু লোক কখনোই মনমানসিকতা বদলাতে চায় না৷ এএফডি মনে করে যে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ঠিক৷ পেগিডাও তাই মনে করে৷ অথচ তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বড় একটা অংশই কিন্তু সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷ তবে আমার মনে হয়, এ মুহূর্তে এসবের একটা হুজুগ চলছে, একসময় সবার শুভবু্দ্ধির উদয় হবে৷’’
-
জার্মানির মুসলমানদের সম্পর্কে তরুণরা যা ভাবছেন
ইসলাম কি জার্মানির অংশ?
পল বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই৷ জার্মানি এমন এক ভৌগোলিক এলাকা, যেখানে একটিই সমাজের বসবাস এবং একটি সমাজই ক্রিয়াশীল৷ এখানে বসবাসরত প্রত্যেকটি গ্রুপই জার্মানির অংশ৷ জার্মানিতে বাস করলে আমি জার্মানিরই অংশ এবং আমার নিজেকে ‘জার্মান’ বলার অধিকারও আছে৷ সেক্ষেত্রে আমার তো মনে হয় কারো জার্মান ভাষায় কথা বলারও দরকার নেই৷’’
অন্যদিকে পাঠক আদিত্য রাজ মন্ডল বিশ্বাসই করছেন না যে, ২০৭০ সালে মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে৷ তাঁর ধারণা, জোর করে ভয় দেখিয়ে অন্য মানুষকেহত্যা করে হয়তো সম্ভব হতে পারে, এমনিতে নয়৷
ডয়চে ভেলের পাঠক শিমুল রায় ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘শুধুমাত্র মাথা প্রতি ৮ থেকে ১০ জন করে বাচ্চা হলেই নাকি ২০৭০ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান হতে পারে৷''
আর জিসান সাগর জয় তো এ কথা বিশ্বাসই করেন না যে, বিশ্বে কখনো মুসলমানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে৷ বরং তিনি বলছেন, ইসলাম নাকি তখন থাকবেই না৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী
-
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
খ্রিষ্টানদের ছাড়িয়ে যাবে...
২০১০ সালে সারা বিশ্বে মোট ২১৭ কোটি মানুষ খ্রিষ্ট ধর্ম অনুসরণ করতো৷ তারপরই ছিল ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা৷ তখন বিশ্বে মোট ১৬০ কোটি ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল৷ কিন্তু পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন বলছে, ৫ দশক পর খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের পিছনে ফেলে সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হয়ে যাবে মুসলমান৷
-
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
জন্মহার সবচেয়ে বেশি
কেন এত দ্রুত ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বাড়বে? বলা হচ্ছে, সারা বিশ্বে মুসলমানদের জন্মহার বেশি আর মূলত এ কারণেই সংখ্যায় সব ধর্মকে পিছনে ফেলবে তারা৷ মুসলমানদের শিশু জন্মহার ৩ দশমিক ১ শতাংশ আর খ্রিষ্টানদের ২ দশমিক ৭ শতাংশ৷
-
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
তরুণ অনুসারী বেশি
অন্য সব ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্মের তরুণ অনুসারী বেশি৷ এ মুহূর্তে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ অন্যদিকে ৩৪ শতাংশ ইসলাম ধর্মবলম্বীর বয়স ১৫ বছরের কম৷ তার মানে, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের তুলনায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বেশি দিন সন্তান জন্ম দেয়ার সুযোগও বেশি৷
-
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
নাস্তিক কমবে
পিউ রিসার্চ সেন্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে নাস্তিক অনেক কমবে৷ এখন যেখানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ নাস্তিক, সেখানে ২০৫০ নাগাদ তা কমে হবে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ৷
-
২০৭০ সালে ইসলাম হবে বিশ্বের সবচেয়ে ‘বড় ধর্ম’
২০৭০ সালে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলমান
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে আরো যে বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে, তা হলো, ২০১০ সাল থেকে ২০৫০ সাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে৷ এই সময়ে ইসলাম ধর্মাবলম্বী বাড়বে ৭৩ শতাংশ৷ ফলে এক সময় স্বাভাবিক কারণেই সংখ্যায় খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ছাড়িয়ে যাবে ইসলাম৷ পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০৭০ নাগাদ সারা বিশ্বে মুসলমানই সবচেয়ে বেশি থাকবে৷