আসিফ বিন হারুনের মন্তব্য, ‘‘অবশ্যই! ওরা আমাদেরই মা-বোন৷ যারাই ওদের উপর অত্যাচার করছে আল্লাহ তাদের বিচার করবে!''
আবদুল ফারুক লিখেছেন, ‘‘না ভাই, ইসলাম কখনো অন্য ধর্মের ওপর আক্রমণ করার অনুমতি দেয় না৷ এখন যা হচ্ছে তার জন্য ধর্মের চেয়ে রাজনীতিই বেশি দায়ী৷''
মুনমুন লিখেছেন, ‘‘কি বলব? ঐ পারে হিন্দুরা মুসলিমদের মারে, এই পারে মুসলিমরা হিন্দুদের মারে, কাকে ভাল বলব? তবে সাম্প্রদায়িকতার বলি হয় সব সময় দরিদ্ররা, তা সে হিন্দু বা মুসলিম যেই হোক৷ ওপারের কথা জানি না তবে এই পারের অবস্থা দেখে মনে হয় পাকিস্তানিরা বুঝি আবার এদেশ দখল করতে চাচ্ছে৷ কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা শুধু নেই, এবার কে কাকে বাঁচাবে?''
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া
যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
‘নদী ঠাকুর’
দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
প্রাণ বাঁচাতে নদীতে
নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বই-পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
সুন্দর স্বপ্নে চির
হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়
হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী
৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
গাছও রেহাই পায়নি
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
পলাতক জামায়াত নেতা
মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
আক্রান্তদের অভিযোগ
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
গণধর্ষণ
যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী
কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বাড়িঘর ছেড়েছেন
দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷
-
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
শুধুই আতঙ্ক
দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷
লেখক: নুরুননাহার সাত্তার
মুহাম্মদ মুর্শেদুল হক ফেসবুকে তাঁর মতামত জানিয়েছেন এভাবে, বেআইনি কোনো হামলা সমর্থনযোগ্য নয়, তা হিন্দুর উপর হোক আর মুসলিমের উপর৷ তবে হামলাটি হিন্দুর উপর হলো, না মুসলিমের উপর হলো সেভাবে না দেখে মানুষের উপর হলো কিনা তা দেখা উচিত৷ যে-কোনো হামলাকে ধর্মীয় রূপ দেয়ার চেষ্টা এক ধরনের সাম্প্রদায়িক উস্কানি৷ ‘‘আমার ক্ষোভ প্রকাশের কারণটি বলি, হামলার বীভৎস রূপটি যে শুধু হিন্দুদের উপর হামলার মধ্যে পাওয়া গেছে তা নয়৷ পাঠকরা সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে দেখেছেন সাম্প্রতিক সময়ে সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মেহেরপুরের মুসলিম জনতার উপর যৌথবাহিনীর বর্বরতার বীভৎস দৃশ্যও৷ এই দৃশ্যগুলো হিন্দুদের উপর হামলার থেকেও বেশি বীভৎস ছিল৷''
নিয়মিত ফেসবুকে নিজেদের মন্তব্য তুলে ধরার জন্য পাঠক বন্ধুদের অনেক ধন্যবাদ৷ এভাবেই সবসময় ডিডাব্লিউ-র সাথে থাকবেন, কেমন?
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: জাহিদুল হক