‘‘বিচার হবে কোথা থেকে? সাংবাদিকরাই তো বৈঈমানি করলেন৷ সাগর-রুনির হত্যার বিচার চাওয়া কমিটির প্রধান আব্দুস সোবহান (প্রকৃত নাম ইকবাল সোবহান)-কে শেখ হাসিনা পদ দিয়ে কিনে নিয়েছেন৷ আর আপনারা নিজেদের স্বার্থে সাগর-রুনিকে ব্যবহার করলেন, কিন্তু আজ এক মিনিটের জন্য প্রতিবাদ করতে দেখি নাই৷ তাদের মৃত্যুবার্ষিকী আসলে সংবাদ প্রচার করেন, সেখানেও স্বার্থ, ওয়েবসাইটে যত ভিজিটর তত টাকা!'' এই মন্তব্য পাঠক রমজান আলির৷
পাঠক মহসিন মিয়াও রমজান আলির সাথে একমত৷ আর ‘‘সাগর ও রুনির হত্যার বিচার এই অবৈধ সরকারের দ্বারা কিভাবে সম্ভব ?''– এই প্রশ্ন রোকনুজ্জামানের৷
তবে সাখাওয়াত বাবন কিন্তু ছয় বছর পরও সাগর আর রুনি হত্যার বিচার নাহওয়ার জন্য বর্তমান সরকারকেই দায়ী করছেন৷ অবশ্য আনিসুর রহমানের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দুঃখ হয়, তারপরও তিনি আশাবাদী যে, সুদিন আসবেই৷
ছয় বছর আগে সাগর ও রুনি হত্যার পর তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘৪৮ ঘন্টার মধ্যেই সকল রহস্যের উদঘাটন হবে৷'' ‘‘৪৮ ঘন্টা এখনো হয়নি - এই ৪৮ ঘণ্টার ব্যাপ্তি সম্পর্কে বলা মুশকিল! সাংবাদিক সাগর, রুনির খুনের বিচার সম্পর্কে এই মন্তব্য পাঠক মাহফুজুল ইসলামের৷
অনেকের মতো পাঠক মেহেদি হাসানও পুরোপুরি হতাশ৷ ডয়চে ভেলের তৈরি ছবিঘরের শিরোনামের সঙ্গে কিছুটা মিলিয়ে তাই তিনি বলছেন ‘‘আসলেই ভুলে যাওয়া উচিত৷''
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
ছবিতে বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ড
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে এই প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে সাগর-রুনির পরিবার, বন্ধু-বান্ধব ও শুভানুধ্যায়ীরা৷ প্রদর্শনীটি চলবে ২৬শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
স্থান পেয়েছে কবরের ‘এপিটাফ’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত আলোকচিত্র প্রদর্শনীর দুই দরজায় সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির কবরের এপিটাফ-এর একটি আলোকচিত্র৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
‘আমরা তোমাদের ভুলবো না’
‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করি’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীটিতে সাংবাদিক দম্পতির কর্মস্থলের পরিচয়-পত্র৷ ঢাকায় মাছরাঙা টেলিভিশনে যোগ দেয়ার আগে সাগর সরওয়ার কাজ করতেন ডয়চে ভেলেতে আর মেহেরুন রুনি কাজ করতেন বাংলাদেশের বেসরকারি টেলিভিশন ‘চ্যানেল আই’-এ৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
ছোটবেলার সেই দিনগুলো...
সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির পরিচয়-পত্রের পাশে রুনির ছোটবেলার আলোকচিত্র৷ মেহেরুন রুনির পারিবারিক অ্যালবামের এ সব ছবিও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
‘আজও বড় ভালোবাসি তোমায়’
সাগর-রুনি ও তাঁদের একমাত্র শিশুপুত্র মেঘের একটি মর্মস্পর্শী ছবি৷ ছবিটির বামদিকে মেঘের আঁকা বাবার ছবি আর ডানে মায়ের ছবি৷ কোনো এক ‘মা দিবসে’ ছবিটি এঁকেছিল মেঘ, যার পাশে কাঁচা হাতে লেখা – ‘‘ভালোবাসি মা’’৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
চঞ্চল মেঘের প্রশ্নবিদ্ধ চোখ
প্রদর্শনী জুড়ে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ে মাহির সরওয়ার মেঘের চঞ্চলতা৷ পুরো গ্যালারি জুড়ে আপন মনে খেলে চলা ছোট্ট এই শিশুটির দু’চোখেই যেন বাবা-মা হত্যার বিচারের আকুতি৷ মেঘ কি পাবে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের বিচার?
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
ছোট্ট মেঘের হাতের কাজ
ডয়চে ভেলেতে কাজের সূত্রে মেঘকে নিয়ে সাগর-রুনির বসবাস ছিল জার্মানিতে৷ সে সময়ে স্কুলের জন্য তৈরি করা মেঘের একটি ছবির অ্যালবাম৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সত্যি কি আমরা ভুলে যায়নি?
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর প্রকাশিত বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা৷ আর তার সামনে, দেয়ালে লেখা ‘Let’s Forget Sagar-Runi’ – ‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
হারিয়ে যাওয়া বোনের জন্য...
প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনির ছোটবেলার একটি ছবি বোর্ডে লাগাচ্ছেন ভাই নওশেদ আলম৷ চার ভাই-বোনের মধ্যে রুনি ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
দোষীদের খোঁজ পাওয়া যাবে তো?
রুনির আরেক ভাই নওশের রোমান৷ তিনি জানান, ‘‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতেই এ প্রদর্শনীর আয়োজন৷ এতে পুরো ঘটনার ভয়াবহতা ফুটে না উঠলেও, জঘন্যতম এই অপরাধের প্রতি মানুষের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করার প্রয়াস রয়েছে৷’’
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
কোথায় গেল সাগরের ল্যাপটপ?
প্রদর্শনীতে সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত ল্যাপটপের পাশে তাঁরই লেখা একটি বই৷ মাঝে প্রতীক হিসেবে রাখা হয়েছে একটি খেলনার পিস্তল৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
চোখে চশমা, মুখে সেই অনবদ্য হাসি
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্তিতে আয়োজিত প্রদর্শনীতে মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ারের ব্যবহৃত চশমা৷ এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সাংবাদিক দম্পতির বিভিন্ন আলোকচিত্র ছাড়াও দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রও স্থান পেয়েছে৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
আজও কেমন জলজ্যান্ত!
প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রের পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে ভিডিও ক্লিপও৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর নানা ঘটনার ভিডিও-চিত্র দেখানো হচ্ছে প্রজেক্টরে৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
নৃশংসতার প্রতীক
নিহত এই সাংবাদিক দম্পতির প্রতি সম্মান জানাতে এবং একই সাথে পুরো রহস্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন৷ ২০১২ সালের ১১ই ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারে নিজেদের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, অজ্ঞাত আততায়ীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন তাঁরা৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
নীরবে-নিভৃতে কাঁদে...
মেহেরুন রুনির পুরনো ছবির সামনে অশ্রুসজল মা নুরন নাহার মির্জা৷ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের জল ফেলে চলছেন এই মা৷
-
‘আসুন আমরা সাগর-রুনিকে ভুলে যাই’
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই
প্রদর্শনীতে সাগর-রুনি ও মেঘের ছবির সঙ্গে ‘সেলফি’ তুলছেন এক দর্শনার্থী৷ সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান পাওয়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের দাবি৷
লেখক: মুস্তাফিজ মামুন/ডিজি
পাঠক কাজি মানিক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এভাবে, ‘‘আসল সত্যটা খুব সহজে বোঝা যায়, যারা এই খুনের সাথে জড়িত, তারা কি করে এই খুনের বিচার করবে? এতদিন পরও এই সত্যটা বুঝলেন না?'' হাসান আল আরিফ লিখেছেন, ‘‘যারা খুন করেছে আবার তারাই করবে বিচার! সত্যি হাস্যকর!''
আরিফের সাথে একমত ডয়চে ভেলের পাঠক আশরাফুল ইসলাম ও দিদার আলম৷
অন্যদিকে ‘‘ বিচার হবে ভাই'' বলে আশা প্রকাশ করেছেন জাকির হাসান জীবন৷
‘‘আর কত ঘটনা মনের মধ্যে চেপে রেখে নিজের মনকে ঐ ঘটনাগুলোকে ভুলে যেতে বলবো''– ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় নিজেকেই এই প্রশ্ন করেছেন সোহাগ মাহমুদ৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী