ডয়চে ভেলের পাঠক শামীম রানা চান যে, সমাজের মূল ধারার সাথে যুক্ত করা হোক যৌনকর্মীদের৷ আর সেকথাই তিনি ফেসবুকে লিখেছেন এভাবে: ‘‘দিন শেষে আমাদের তথাকথিত ভদ্র সমাজের মানুষই এঁদের কাছে হাত পাতে৷ আর দিনে বেলায় এঁরাই হয়ে যান তাদের কাছে বেশ্যা৷ ভেবে দেখুন এঁরা কাদের টাকায় গহনা পরে ঘুরে বেড়ান? কারা এঁদের যোগানদাতা? আমার মতে, এঁদের এখান থেকে তুলে সমাজের মূল ধারার সাথে যুক্ত করা হোক৷''
আলমগীর হোসেনের মতে, ‘‘যৌনতাই যদি তাঁদের পেশা হয়, তাহলে অবশ্যই তাদের যৌনকর্মী বলতে হবে৷''
তবে পাঠক অতন্দ্রের পরামর্শ, যৌনকর্মীদের সঠিক মূল্যায়ন করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে৷ অতন্দ্রের কথায়, ‘‘সরকারের উচিত ‘ওনাদের' সম্মানের সাথে বাঁচার ব্যবস্থা করে দেওয়া...৷''
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
যেভাবে যৌনপল্লীতে আগমন
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে যৌনপল্লীতে হাজির হন মেয়েরা৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা৷ এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে আনা হয়৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
যৌনকর্মীদের জন্য ‘গরুর ট্যাবলেট’
ফরিদপুরের সরকার অনুমোদিত যৌনপল্লীর ছবি এটি৷ অভিযোগ রয়েছে, পল্লীর মালিক নতুন আসা যৌনকর্মীদের স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনে বাধ্য করেন, যা সাধারণত গরুকে খাওয়ানো হয়৷ গরুর স্বাস্থ্য বাড়াতে ব্যবহার করা এই ট্যাবলেট মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘ইনজেকশন’
বাংলাদেশের এক যৌনপল্লীর মালিক রোকেয়া জানান, স্টেরয়েড ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়৷ কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়৷ অপ্রাপ্তবয়সিদের স্বাস্থ্য ভালো করতে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় বলে জানান ৫০ বছর বয়সি রোকেয়া৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
অধিকাংশ যৌনকর্মী ‘স্টেরয়েড আসক্ত’
আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থা একশনএইড ইউকে এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১০ সালে জানায় যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ যৌনকর্মী ওরাডেক্সন বা অন্যান্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট নিয়মিত গ্রহণ করে৷ তাঁদের গড় বয়স ১৫-৩৫ বছর৷ বাংলাদেশে দু’লাখের মতো যৌনকর্মী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালাচ্ছে একশনএইড৷ সংস্থাটির বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানিয়েছেন, ‘‘ওরাডেক্সন গ্রহণ করার পর শুরুতে মেয়েদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ কিন্তু এটি নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ায় ক্ষতসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়৷’’
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
এইচআইভি সংক্রমণ
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বা এইডস রোগ হওয়ার খবর মাঝে মাঝে পত্রিকায় প্রকাশ হয়৷ তবে ঠিক কতজন যৌনকর্মী এইচআইভি আক্রান্ত তার হালনাগাদ কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি৷ অনেকক্ষেত্রে কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের অনীহা যৌনকর্মীদের মাঝে যৌনরোগ ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ যৌনকর্মী
বাংলাদেশের যৌনপল্লীগুলোতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ আর এই পেশায় যাঁরা একবার প্রবেশ করছেন, তাঁদের জীবনেও নানা ঝুঁকি থাকে৷ পতিতাপল্লীতে হামলার খবর কিন্তু মাঝেমাঝেই শোনা যায়৷ (ফাইল ফটো)
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
শত বছরের পুরনো পল্লী উচ্ছেদ
মাদারিপুরের পতিতাপল্লীটি ছিল শত বছরের পুরনো৷ গত বছর এই পল্লী উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয়রা৷ এমনকি পল্লীটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার হাইকোর্টের আদেশও এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ সেখানে পাঁচশ’র মতো যৌনকর্মী বাস করতেন৷ কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের একটি পতিতাপল্লীও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এ রকম উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছেন আরো অনেক যৌনকর্মী৷
-
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
মধ্যপ্রাচ্যে ‘যৌনদাসী’ বাংলাদেশের মেয়েরা!
বাংলাদেশের বেশ কয়েক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ তাঁদের পাচার করে সিরিয়ায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক বার্তাসংস্থা৷ এ সব নারীকে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷ তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়েও বাংলাদেশি নারীদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের একদিকে যেমন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতন সহ্য করতে হয়, অন্যদিকে তারা তাঁদের সাথে সেক্সও করে৷ সাবেক যৌনকর্মী শাহনাজ মনে করেন, ‘‘এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত৷'' এ সম্পর্কে পাঠক মুহিব বিন হাবিব লিখেছেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে আগে পুলিশের মুখোশ উদঘটন করা উচিত৷''
পাঠক ফরহাদ আহমেদ অবশ্য এ পেশার বিপক্ষে৷ ‘‘যৌনকর্মীরা যদি পেশা হিসেবে তাঁদের পরিচয়টা যৌনকর্মী হিসেবে উপস্থাপন করতে আগ্রহী হন, তাহলে পাঠক শামীম ওমরের কোনো সমস্যা নেই৷ তাঁর মতে, ‘‘যৌনকর্মীরাও সবার মতোই মানুষ৷''
‘‘নারী মায়ের জাত৷ কারো বোন, স্ত্রী, কন্যা৷ সকলেই স্ব স্ব স্থানে সম্মানীয়৷ তাই তাঁদের যৌনকর্মী বলে উল্লেখ করা ঠিক নয়৷'' – এই মন্তব্য এমদাদুল ইসলামের৷
সালেক মোহাম্মদ মনে করেন, ‘‘আল্লাহ স্বর্গীয় সুখের সামান্য নমুনা দিয়েছেন এই যৌনতার মধ্যে৷''
‘‘নারীদের অধিকার নিয়ে যাঁরা বড় বড় কথা বলেন, বাস্তবে তাঁরাই নারীদের পণ্য ভাবেন৷'' – এ মন্তব্য ডয়চে ভেলের পাঠক রাসেল ইমরানের৷
‘‘ভণ্ডামি করার চেয়ে যাঁর যা পরিচয়, তা প্রকাশিত হওয়াই ভালো৷'' – মনে করেন ফেসবুক-বন্ধু টিটু খান৷
পাঠক তাসফিনের কথায়, ‘‘বাংলাদেশের মতো দেশে তাঁদের ‘ওয়ার্কার' বলাটাই নিরাপদ৷''
ওদিকে পুরোপুরি ভিন্ন কথা বলছেন বন্ধু রানা৷ তাঁর ধারণা, ‘‘এ ধরনের উদ্যোগে যৌনকর্মীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ কারণ এতে সমাজে তাঁরা চিহ্নিত হয়ে হেয় প্রতিপন্ন হবেন৷ আর এতে তাঁদের প্রতি নিপীড়ন আরো বাড়বে৷''
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
বারো ঘর, এক উঠোন
পুরনো কলকাতার বাড়ি যেমন হয়, একটি উঠোনকে ঘিরে অনেক ঘর, সোনাগাছির অধিকাংশ পুরনো বাড়িই ঠিক সেই নকশার৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
ঘরকন্যার ছবি
দিনেরবেলা যৌনপল্লির কোনো ঘরে গেলে বোঝার উপায় নেই, যে এটা কোনো সাধারণ গৃহস্থ বাড়ি নয়৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
কিন্তু অন্যরকম
খোলা উঠোনে দাঁড়িয়ে স্নান করেন মেয়েরা, যা কোনো গৃহস্থ বাড়িতে দেখা যায় না৷ কিন্তু উপায় নেই৷ সব ঘরের জন্য আলাদা স্নানের জায়গা এখানে বিলাসিতা৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
পেটের দায়
কিন্তু রোজ সকালে আর পাঁচটা বাড়ির মতো এখানেও রান্না চাপে৷ সব কিছু তো আসলে পেট ভরাবার দায়েই৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
ডাক্তার ভরসা
আগের থেকে অনেক সাবধান হয়েছেন যৌনকর্মীরা, তবু কখনও অসাবধানে যৌনরোগের সংক্রমণ ঘটে৷ তবে তার চিকিৎসার জন্য এখন ডাক্তার পাওয়া যায় হাতের কাছে৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
ভবিষ্যতের ভার
যৌনকর্মীর সন্তান কেন যৌনকর্মীই হবে? অনেক মা তাঁর সন্তানদের পাঠিয়ে দেন পড়াশোনা শিখতে৷ এভাবে অনেকেই নতুন জীবনের খোঁজ পান৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
নিজেদের হাতে
বাচ্চাদের প্রাথমিক পড়াশোনার ভার যৌনকর্মীরা নিজেরাই নেন৷ তারপর উৎসাহীদের পাঠানো হয় প্রথাগত স্কুলে৷
-
সোনাগাছির যৌনপল্লি
শিশুরাই ভবিষ্যৎ
সোনাগাছির ভবিষ্যৎও এই শিশুরাই৷ যারা স্বপ্ন দেখে বেশ্যাপল্লির বাইরে গিয়ে এক নতুন জীবন খুঁজে নেওয়ার৷ অন্যদেরও দিশা দেখানোর৷