তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান না নিতে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই চলছে ভ্রূণ হত্যা৷ আর আর্জেন্টিনার মতো দেশে গর্ভপাত নিষিদ্ধ৷ জেনে খুশি হলাম৷ আমাদের দেশেও গর্ভপাত নিষিদ্ধ করা হলে খুব ভালো হতো৷ বিশেষ করে এ দেশের মুসলমানরা বড় ধরনের পাপ থেকে বেঁচে যেত৷ কারণ জোর করে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে অনেকে প্রাণ হারাচ্ছেন, অনেকে আবার আর কোনোদিন মা হতেও পারছেন না৷ এ সব তথ্য আপনাদের পাঠকদের জানানোর জন্য সবার পক্ষ থেকে আমি আপনাদের অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি৷''
অন্য একটি ই-মেলে পুরনো এই বন্ধু লিখেছেন, ‘‘যক্ষ্মার সঙ্গে লড়তে ‘নায়ক ইঁদুর', ইউরোপের শ্রম বাজার অ্যামেরিকার চেয়ে বেশি পোক্ত, দীর্ঘজীবী হওয়ার কয়েকটি উপায়, জার্মানির ফ্রান্স ও স্পেনকে ছোঁয়ার মিশন শুরু, .....কর্মক্ষেত্রের মানসিক চাপ থেকে যা হতে পারে, অবশেষে শান্তিপূর্ণ পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে ভারতকে স্বীকৃতি দিল অস্ট্রেলিয়া, বসফরাসের সুন্দর স্থাপত্য হাজিয়া সোফিয়া, শরীরী ভালোবাসা জাগাতে যৌনশিক্ষার উদ্যোগ – এ সব প্রতিবেদন থেকে অনেক তথ্য এবং তার সঙ্গে সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা আমার দারুণ লেগেছে৷ এম এ বারিক, ভাটরা, সিহালী, শিবগঞ্জ, বগুড়া, বাংলাদেশ৷''
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
স্বাধীনতা...
‘শরীরটা আমার নিজের’ – আর্জেন্টিনার মেয়েরা এখনো স্বাধীনভাবে এ কথা ভাবতে পারেন না৷ গর্ভপাত সেখানে নিষিদ্ধ৷ তা সত্ত্বেও গর্ভপাত চলছে৷ ২৭ বছর বয়সি ক্যামিলাও গর্ভপাত ঘটিয়েছেন, তারপর নিজের ঘাড়ে এঁকেছেন উল্কি, সেখানে লেখা, ‘স্বাধীনতা’৷ তাঁর এ ছবি ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
নববর্ষের প্রাক্কালে...
এ ছবিতে মারা নামের একটি মেয়ের জীবনের গল্প বলার চেষ্টা করা হয়েছে৷ ২১ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে মারাকে তাঁর বয়ফ্রেন্ডের পরিবার, ‘গর্ভপাত ঘটালে আমরা অভিযোগ দায়ের করবো’ – বলে শাসিয়েছিল৷ হুমকি দিলেও ছেলেবন্ধুর সটকে পড়া কিন্তু তাঁরা ঠেকাননি৷ সঙ্গী চলে যাওয়ার ১২ সপ্তাহ পর বাধ্য হয়ে মারা ব্যাপারটি খুলে বলেন মাকে৷ তারপর ২০০২ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবৈধভাবে গর্ভপাত ঘটিয়ে আবার নতুন জীবন শুরু করেন মারা৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
পুরুষেরও ভোগান্তি
গর্ভপাত অনেক সময় পুরুষদেরও বিপদে ফেলে৷ ফোটোগ্রাফার লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের কাজগুলো তেমন গল্পগুলোই তুলে ধরছে৷ পেদ্রো নামের এই তরুণ গর্ভপাতের ব্যাপারে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে শুধু সমর্থনই করেননি, তাঁকে ক্লিনিকেও নিয়ে গিয়েছিলেন৷ কিন্তু গর্ভপাত ঘটানোর পর বিষয়টি নিয়ে তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কথাও বলতে পারেননি৷ সবার আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল, পেদ্রো যেন খুব বড় কোনো অপরাধ করে ফেলেছেন!
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
বাড়িতেই গর্ভপাত
অন্তঃসত্ত্বার পেটে ঘুষি মেরে ভ্রুণ হত্যা, তারপর কাপড়ের হ্যাঙার আর কাপড় সেলাই করার সুঁচ ব্যবহার করে ‘জঞ্জাল’ সাফ করে দেওায়া – আর্জেন্টিনার অনেক অঞ্চলে এভাবেই ঘরে ঘরে হয় গর্ভপাত৷ কোনো ডাক্তার বা নার্স নয়, ঘরের মেয়েরাই এভাবে কাজ সারেন৷ ফলে অকালে ঝরে যায় অনেক নারীর প্রাণ৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
বছরে অন্তত একশ জন...
গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে আর্জেন্টিনায় প্রতিবছর ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজারের মতো নারী জটিল সমস্যায় পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ তাঁদের মধ্যে কমপক্ষে একশ জন সন্তানের আগমন রুখতে গিয়ে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনেন৷ আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মনে করে, বিশেষত দরিদ্র অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে অবৈজ্ঞানিক উপায়ে গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে নিজেদের জীবনও বিপন্ন করছেন মেয়েরা৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
১৫০০ ইউরোয় মুশকিল আসান
গর্ভপাত আইনত দণ্ডনীয় হলেও আর্জেন্টিনায় টাকা দিলে এ কাজ সহজেই হয়৷ টাকাটা অবশ্য বেশিই লাগে, কোনো কোনো ডাক্তার এ জন্য ১০ হাজার পেসো বা ১৫০০ ইউরোও নিয়ে থাকেন গর্ভপাত ঘটাতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে৷ জার্মান কারদোসো একজন সার্জন৷ তবে আর্জেন্টাইন ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়েও তিনি লড়ছেন গর্ভপাতের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবির পক্ষে৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
নারীর পাশে নারী
‘ডিম্বাশয় থেকে তোমার গোলাপরেণু সরিয়ে নাও’ – এভাবেই গর্ভপাতকে আইনসিদ্ধ করানোর আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার আর্জেন্টিনার নারী অধিকার সংগঠন ‘লা রেভুয়েলতা’৷ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান প্রধান দেশ আর্জেন্টিনায় বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠন এ দাবির পক্ষে৷ ‘লা রেভুয়েলতা’ শুধু দাবি আদায়ে সোচ্চার নয়, গর্ভপাতে ইচ্ছুক নারীদের উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে গর্ভপাতে সহায়তাও করে তারা৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
দিকনির্দেশনার অভাব
এলুনের বয়স এখন ২১৷ ‘লা রেভুয়েলতা’-র সহায়তায় তিনি গর্ভপাত ঘটিয়েছেন৷ ‘কখন মা হবো, এ সিদ্ধান্ত আমিই নেবো’ – এলুনে এমন কথা বলেছেন ঠিকই, তবে এতদিনে তিনি জেনে গেছেন যে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোও তাঁর দেশে খুব একটা নিরাপদ নয়৷ ডাক্তাররা ওষুধ কখন, কিভাবে খেতে হবে তা না বলেই বিক্রি করে দেন৷ ফলে অজ্ঞতার ঝুঁকি থেকেই যায়, আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার সহায়তা নিতে চেয়েও মৃত্যু এড়াতে পারেন না অনেক নারী৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
জেলখানায় গর্ভপাত
সোনিয়া সানচেজ ছিলেন পতিতা৷ অবৈধভাবে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে জেল খেটেছেন অনেকবার৷ কারাবন্দি অবস্থায় গর্ভপাতও ঘটিয়েছেন৷ এক খদ্দের তাঁর মা হতে চাওয়া, না চাওয়ার স্বাধীনতাকেও কিনে নিয়েছিলেন৷ পতিতালয়ের মালিককে বাড়তি টাকা দেয়ায় কনডম ছাড়াই তিনি মিলিত হতেন৷ ফলশ্রুতিতে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সোনিয়া৷ এই তরুণী এখন নেমেছেন গর্ভপাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে৷ ইতিমধ্যে সাফল্যের দেখাও পেয়েছেন৷
-
আর্জেন্টিনায় গর্ভপাত – ট্যাবু ভাঙার নিরন্তর প্রয়াস
আর নীরবতা নয়...
ছবিতে দেখা যাচ্ছে মনিকা নামের এক নারীর শরীরের অনাবৃত একটি অংশ৷ লিসা ফ্রানৎস, গুয়াদালুপে গোমেজ এবং লেয়া মরিসের তোলা ছবি নিয়ে ‘১১ সপ্তাহ, ২৩ ঘণ্টা, ৫৯ মিনিট – আর্জেন্টিনায় অবৈধ গর্ভপাত’ শীর্ষক যে প্রদর্শনী চলছে, সেখানে এ ছবিটিও দেখানো হচ্ছে৷ নিজের এমন একটা ছবি দেখানোর অনুমতি দেয়া মনিকা গর্ভপাতের পক্ষে নিজ বক্তব্য তুলতে গিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এটা আমার দেহ’৷
লেখক: আনা হ্যারব্যার্গ/এসিবি
চুয়াডাঙা, বাংলাদেশ থেকে প্রফেসর আশরাফুল ইসলাম লিখেছেন, ‘‘রুটিন চেকআপ করুন, দীর্ঘজীবী হোন – পাঠকদের জন্য এই ছবিঘরটি খুব উপকারি বলে আমি মনে করি৷ আমাদের দেশে অনেকেই জার্মানদের মতো অতটা স্বাস্থ্য সচেতন নন৷ তাছাড়া অনেকে আর্থিক খরচের ভয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা বা রুটিন চেকআপ করার বিষয়টি আদৌ গুরুত্ব দেন না৷ এর ফলে এক সময় নানা জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হয় আমাদের৷ একটু সচেতনতা বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে৷ ডয়চে ভেলের এ স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিবেদনটি অবশ্যই আমাদেরকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে উদ্বুদ্ধ করবে৷ এটিই আমার বিশ্বাস৷''
নতুন দিল্লি, ভারত থেকে পুরনো বন্ধু সুভাষ চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘‘অলিম্পিক আয়োজনের প্রশ্নে জার্মানিতে গণভোট – প্রতিবেদনটি পড়লাম৷ বিশ্বের যে কোনো উন্নত দেশই অলিম্পিকের মতো একটি বর্ণময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে সাধারণত আগ্রহ প্রকাশ করে থাকে৷ সেই দিক দিয়ে দেখলে জার্মানির মতো শিল্পোন্নত একটি দেশ, যারা এর আগে দু'বার অলিম্পিকের আয়োজন সফলভাবেই করেছে, সেই দেশ এত সুদীর্ঘ সময় পর ২০২৪ অথবা ২০২৮ সালে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আয়োজন নিয়ে গণভোট করতে যাচ্ছে কেন? অলিম্পিকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতার ব্যয়ভার নিয়ে জার্মানির তো কোনো সংশয় থাকা উচিত নয়৷ তাছাড়া ইউরোপের সেরা স্টেডিয়ামগুলো তো জার্মানিতেই আছে৷ তাই আমরা জার্মান অলিম্পিক কমিটির সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷''
সংকলন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন