1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিজ্ঞানজাপান

কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের বানর গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকাণ্ড

১২ এপ্রিল ২০২২

অন্য প্রাণীও কি মানুষের মতো অঙ্ক করতে পারে?

https://p.dw.com/p/49oLB
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তোলা ভিডিওতে অবশ্য দেখা গেছে যে,  শিম্পান্জি নির্ভরযোগ্যভাবে সংখ্যার সঠিক বিন্যাস চিনতে পারছে৷
জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তোলা ভিডিওতে অবশ্য দেখা গেছে যে,  শিম্পান্জি নির্ভরযোগ্যভাবে সংখ্যার সঠিক বিন্যাস চিনতে পারছে৷ছবি: Tobias Deschne/Ozouga

দৈনন্দিন জীবনে অনেক প্রাণীর ‘বুদ্ধি' আমাদের অবাক করে৷ বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে গবেষণা চালিয়ে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন৷ তবেপ্রাণীদের অঙ্ক শেখারক্ষমতা নিয়ে সংশয় এখনো কাটেনি৷

নিউরো বায়োলজিস্ট হিসেবে ইলকা ডিস্টার প্রাণীর কগনিটিভ বা জ্ঞানগত দক্ষতা নিয়ে গবেষণা করেছেন৷ এ ক্ষেত্রে প্রাণীর ক্ষমতা যে প্রচলিত ধারণার তুলনায় অনেক বেশি, তিনি তা দেখাতে পেরেছেন৷ ইলকা বলেন, ‘‘বহুকাল ধরে আমরা প্রাণীর ক্ষমতার মর্যাদাই দেইনি৷ ইতোমধ্যে প্রাণীর এমন অনেক ক্ষমতার কথা আমরা জানতে পেরেছি, যেগুলি শুধু মানুষের রয়েছে বলে আমরা ভাবতাম৷ খুব ভালো ‘শর্ট টার্ম মেমরি' থেকে শুরু করে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ অঙ্কের আগের পর্যায়ের দক্ষতাও চিহ্নিত হয়েছে৷''

মুরগির ছানাদের গোনার ক্ষমতা আছে কিনা, ইটালির গবেষকরা তা-ও পরীক্ষা করেছেন৷ তারা ছানাদের কিছু রঙিন বলকেও স্বজাতি হিসেবে চিনতে শিখিয়েছিলেন৷ তারপর সেই বলগুলিকে অসমভাবে ভাগ করে দুটি জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন৷

মুরগিছানারা সব সময়ে স্বজাতির বড় দলের দিকে যেতে চায়, কারণ, সেখানে সেগুলি শিকারিদের হাত থেকে নিরাপদ বোধ করে
মুরগিছানারা সব সময়ে স্বজাতির বড় দলের দিকে যেতে চায়, কারণ, সেখানে সেগুলি শিকারিদের হাত থেকে নিরাপদ বোধ করেছবি: Zoonar/picture alliance

বলগুলি কীভাবে দুটি জায়গার মধ্যে রদবদল করা হচ্ছিল, ছানারা সেটা দেখতে পেয়েছিল৷ শেষে ছানাগুলি বেশি পরিমাণ বলের সমষ্টির দিকে এগিয়ে গেল৷ সেটা কি ছানাদের গোনার ক্ষমতার প্রমাণ? ইলকা ডিস্টার বলেন, ‘‘মুরগিছানারা সব সময়ে স্বজাতির বড় দলের দিকে যেতে চায়, কারণ, সেখানে সেগুলি শিকারিদের হাত থেকে নিরাপদ বোধ করে৷ বিশেষ করে মাঝখান সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা৷ পরীক্ষাগুলিতে সে ক্ষেত্রে ভালো সাফল্য পাওয়া গেছে৷ প্রতিবার ছানাগুলি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে অপেক্ষাকৃত বড় দল চিহ্নিত করেছে৷ অর্থাৎ, মুরগির ছানা ‘কম' ও ‘বেশি' পরিমাণের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে৷ সেটাই গণিতের ভিত্তি৷ তবে সেই ক্ষমতা গোনার সমান নয়৷''

তিন সপ্তাহে ৬,০০০ গুণ বেশি ওজন হয় যে প্রাণীর

জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তোলা ভিডিওতে অবশ্য দেখা গেছে যে,  শিম্পান্জি নির্ভরযোগ্যভাবে সংখ্যার সঠিক বিন্যাস চিনতে পারছে৷

সেই পরীক্ষার আরো কঠিন এক সংস্করণে কিছুক্ষণ পর সংখ্যাগুলি মুছে দিয়ে সেই জায়গায় বর্গক্ষেত্র রাখা হয়েছে৷ তা সত্ত্বেও শিম্পাঞ্জি সফলভাবে সংখ্যার সঠিক বিন্যাস চিহ্নিত করতে পেরেছে৷ নিউরো বায়োলজিস্ট ইলকা ডিস্টার বলেন, ‘‘সেটা দেখে মনে হতে পারে, বানর সত্যি গুনতে পারে৷ কিন্তু সেগুলিকে আসলে সংখ্যার ‘সিকুয়েন্সিয়াল ট্যাপিং' পদ্ধতি শেখানো হয়েছিল৷ বহু বছরের প্রশিক্ষণের দৌলতেবানর সেটা শিখেছে বলে বিস্ময়কর গতিতে ও অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সেই কাজ করতে পারে৷ সেটা এই প্রাণীর অসাধারণ ‘শর্ট টার্ম মেমরি'-র পরিচয়৷ তবে অন্য কিছু পরীক্ষায় বানরের গোনার ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হয়৷''

কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়েই একটি শিম্পাঞ্জির ক্ষমতা সত্যি বিস্ময়কর৷ অত্যন্ত কম সময়ে প্রাণীটি পর্দায় ফুটে ওঠা বিন্দু গুনে সঠিক সংখ্যা দেখাতে পারে৷

১৯৯৮ সালে ‘রিসাস মাংকি' প্রজাতির বানর নিয়ে এক পরীক্ষার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ সেই বানরগুলি পরপর বিন্দুসহ দুটি কার্ড দেখেছিল৷ তারপর ভিন্ন সংখ্যার বিন্দুসহ আরো দুটি কার্ড দেখেছিল৷

একটি কার্ডে প্রথম দুটি কার্ডের বিন্দুর যোগফল দেখানো হয়েছিল৷ এক ট্রেনিংয়ের পর প্রাণীগুলি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্যভাবে যোগফলের কার্ডটি চিনতে পেরেছিল৷ ইলকা ডিস্টার বলেন, ‘‘কিছু বিজ্ঞানীর মতে, এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সংখ্যাগুলি যোগ করা হয়েছিল৷ কিন্তু যোগফলের কার্ডগুলিতে বিন্দুর সংখ্যা খুব কাছাকাছি হলেই বানরগুলি ব্যর্থ হচ্ছিল, যা ছিল চোখে পড়ার মতো৷ প্রাণীগুলি সত্যি তিন আর পাঁচ যোগ করতে পারলে এবং তারপর যোগফল হিসেবে আট বেছে নিতে পারলে প্রায় সমান বিন্দুর সংখ্যার মধ্যে নিশ্চয় পার্থক্য করতে পারতো৷ কিন্তু বানরগুলি সেটা পারেনি৷ ফলে এ ক্ষেত্রেও গোনার আসল ক্ষমতা নয়, বরং পরিমাণ বোঝার ক্ষমতার কথা উঠে আসতে পারে৷ তবে একবার এক মাদী শিম্পাঞ্জি সত্যি গুনতে পেরেছিল বলে দাবি করা হয়৷''

১৯৮৮ সালে সেই পরীক্ষা চালানো হয়েছিল৷ ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বার কোনো প্রাণীকে গুনতে শেখানো সম্ভব হয়েছিল৷ শেবা নামের মাদী শিম্পাঞ্জি ফলের সাহায্যে সংখ্যার গুরুত্ব শিখে আট পর্যন্ত সংখ্যা যোগ করতে পেরেছিল৷

ফ্রাংক ভিটিশ/এসবি