মানুষের কল্যাণে বাদুড় নিয়ে গবেষণা অত্যন্ত জরুরি
২৪ আগস্ট ২০২১বাদুড়ের আয়ু সত্যি বিস্ময়কর৷ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করলেই সেটা টের পাওয়া যায়৷ সাধারণত কোনো প্রজাতির শরীরের ওজনের সঙ্গে সঙ্গে আয়ুও বাড়ে৷
যেমন ডোরমাউস জাতের ইঁদুরের ওজন ৩৫ গ্রাম৷ এই প্রাণীর আয়ু বড়জোর ছয় বছর৷ অন্যদিকে আফ্রিকার হাতির ওজন ছয় টন পর্যন্ত হতে পারে৷ এই প্রাণী ৭০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে৷ উইসকার্ড ব্যাট প্রজাতির বাদুড়ের ওজন মাত্র দশ গ্রাম হওয়া সত্ত্বেও এই প্রাণী ৪১ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে৷
ওজনের তুলনায় এমন দীর্ঘ আয়ু সত্যি বিস্ময়কর৷ একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে বাদুড়ের ওড়ার ক্ষমতার সঙ্গে দীর্ঘ আয়ুর সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷ মাক্স-প্লাংক ইনস্টিটিউটের গবেষক মিশায়েল হিলার বলেন, ‘‘ওড়ার ক্ষমতার কারণে বাদুড় অনেক শত্রুর খোরাক হওয়া থেকে বেঁচে যায়৷ ফলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে যায়৷ অন্যদিকে ওড়ার কারণে বাদুড়ের শরীরের ওজন সীমিত থাকে৷ বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে এই দুটি বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে দীর্ঘ আয়ু ও বংশবৃদ্ধির সুযোগ অনেক বেড়ে যায়৷ অবশ্য সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে অনেক বয়স পর্যন্ত বাদুড়ের শক্তি ও স্বাস্থ্য ভালো থাকতে হবে৷''
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাদুড় বছরে একটি শাবকের জন্ম দেয়৷ কিন্তু দীর্ঘ আয়ুর কারণে সন্তানের সংখ্যা কম হয় না৷ এটি বাদুড়ের নিজস্ব ‘মেথুসেলা স্ট্র্যাটিজি'৷
জার্মানির ক্লেবাখ শহরে প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এক অভিযানের অংশগ্রহণকারীরা অবশেষে বাদুড়ের দেখা পেলেন৷ ট্র্যাকিং ডিভাইস থেকে সেই সংকেত পাওয়া গেল৷ বিস্ময়ের সঙ্গে ভয়ের মিশ্রণের অদ্ভুত অনুভূতি৷ জার্মানিতে একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে বাদুড়ই জলাতঙ্কের সংক্রমণ ঘটাতে পারে৷ কিন্তু সেই ঝুঁকি আসলে কতটা? বাদুড় বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেট্রা গাৎস বলেন, ‘‘কোনো বাদুড় কখনো নিজে থেকে শুধু খামখেয়ালিপনার বশে মানুষকে আক্রমণ করে না৷ সেটিকে স্পর্শ করলে কামড়ে দিতে পারে৷ এমন অচেনা অভিজ্ঞতা হলে তবেই বাদুড় কামড়াতে যায়৷ মোটা কাপড় হাতে নিয়ে অথবা গ্লাভস পরে ধরলে কোনো সমস্যা হয় না৷''
সে কারণে জার্মানিতে সংক্রমণের আশঙ্কা অত্যন্ত কম৷ বাদুড় মোটেই ভাইরাস ছড়ানো কোনো দানব নয়, বরং এই প্রাণীর কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি৷ মিশায়েল হিলার ও তাঁর সহকর্মীরা এবার বাদুড়ের আরও জিনোম বিশ্লেষণ করতে চান৷ মিশায়েল হিলে বলেন, ‘‘মানুষের নাগালে সেই জ্ঞান এলে ক্যানসারের মতো রোগের উপশম এবং বার্ধ্যক্যের প্রক্রিয়ার গতি কমানো সহজ হবে বলে আমরা আশা করছি৷''
তবে সেই জ্ঞান অর্জনের পথ অত্যন্ত দীর্ঘ৷ বাদুড় তার ‘সুপার পাওয়ার'-এর রহস্য বোধহয় অত সহজে উন্মোচন করতে দেবে না৷
আনা বারকভস্কি/এসবি