ভয় না পেয়ে বাদুড়ের গুণাগুণ রপ্ত করা
২৩ আগস্ট ২০২১রাতের অন্ধকারেও তারা অনায়াসে উড়ে বেড়ায়৷ মারণাত্মক ভাইরাসও সহজে বিস্ময়কর আয়ুর অধিকারী এই প্রাণীর অনিষ্ট করতে পারে না৷ মানুষ শুধু বাদুড়ের এমন ‘সুপার পাওয়ার'-এর স্বপ্ন দেখতে পারে৷ সত্যি, বাদুড়ের মতো অন্য কোনো প্রাণীর এমন বেঁচে থাকার ক্ষমতা নেই৷
গবেষকরা বহুকাল ধরে সেই কনসেপ্ট সম্পর্কে ধারণা পাবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ অবশেষে তাঁরা সেই রহস্য উন্মোচনের পথে অনেকটা এগোতে পেরেছেন৷ সুপার পাওয়ারের উৎস আসলে জিনের মধ্যে রয়েছে৷ মাক্স-প্লাংক ইনস্টিটিউটের গবেষক মিশায়েল হিলার বলেন, ‘‘আমরা বাদুড়ের জিনোমের মধ্যে তুলনা করে অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছি৷ এই প্রাণী কীভাবে অন্যান্য জীবের জন্য মারণাত্মক ভাইরাস সামলাতে পারে, সে বিষয়ে ধারণা পেয়েছি৷ ফলে বার্ধক্যের প্রক্রিয়া কমানো ও রোগব্যাধী উপশম করা সহজ হতে পারে৷''
বাদুড়ের ভাবমূর্তি কিন্তু মোটেই ইতিবাচক নয়৷ করোনা সংকট শুরু হবার আগেও এই প্রাণী বিপজ্জনক ভাইরাস বহনকারী হিসেবে পরিচিত ছিল৷ কিন্তু সেই আতঙ্ক আসলে কতটা ন্যায্য?
জার্মানির ক্লেবাখ শহরে প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠনের উদ্যোগে খুব কাছ থেকে বাদুড়ের কার্যকলাপ দেখতে এক অভিযানের আয়োজন করা হয়েছিল৷ শহরের কাছেই নাকি অনেক বাদুড়ের বাসা৷ অভিযানের অংশগ্রহণকারীদের মনে উত্তেজনার অভাব নেই৷ কারণ সহজে এই রহস্যজনক নিশাচর প্রাণীর দেখা মেলে না৷ পৌরাণিক কাহিনিতেও বাদুড়ের উল্লেখ পাওয়া যায়৷ অন্ধকারের এই প্রাণীকে ঘিরে রহস্যের অভাব নেই৷
দিনের আলোয় বাদুড়ের দেখা পাওয়া কঠিন৷ অন্ধকারের অপেক্ষা করার সময়ে পরিবেশ সংগঠনের এক প্রতিনিধি রহস্যজনক এই প্রাণী সম্পর্কে অনেক ভুল ধারণা দূর করার সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন৷ বাদুড় সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞ হিসেবে পেট্রা গাৎস বার বার মানুষের ভয়ের কথা জানতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘‘অনেক মানুষ সত্যি বিশ্বাস করেন, যে বাদুড় শুধু পাশ দিয়ে উড়ে গেলেই তাদের জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে৷ অবশ্যই সেটা কোনোমতে সম্ভব নয়৷ বাদুড়ের কামড় খেলে তবেই এমন সংক্রমণ ঘটতে পারে৷ অনেকে আবার মনে করেন, যে বাদুড় ওড়ার সময় মুখের লালা পড়ে৷ তাদের ধারণা, সন্ধ্যাবেলা বাগানে বসে কিছু পান করার সময় গ্লাসে সেই লালা পড়লেও জলাতঙ্ক হতে পারে৷ কিছু লোকের মনের গভীরে এমন আতঙ্ক দানা বেঁধে রয়েছে৷''
এমন ভয়ের সত্যি কোনো কারণ রয়েছে কি? বাদুড় কীভাবে মানুষের জন্য বিপজ্জনক অনেক ভাইরাস অনায়াসে বহন করতে পারে?
ড্রেসডেন শহরে মাক্স-প্লাংক ইনস্টিটিউটে মিশায়েল হিলার আন্তর্জাতিক গবেষকদলের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে ছয় ধরনের বাদুড় প্রজাতির জিনোটাইপের প্রায় সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ করতে পেরেছেন এবং জিনের মধ্যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত পেয়েছেন৷ হিলার বলেন, ‘‘আমরা জিনোমের মধ্যে এমন সব জিনের খোঁজ করেছি, যেগুলি বাদুড়ের বিবর্তনের সময় নতুন করে যুক্ত হয়েছে৷ আমরা অ্যান্টি-ভাইরাল ক্ষমতাসম্পন্ন জিন শনাক্ত করেছি৷ সেগুলি কোষের মধ্যে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির মোকাবিলা করে৷''
সেই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা আরো অনেক নতুন জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন৷ যেমন যে জিন শরীরে ইনফ্লেমেশন বা প্রদাহের প্রতিক্রিয়া ঘটায়, সেগুলি আচমকা উধাও হয়ে যায়৷
গবেষকদের ধারণা, এই দুটি ক্ষমতার কারণে বাদুড় আরো ভালোভাবে ইমিউন সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং রোগব্যাধীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ বাদুড়ের কিন্তু আরো ‘সুপার পাওয়ার' আছে৷
আনা বারকভস্কি/এসবি