অভিনব ডিজিটাল সমাজ তৈরি করছে এস্টোনিয়া
২৪ নভেম্বর ২০১৭ক্লাস থ্রি-তে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর ক্লাস চলছে৷ এস্টোনিয়ার স্কুলে এটি আবশ্যিক বিষয়৷ স্কুল পড়ুয়ারা নিজেদের মিউজিক বা ভিডিও গেম প্রোগ্রাম তৈরি করে৷ মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই মার্কোস প্রোগ্রামিং করে আসছে৷ কখনো সফটওয়্যার, কখনো বা মিনি রোবট নিয়ন্ত্রণের কমান্ড৷ সে বলে, ‘‘সফটওয়্যার তৈরি করার সময় সবকিছু নিখুঁত হতে হবে, যাতে তোমার ইচ্ছেমতো রোবট কাজ করে৷ আমি এস্টোনিয়ার সেরা প্রোগ্রামার হতে চাই, স্কাইপের থেকেও ভালো৷''
সবাই এখানে স্কাইপ চেনেন৷ গোটা বিশ্বে ব্যবহার করা হলেও ছোট্ট দেশ এস্টোনিয়া থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছিল৷ দেশের প্রায় ১৩ লক্ষ মানুষ সব সময় যে কোনো জায়গায় ইন্টারনেটের নাগাল পেতে পারেন৷ তাও আবার বিনামূল্যে! সেই ২০০০ সালেই রাষ্ট্র একে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে৷
এস্টোনিয়ার এই ডিজিটাল স্ট্র্যাটেজি-র পেছনে রয়েছেন সিম সিকুট৷ তিনি সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা৷ নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়েই ডিজিটাল ফাইলের নাগাল পান তিনি৷ ব্যক্তিগত তথ্য, স্বাস্থ্য, গাড়ি চালানোর লাইসেন্স, আয়ের হিসেব – সব সেখানে জমা রয়েছে৷ এমনকি এর সাহায্যে ট্যাক্স রিটার্ন প্রস্তুত করতেও তাঁর মাত্র পাঁচ মিনিট লাগে৷
তবে অন্যরাও সেই তথ্যের নাগাল পেতে পারেন, যদি না তিনি শুরু থেকেই তার দ্বার বন্ধ না করে দেন৷ সিম সিকুট বলেন, ‘‘আমরা মানুষের তথ্য সংরক্ষণের সুযোগ দেই৷ কে আমাদের তথ্য বা ফাইল পড়ছে, লগবুকের মাধ্যমে আমরা তা দেখতে পারি৷ যেমন দাঁতের ডাক্তার ও হাউস ফিজিশিয়ান আমার ফাইল পড়েছেন৷ সেটা ঠিক আছে৷ কিন্তু অন্য কোনো অযাচিত মানুষ আমার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রেকর্ডে উঁকি মারলে আমি তথ্য সংরক্ষণের দাবি করতে পারি৷''
বিশেষজ্ঞদের মতে, জার্মানি প্রযুক্তির এমন প্রয়োগ থেকে এখনো বহু দূরে রয়েছে৷ কারণ জার্মানরা ইন্টারনেটের প্রশ্নে অনেক বেশি সতর্ক৷ তাছাড়া জার্মানি এস্টোনিয়ার তুলনায় অনেক বড় দেশ৷ জার্মান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংগঠন বিটকম-এর প্রতিনিধি ক্রিস্টিয়ান কুলিক বলেন, ‘‘জার্মানিতে এই অবস্থায় পৌঁছতে আরও কয়েক বছর সময় লাগবে৷ আমাদের এই ফেডারেল কাঠামোয় অন্যভাবে ভাবতে হবে বলে আমি মনে করি৷ আগামী বছরগুলিতে সারা দেশে নিশ্চয় কিছু পরিষেবা চালু করতে পারবো৷''
এস্টোনিয়ার ডিজিটাল ব্যবস্থার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি দুর্বলতা রয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী হ্যাকাররা প্রায় সাড়ে সাত লাখ নাগরিকের তথ্যের নাগাল পেয়েছে৷ অর্থাৎ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এমন ঝুঁকির মুখে পড়েছে৷
যারা ডিজিটাল প্রযুক্তির দ্রুত প্রয়োগের বিরুদ্ধে, বলাই বাহুল্য তারা এমন খবর লুফে নেবেন৷ অন্যদিকে সমর্থকদের মতে, সিস্টেমের ত্রুটি দূর করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব৷ জার্মানিতেও এমনটা মনে করা হয়৷ ক্রিস্টিয়ান কুলিক বলেন, ‘‘সবকিছু সত্ত্বেও সব সময়ে হামলার আশঙ্কা থেকে যায়৷ ফলে এমন ঘাত-প্রতিঘাত চলতেই থাকবে৷''
পেলগুলিনা হাই স্কুলের পড়ুয়ারা এই খেলায় সব সময়ে জয়ী হতে চায়৷ ২০২০ সাল থেকে গোটা দেশের সব স্কুলে শুধু ডিজিটাল পদ্ধতিতেই পড়ানো হবে৷ জার্মানি সহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশের জন্য এমন লক্ষ্য উৎসাহ-উদ্দীপনা আনতে পারে৷