২০১১ সালের ইউরোপীয় সাংস্কৃতিক রাজধানী টালিন
১৩ জানুয়ারি ২০১১বাল্টিক সাগরবর্তী ৪ লক্ষ অধিবাসীর শহর টালিন এখন ঝেড়েমুছে ঝকঝকে হয়ে উঠছে৷ এক বছরের জন্য প্রস্তুত হতে হবে তাকে৷ এ উপলক্ষে থিম মটো নেয়া হয়েছে ‘সাগরের ইতিহাস'৷ টালিন ২০১১'এর আয়োজক কমিটির মুখপাত্র মারিস হেলরান্ড এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘সাগরের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটা গত কয়েক বছরে অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছে৷ তার একটা পরিবর্তন প্রয়োজন৷ শুধু পার্থিব পরিবর্তন নয়, মানুষের মনোজগতেও পরিবর্তন আনতে হবে৷ নিজেদের অতীত ঐশ্বর্য আবিষ্কার করতে হবে৷''
মারিস হেলরান্ড'এর মনে শৈশবের স্মৃতি ভেসে ওঠে৷ সোভিয়েট ইউনিয়নের শাসনামলে টালিন শহর থেকে সাগরে যাওয়ার পথটি ছিল সামরিক বাহিনীর সংরক্ষিত এলাকা৷ সোভিয়েট সেনারা আজ সেখানে না থাকলেও সাগরতীরে এখনও যাওয়া যায়না৷ মারিস বলেন, ‘‘সেখানে এখন ঊনবিংশ শতাব্দীতে নির্মিত এক কারাভবন দাঁড়িয়ে আছে৷ পাঁচ বছরে আগেও ব্যবহৃত হত এই কারাগার৷ আমরা এখন সেখানে সাগর তীরবর্তী দীর্ঘ সড়ক গড়ে তুলতে চাই, যার নাম দেয়া হবে ‘কালচার কিলোমিটার'৷ যত বেশি সম্ভব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে সেখানে৷''
এস্টোনিয়া ২০১১ সালে আধুনিক ইউরোপীয় শহর হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে চায়৷ ১লা জানুয়ারি থেকে দেশটিতে ইউরোপীয় অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু হওয়ায় উচ্ছ্বাসটা আরো বেশি এস্টোনিয়ার বাসিন্দাদের৷ সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে অসাধারণ কিছু করার পরিকল্পনাও রয়েছে এস্টোনিয়ার৷ যেমন ‘একাকিত্বের ৬০ সেকেন্ড' নামে এক প্রকল্প৷ আগস্ট মাস পরিবেশিত হবে নতুন ধরনের এই আয়োজনটি৷ উদ্যোক্তাদের একজন ইন্ডড্রেক কাসেলা বলেন, ‘‘এটা হচ্ছে সিনেমার প্রতি ভালবাসা৷ আমরা বিভিন্ন দেশের পরিচালকদের অনুরোধ করেছি নিঃসঙ্গতা নিয়ে এক মিনিটের ছায়াছবি নির্মাণ করতে৷ তাঁদের সৃষ্ট ছায়াছবিগুলিকে জোড়া লাগিয়ে এক ঘন্টার একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে৷ সমুদ্রের বুকে বিশাল এক পর্দায় প্রদর্শিত হবে ছবিটি৷ পরে পর্দাসহ ছবির রোলটি পুড়িয়ে ফেলা হবে৷''
এই ছবিটির আর কোনো কপিও থাকবেনা৷ যা শুধু একবারই দেখতে পারবে মানুষ৷ টালিন ২০১১'এর আয়োজক কমিটির প্রধান লাউর কানিসারে বলেন, ‘‘আমি মনে করি মানুষের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতিটি রয়ে যায় পরিস্থিতির মাঝে, যা আর ফিরে আসেনা৷ যেমন ২ সেকেন্ডের জন্য রাস্তায় হয়তো কারো সঙ্গে দেখা হল, ৩০ বছর পরও স্মৃতিতে ভেসে উঠতে পারে তার কথা৷''
পরিবেশ সংরক্ষণের দিকটি মাথায় রেখে একটি থিয়েটার প্রকল্পও গড়ে তোলা হবে৷ পারফর্মেন্স ও থিয়েটারের এক মিশ্রণ৷ মে মাসে প্রদর্শিত হবে এটি৷ সাংস্কৃতিক বছর শেষ হলে ভেঙে ফেলা হবে এই প্রকল্প৷ এতে অংশ নেবেন দর্শকরাও৷ প্রদর্শনী চলাকালে দর্শকরা ফিটনেসের সাইকেলে বসে চাকা ঘোরাবেন, উৎপাদন করবেন বিদ্যুৎশক্তি৷ এতে জ্বেলে উঠবে মঞ্চের আলোকসজ্জা৷ অতিরিক্ত জ্বালানি শক্তির প্রয়োজন পড়বেনা আর৷ এই ভাবে অতীতের ঐতিহ্য আর ভবিষ্যতের প্রযুক্তিগত কলাকৌশলের একটা সংমিশ্রণ ঘটাতে চান টালিন ২০১১-এর আয়োজকরা৷
টালিনে পাঁচ বছর পর পর যে লোকসংগীতের আয়োজন করা হয়, তা এগিয়ে আনা হবে এবার৷ এস্টোনিয়ায় কয়েকশ বছরের ঐতিহ্য এই লোকসংগীতের কোরাস৷ ১৯৯১ সালে স্বাধিকার আন্দোলনের সময় সোভিয়েট দখলদারির বিরুদ্ধে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল এই সংগীত৷ জুলাই মাসের প্রথম দিকে শহরের এক প্রান্তে অনুষ্ঠিত হবে এই লোকসংগীতের অনুষ্ঠান৷ মারিস হেলরান্ড বলেন ‘‘৩০ হাজার শিশুশিল্পীর গান দর্শক শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করবে৷ এটাই আমাদের ঐতিহ্য৷'' ১৫ জুলাই উদ্বোধন করা হবে সাগর মিউজিয়ামের৷ জলজ উড়ো জাহাজগুলি প্রদর্শন করার জন্য সমুদ্রতীরে বিশাল হল নির্মাণ করা হচ্ছে৷ সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ঘের দেয়া একটি প্ল্যাটফর্মও নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ মারিস হেলরান্ড জানান, ‘‘বিশ্বের কাছে আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাস উপস্থাপন করার এটা আমাদের এক বিরাট সুযোগ৷ আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের দৃষ্টি এখন আমাদের দিকে নিবদ্ধ৷ অনেক পর্যটকও আসবেন৷ যারা এতদিন দ্বিধা দ্বন্দ্বে ছিলেন, তারাও আমাদের শহরের শিল্পীদের আবিষ্কার করতে আগ্রহী হবেন৷ টালিনবাসীর আনন্দিত এই ভেবে যে, বছর খানেক পাদপ্রদীপের আলোয় থাকতে পারবেনতরা এবং তাদের সাগরের ইতিহাস তুলে ধরতে পারবেন৷
প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক