ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে বেসরকারি সংস্থা সেইফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি (এসআরএস) এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷
গত বছরও একই সময়ে এমন একটি জরিপ প্রকাশ করেছিল তারা৷ তাতে ২২০টি কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৩০৬ জন শ্রমিক নিহতের তথ্য দেওয়া হয়েছিল৷ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এবছরের জরিপের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পরিবহণ খাতে সবচেয়ে বেশি ১৩৮ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷
সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিহত হয়েছেন ১০০ জন৷ এছাড়া নির্মাণ খাতে ৪৮ জন, কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ২৬ জন এবং কৃষি খাতে ২১ শ্রমিক নিহত হয়েছেন৷
শুধু সড়ক দুর্ঘটনাই ১৫৩ জন শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ ছিল৷ এছাড়া আগুনে পুড়ে ৫৭ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ২৫ জন, শক্ত বা ভারি কোনো বস্তুর আঘাতে বা তার নিচে চাপা পড়ে ২৩ জন, উপর থেকে পড়ে গিয়ে ১৯ জন, বজ্রপাতে ১৫ জন, বয়লার বিস্ফোরণে ১৫ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে নয় জন মারা যান৷ পাহাড়, মাটি, ব্রিজ, ভবন, স্থান বা দেয়াল ধসে নয় জন এবং পানিতে ডুবে আট শ্রমিক নিহত হন৷
জরিপের তথ্য প্রকাশকালে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, ‘‘পরিবহন খাতকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো নজরদারি বাড়াতে হবে৷ তা না হলে, দুর্ঘটনা বাড়তেই থাকবে৷”
কারখানায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা না থাকা, কেমিক্যাল সংরক্ষণে অদক্ষতা ও অবহেলা, কারখানা ভবনে জরুরি বহির্গমন পথ না থাকা, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেওয়া, নিরাপত্তা বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া সাম্প্রতিকালে অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ বলে জরিপে উঠে আসে৷
এনএস/এসিবি (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
গত বছরের ছবিঘরটি দেখুন...
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
আগুনের শুরু
সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোর লোডিং স্টেশন এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয় ৪ মে স্থানীয় সময় সাড়ে নয়টার দিকে৷ ঠিক কীভাবে আগুন লেগেছে তা এখনো জানা যায়নি৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
ভুল তথ্যে বড় বিপর্যয়
অগ্নিকাণ্ড শুরুর পরপরই ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস৷ তবে, সেখানে থাকা কন্টেইনারগুলোতে দাহ্য পদার্থ থাকার কথা তাদেরকে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন অগ্নিনির্বাপক কর্মীরা৷ ফলে আগুন নেভানোরক্ষেত্রে পানি ব্যবহার করায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে৷ এতে নয় অগ্নিনির্বাপক কর্মী প্রাণ হারান৷ পানির বদলে ফোম এবং বালু ব্যবহার করে আগুন নেভালে এই পরিস্থিতি এড়ানো যেতো বলেও মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
অনিয়মে ভরা ডিপো
ডিপোটির পরিবেশ ছাড়পত্র, ফায়ার লাইসেন্স, বন্ড লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, কলকারখানার সনদ, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমতি পত্র সব খানেই ত্রুটি রয়েছে বলে পরবর্তীতে জানা গেছে৷ ফলে সেখানে কী ধরনের পদার্থ জমা রাখা হয়েছে তা ফায়ার সার্ভিসের জানা ছিল না৷ পাশাপাশি অগ্নিকাণ্ড শুরুর পর ডিপো কর্তৃপক্ষের কেউই তথ্য দিয়ে সহায়তা করেনি বলে অভিযোগ রয়েছে৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
আগুনের বিস্তৃতি
ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা কয়েক কিলোমিটার দূর থেকেও টের পাওয়া গেছে৷ আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে সেনাবাহিনীও সেখানে আগুন নেভানোর কাজে যুক্ত হয়৷ পাশাপাশি আশেপাশের সব এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিটকে অগ্নিনির্বাপনে কাজে লাগানো হয়৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
মালিকপক্ষ কোথায়?
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএম কন্টেইনার ডিপোর চেয়ারম্যানের নাম বার্ট প্রঙ্ক৷ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান৷ আর পরিচালক হলেন মুজিবুর রহমান৷ এই রহমান ভাতৃদ্বয়ের মধ্যে মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ নেতা বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
‘নাশকতা কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে’
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট আনন্দ উল্লাসকে অবদমিত করতে কন্টেইনার ডিপোতে নাশকতা করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ৷ তবে, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি দাবি করেন, বড় একটি দুর্ঘটনাকে নানা ধরনের রাজনৈতিক প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে৷ দুর্ঘটনাটিকে নাশকতা বলে কোনো একটা পক্ষের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
৮৬ ঘণ্টা পর নিভলো আগুন
সীতাকুণ্ডে কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ৮৬ ঘণ্টা পর তা নেভানো সম্ভব হয়৷ এই অগ্নিকাণ্ড দেশটির ফায়ার সার্ভিসের দুর্বলতার দিকও আরো একবার তুলে ধরেছে৷ ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নের পাশাপাশি অন্তত দশ হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ ও দুশ’ নতুন সেন্টার চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
দুর্ঘটনা, নাকি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড?
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’, কেননা অগ্নিকাণ্ড ঘটলে কী ঘটতে পারে তা মালিকপক্ষ আগে থেকেই জানতো৷ এ ধরনের ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলা হলে ভুক্তভোগীদের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেয়া কঠিন হয়ে যায় বলে মনে করেন তিনি৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
আসামির তালিকায় নেই পরিচালক
কন্টেইনার ডিপোটির পরিচালক মুজিবুর রহমান চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ৷ আগুন ও বিস্ফোরণের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে থাকলেও ঘটনার পাঁচদিন পর বুধবার যে মামলা হয়েছে তাতে আটজনকে আসামি করা হলেও মালিকপক্ষের কাউকে আসামি করা হয়নি৷ পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত আগুন ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মালিক পক্ষের কারো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি৷
-
সীতাকুণ্ড অগ্নিকাণ্ড: যখন যা ঘটেছে
হতাহতের সর্বশেষ হিসেব
সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শুরুতে অন্তত ৪৯ জন নিহত হয়েছে বলে জানানো হলেও পরবর্তীতে তা কমিয়ে ৪১ জন করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ৷ সর্বশেষ খবর অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ৪৫ জন৷ এছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত দুই শতাধিক মানুষ৷ তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক৷