বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের এই দুর্বলতার কারণ কী? সাধারণ চোখে মনে হবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতে কম বাজেটই এর কারণ৷ আর প্রশ্ন করলে এই খাত নিয়ে যারা ভাবেন তারা আরো অনেক কারণ দেখান৷ কিন্তু সবার কাছ থেকেই একটি কথা ‘কমন' শোনা যায়, আর তা হলো দুর্নীতি৷ এবার স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তারপরও আশা জাগছেনা৷ কারণ এই বরাদ্দ যদি দুর্নীতির পেটে চলে যায় তাহলে বাজেট বাড়িয়ে কী লাভ? বিশ্লেষকরা বলছেন স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন বরাদ্দের শতকরা ৮০ ভাগই দুর্নীতির পেটে চলে যায়৷
স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র
বাংলাদেশে সরকারি চিকিৎসক আছেন ৩০ হাজার৷ আর সবমিলিয়ে নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন এক লাখের মতো৷ এর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীর হিসেব ধরলে সব মিলিয়ে এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি নয়৷
বাংলাদেশে এখন সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট হাসপাতালের সংখ্যা সাত হাজার ৩১২টি৷ এরমধ্যে সরকারি হাসপাতাল দুই হাজার ২৫৮টি, যার মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকও ধরা হয়৷ পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল ২৫৪টি৷ বাংলাদেশে এখন এক হাজার ৫৮১ জনের জন্য একজন নিবন্ধিত চিকিৎসক আছেন৷
সরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৫২ হাজার ৮০৭টি৷ আর বেসরকারি হাসপাতালে বেডের সংখ্যা ৯০ হাজার ৫৮৭টি৷ বাংলাদেশের এখন মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটির বেশি৷
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী মনে করেন, ‘‘বাজেট কম হওয়ায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের এই চিত্র এটা যেমন সত্য, তেমনি বাজেটের অধিকাংশ বরাদ্দ দুর্নীতির কারণে স্বাস্থ্যখাতের কোনো কাজে আসেনি৷ পরিকল্পনা হয়েছে আমলা নির্ভর৷ ফলে স্বাস্থ্যখাতের কোথায়, কী প্রয়োজন তার সঠিক পরিকল্পনা হয়নি৷’’ একজন ডাক্তারের বিপরীতে নার্স থাকতে হয় তিন জন৷ কিন্তু আমাদের আছে আধা জন, জানালেন এই চিকিৎসক নেতা৷
স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি
গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করে৷ তার মধ্যে বেশি দুর্নীতি হয়: কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহ খাতে৷ সাদা চোখে দেখা দুর্নীতির বাইরে একটি অভিনব দুর্নীতির কথাও তখন বলে দুদক৷ আর তা হলো, দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা৷ এমন যন্ত্রপাতি কেনা হয় যা পরিচালনার লোক নেই৷ ওইসব যন্ত্রপাতি কখনোই ব্যবহার করা হয়না৷
দুদক তখন এই দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশ করে বলে, দুর্নীতির কারণেই স্বাস্থ্যখাতের করুন অবস্থা৷ তারা তাদের এই তদন্তপত্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ব্যবস্থা নেয়ার জন্য৷ কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি৷
২০১৭-১৮ অর্থবছরে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের যন্ত্রপাতি কেনায়৷ ২৭টি সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেনাকাটার তথ্য নিয়ে সংবাদমাধ্যম দুর্নীতির এই চিত্র প্রকাশ করে৷
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ১৮৬ গুণ বেশি দাম দেখানো হয়েছে৷ এক সেট পর্দার দাম দেখানো হয়েছে ৩৭ লাখ টাকা৷ ১৭৫ কোটি টাকার নিম্নমানের যন্ত্রপাতি কেনা হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন্য৷ রংপুর মেডিকেল কলেজে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও চার কোটি টাকার সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা কখনোই ব্যবহার করা হয়নি৷
২০১৭ সালে টিআইবির খানা জরিপে স্বাস্থ্যখাতকে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়৷ জরিপে অংশ নেয়া ৪২.৫ ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে ঘুস দুর্নীতির শিকার হয়েছেন৷
সর্বশেষ এই করোনার মধ্যে চিকিৎসকদের জন্য পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারির কথা সবার জানা৷ এখনো তদন্তই চলছে, ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামাান বলেন , ‘‘কোভিড-এর কারণে স্বাস্থ্যখাতে দুই ধরনের দুর্নীতি প্রকাশ পেয়েছে৷ প্রথমত: স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুর্নীতি এবং দ্বিতীয়ত: স্বাস্থ্য অবকাঠামো খাতে দুর্নীতি৷ ক্রয় ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় এই খাতে দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি ৷ আমরা এই করোনা সংকটের মধ্যেও সেই দুর্নীতি দেখেছি৷’’
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
জনবল ও অবকাঠামো সংকট
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, একটি দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে যতজন ডাক্তার, নার্স, মেডিকেল টেকনলজিস্ট, অ্যানেস্থেটিস্ট থাকা আদর্শ সেটি বাংলাদেশে নেই৷ করোনার কারণে সেই সংকট প্রবলভাবে দেখা গেছে৷ বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলছেন, একজন ডাক্তারের বিপরীতে নার্স থাকতে হয় তিন জন৷ কিন্তু বাংলাদেশে আছে আধা জন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা দিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবতো আছেই৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
দুর্নীতি
দুর্নীতি দমন কমিশনের তৈরি এক প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ব্যবহার, ওষুধ সরবরাহসহ দুর্নীতির ১১টি খাত চিহ্নিত করা হয়৷ বলা হয়, দুর্নীতি করার জন্য অনেক অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হয়, যা পরিচালনার লোক নেই৷ ওইসব যন্ত্রপাতি কখনোই ব্যবহার করা হয় না৷ প্রতিবেদনটি গতবছর জানুয়ারিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তুলে দেয়া হয়েছিল৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
বাজেট বরাদ্দ ও বাস্তবায়নে অক্ষমতা
করোনার কারণে সম্প্রতি পেশ করা বাজেটে গতবছরের চেয়ে এবার স্বাস্থ্যখাতে বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এবার প্রস্তাবিত ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা জিডিপির ১.৩ ভাগ৷ গতবছর তা ছিল মাত্র ০.৮৯ ভাগ৷ তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বরাদ্দ যেমন প্রয়োজনের তুলনায় কম তেমনি অতীতে দেখা গেছে, বরাদ্দ বাস্তবায়নের হারও কম৷ ফলে স্বাস্থ্যসেবা পেতে মানুষের ভোগান্তি কমছে না৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
টিকাদানে সাফল্য
ছয়টি রোগের বিরুদ্ধে লড়তে ১৯৭৯ সালে ‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’ কার্যক্রম শুরু হয়৷ বর্তমানে এটি ১০টি রোগের ক্ষেত্রে সম্প্রসারিত হয়েছে৷ সারা দেশে বিনামূল্যে এসব টিকা দেয়া হয়৷ ২০১৮ সালে সব টিকাপ্রাপ্তির হার ছিল ৯৭.৬ শতাংশ৷ টিকাদান কর্মসূচিতে সফলতার জন্য গতবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে ‘গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন’৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
শিশুমৃত্যুর হার কমেছে
জনস্বাস্থ্যবিষয়ক দেশের সবচেয়ে বড় জরিপ ‘বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ’ বা বিডিএইচএস৷ সবশেষ জরিপটি হয়েছে ২০১৭-১৮ সালে৷ এতে বলা হয়, পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মৃত্যুহার সেই সময় ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন৷ এই সংখ্যা ১৯৭৯ সালে ২০২ জন এবং ২০০৬ সালে ৬৫ জন ছিল বলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ‘দ্য ল্যানসেট’-এর এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
গড় আয়ু বেড়েছে
গতবছর জুনে প্রকাশিত এক জরিপে ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো’ বা বিবিএস জানায়, বাংলাদেশের মানুষের মোট গড় আয়ু এখন ৭২ বছর ৩ মাস৷ ১৯৬০ সালে গড় আয়ু ৪৬ বছর ছিল বলে ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
জন্মনিয়ন্ত্রণে সাফল্য
বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে নারীদের সন্তান জন্মদানের হার ১৯৭১ সালে ছয় দশমিক নয় থেকে ২০১৭ সালে দুই দশমিক শূন্য ছয়ে নেমে এসেছে৷ এই হার প্রায় ইউরোপের সমান উল্লেখ করে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ আফ্রিকার জন্য রোল মডেল হতে পারে বলে গতবছর মন্তব্য করেছিলেন জার্মান উন্নয়নমন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
খরচ বাড়ছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যের পেছনে ১০০ টাকা খরচ হলে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায় ২৮ টাকা এবং বাকি ৭২ টাকা রোগীকে বহন করতে হয়৷ ২০১২ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১২-২০৩২ সাল মেয়াদি একটি কৌশলপত্র তৈরি করেছিল৷ সেখানে ব্যক্তিগত খরচ ৩২ টাকায় (তখন ছিল ৬৪ টাকা) নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়৷ অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে ৬৪ থেকে ৩২-এ নামার লক্ষ্য থাকলেও উলটো সেটি বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
সবার জন্য স্বাস্থ্যবিমা এখনও নেই
সরকার স্বাস্থ্য বিমা চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে বলে গতবছর ১৯ জুন সংসদকে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এর অংশ হিসেবে টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে স্বাস্থ্য বিমা কার্যক্রম চলছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি৷
-
ভালোমন্দের স্বাস্থ্যছবি
বেশিরভাগ রোগী এমবিবিএস ডাক্তারের কাছে যান না
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ২০১৯ সালের জুনে৷ এতে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ রোগী ওষুধের দোকানদার, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক, হাকিম-কবিরাজ, ওঝা, পীর, বৈদ্যসহ অন্যদের কাছ থেকে চিকিৎসা নেন৷ ১৬ শতাংশ যান সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিক, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে৷ বাকি ২৬ শতাংশ বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে গিয়ে চিকিৎসা নেন৷
লেখক: জাহিদুল হক
বাজেট
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে৷ স্বাস্থ্য খাতে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য মোট ৪১ হাজার ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মোট বাজেট বরাদ্দের ৭.২ ভাগ এবং জিডিপির ১.৩ ভাগ৷ তবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য বরাদ্দ ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা৷ ২০১৯-২০ সালে বরাদ্দ ছিলো ২৯ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৫.৬৩ ভাগ৷ এবার বাজেটে আগের চেয়ে তিন হাজার ৫১৫ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে৷ আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিলো ২২ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা৷ স্বাস্থ্যখাতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে ১৩টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ৷ স্বাস্থ্যখাতে প্রস্তাবিত বাজেটের ১৬ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকাই অবশ্য পরিচালন ব্যয়৷
এবার করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যখাতের বাজেট বাড়ানো হয়েছে ১৩ শতাংশেরও বেশি৷ আর করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি কোনো চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিভাগ আরো সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে৷
বিএমএ মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বেড়েছে ভালো কথা৷ কিন্তু এটা পরিকল্পনাহীন৷ থোক বরাদ্দ কোনো সুনির্দিষ্ট বিষয় নয়৷ এর ফলে যা হয়, এই বরাদ্দের ৮০ ভাগ চলে যায় ব্যক্তিগত তহবিলে৷ দুর্নীতি খেয়ে ফেলে৷ তাহলে আর বরাদ্দ বাড়িয়ে লাভ কী?’’
দুর্নীতি প্রতিরোধে বাজেটে কোনো পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি৷ বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় কিছু বলেননি৷ ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘এটা একটা দুর্নীতি সহায়ক বাজেট হয়েছে৷ তাই বরাদ্দ বাড়লেই যে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন হবে তা আশা করা যায়না৷’’
তাহলে সমাধান কী?
দুর্নীতিই আগে প্রতিরোধ করতে হবে৷ বাংলাদেশে এপর্যন্ত স্বাস্থ্যখাতে যে বরাদ্দ হয়েছে তা যদি স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরিকল্পনা করে ব্যবহার করা হতো তাহলে স্বাস্থ্যখাতের চেহারা অন্যরকম হতো৷ এর সঙ্গে জনবল বাড়াতে হবে৷ জোর দিতে হবে স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং গবেষণায়৷ আর সেবাটা হতে হবে অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিমূলক৷ সব হাসপাতালে স্থানীয়দের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠনের নিয়ম থাকলেও তা হয়না৷ আর যেখানে আছে তা কার্যকর নয়৷ ডা. এহতেশামুল হক বলেন, ‘‘সরকারি চাকরিজীবী, মন্ত্রী, এমপি ও জনপ্রতিনিধিদের যার যার এলাকার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ তাহলে তারা নিজেরাই পরিস্থিতি দেখবেন এবং উন্নয়নে মনোযোগী হবেন৷’’
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
দেশ অপ্রস্তুত আর প্রেসিডেন্ট একগুঁয়ে হলে যা হয়
চীনে করোনা সংকট দেখা দেয়ার দু’মাস পরও যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাসামগ্রীর ঘাটতি, করোনা টেস্ট শুরু করায় বিলম্ব, ইটালিতে মৃত্যুর মিছিল দেখেও করোনাকে ট্রাম্পের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, মধ্য এপ্রিলেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চাওয়া- ইত্যাদির উল্লেখ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি৷ বিশেষজ্ঞরা যা চান ট্রাম্প তার ঠিক বিপরীত দিকে হাঁটতে চেয়েছেন৷ ফলাফল পরাশক্তি হয়েও করোনার কাছে নাস্তানাবুদ হওয়া৷
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
স্বাস্থ্য বিভাগ ছুটি ভুলে গেলে যা হয়
শীতল যুদ্ধের যুগ আর নেই৷ তবে এ যুগেও কমিউনিস্ট শাসিত কিউবা আর যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মধুর হয়নি ৷ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যু এক লাখ ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে, অথচ কিউবায় মারা গেছে মাত্র ৮৩ জন৷ হোক না মাত্র এক কোটি ১৪ লাখ মানুষের দেশ, করোনাকে এভাবে বোতলবন্দি করলো কিভাবে তা-ই এখন কৌতুহলের কেন্দ্রে৷ গার্ডিয়ান বলছে, শুরু থেকে সপ্তাহের সাতদিন ঘরে ঘরে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করে তা সম্ভব করেছে কিউবা৷
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
বিশেষজ্ঞরা স্বেচ্ছাচারিতার কবলে পড়লে যা হয়
লকডাউন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরোধিতা করে কোণঠাসা হয়েছেন জাতীয় অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান ডা, অ্যান্থনি ফাউচি, একই বিষয়ে প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর বিরোধিতা করে দায়িত্ব হারিয়েছেন ব্রাজিলের দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ সামাজিক দূরত্ব মানার সরাসরি বিরোধিতা করা বলসোনারোর দেশও এখন ধুঁকছে৷ গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিউবার চেয়ে সত্তর গুন পিছিয়ে আছে ব্রাজিল৷
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
ভিয়েতনাম হলে যা হয়
ভিয়েতনামও করোনার বিরুদ্ধে দারুণ সফল৷ দেশ ছোট আর অর্থনীতি দুর্বল হলেও বড় যুদ্ধে ভিয়েতনাম কখনো হারেনি৷ ৩৫ বছর আগে সামরিক যুদ্ধে ব্যর্থ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, এখন ব্যর্থ হচ্ছে করোনা ভাইরাস৷ দ্রুত সীমান্ত বন্ধ করা, অল্প সময়ে বেশি পরীক্ষা করানো, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন- সব নিয়ম কঠোরভাবে মেনে সফল হয়েছে ভিয়েতনাম৷
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
সরকার এবং সরকারপ্রধান অপরিনামদর্শী না হলে যা হয়
জনমনে অসন্তোষ দেখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট বন্ধ করেছিল ব্রাজিল সরকার৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তা আবার চালু হয়েছে৷ ফুটবলে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে আর্জেন্টিনা ২৬ হাজারের মতো সংক্রমণ আর মাত্র ৭৮৭ জন করোনায় মৃত্যু নিয়ে এখনো অনেক ভালো অবস্থায়৷ আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে চার কোটি, বিপরীতে ব্রাজিলের জনসংখ্যা ২১ কোটির কাছাকাছি হলেও ব্যবধানটা কিন্তু সেই তুলনায় অনেক বড়!
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
করোনাকে বেশি সময় দিলে যা হয়
করোনা যখন হানা দিলো, তখন পরীক্ষার প্রস্তুতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের জোগান- সব কিছুরই ঘাটতি ছিল ইউরোপের দেশটিতে৷ লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব মানতে চাননি অনেকে৷ ফলে বিপদ বেড়েছে দ্রুত৷ এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক৷ এ পর্যন্ত ইটালিতে ৩৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ ডাক্তার মারা গেছেন একশ’রও বেশি৷ বেশির ভাগ ডাক্তারই মারা গেছেন পিপিই ছাড়া চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে৷
-
করোনার বিরুদ্ধে কারা জেতে, কারা জেতে না
ছোট দেশও ‘গাইডলাইন’ মানলে যা হয়
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডে আর করোনায় সংক্রমিত রোগী নেই৷ বিশ্লেষকরা বলছেন মূলত গাইডলাইন মেনে চলার কারণেই এমন সাফল্য এসেছে৷ ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্কুল অব ফার্মাসির শিক্ষক ওকসানা পাইসিক বলেন, ‘‘ প্রথমে খুঁজে বের করা, তারপর টেস্ট করা, আইসোলেট করা, প্রত্যেক রোগীকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা, সংক্রমণ ধরা পড়লে কোয়ারান্টিনে পাঠানো- এসব মেনেই নিউজিল্যান্ড সফল হয়েছে৷’’