1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিআইপিরা কেন সরকারি হাসপাতালে যান না

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ জুন ২০২০

বাংলাদেশে করোনায় ভিআইপিরা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন না৷ দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় তারা বেসরকারি হাসপাতালে, সুযোগ পেলে সিএমএইচকে বেছে নিচ্ছেন৷ কেন এমন হচ্ছে?

https://p.dw.com/p/3dvB6
মন্ত্রী, এমপি, বিত্তবানরা কোনোভাবেই সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে পারছেন নাছবি: DW/H. Ur Radhid

বাংলাদেশে বিত্তবান, প্রভাবশালী, মন্ত্রী এমপি এবং পদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা আগে থেকেই দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন৷ কিন্তু করোনার কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ এবং চিকিৎসা না থাকায় আর বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এবার তাদের দেশেই থাকতে হচ্ছে৷ তবে কোনোভাবেই তারা দেশেই সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভর করতে পারছেন না৷

ধনীরা বেসরকারি হাসপাতালকেই বেছে নিচ্ছেন, এর বাইরে তাদের পছন্দ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ)৷ কিন্তু সেখানে বিশেষ অনুমোদন ছাড়া কেউ সুযোগ পাচ্ছেন না৷ কারণ এটা সামরিক বাহিনীর বর্তমান এবং সাবেক সদস্যদের জন্য৷ তবে যারা সুযোগ পাচ্ছেন তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন৷

ভিআইপিদের জন্য অবশ্য আলাদা কোভিড হাসপাতালের প্রস্তাব থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সমালোচনার মুখে হয়নি৷ প্রাইভেট হাসপাতালগুলোতে ভিআইপি ব্যবস্থা আছে৷ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বড় বড় হাসপাতালেও ভিআইপি কেবিন আছে৷ আর বিভিন্ন পেশাজীবী আর কর্পোরেট গ্রুপ বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে করোনা চিকিৎসার জন্য চুক্তি করে রেখেছে৷ সাধারণ মানুষের আশ্রয় সরকারি হাসপাতালই৷

মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাবেক সংসদ সদস্য, শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের কেউ কেউ এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারাও গেছেন কেউ কেউ৷ তবে তাদের বলতে গেলে কেউই সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেননি বা নিচ্ছেন না৷ জানা গেছে ভিআইপিদের বড় অংশটিই আছেন সিএমএইচে৷ তাদের মধ্যে এমনকি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যও আছেন৷ আর প্রভাশালীদের কাউকে কাউকে দ্রুত হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলেও সাধারণ মানুষের জন্য এই সুযোগ নেই৷

এটা তাদের মানসিক সমস্যা: ডা. এহতেশামুল হক

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এহতেশামুল হক মনে করেন ভিআইপিরা যে সরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছেন না এটা তাদের ‘মানসিক সমস্যা’৷

তার মতে, ‘‘মন্ত্রী-এমপিরা যার যার এলাকার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিলে হাসপাতালগুলোর অবস্থা জানতে পারতেন এবং সেগুলোর উন্নতি করতে পারতেন৷ কিন্তু তা হয়নি৷ তারা আসলে জানেনই না যে বাংলাদেশের সরকারি হাসপাতালের অবস্থা কী৷ তাদের আস্থাও নেই৷ এখন করোনার চিকিৎসায় দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় তারা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন৷ সুযোগ থাকলে তারা বিদেশে চলে যেতেন৷ দুই-একজন চার্টার্ড বিমানে গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷’’

বিত্তবানেরা চিকিৎসা ব্যবস্থা ছাড়াও হাসপাতালে আরো অনেক সুবিধা চান৷ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘‘ভিআইপিরা হাসপাতালে একটু আরাম আয়েশে থাকতে চান৷ তাদের টাকা আছে তারা খরচ করছেন৷ বাংলাদেশে কোনো কোনো হাসাপাতালে তো পাঁচতারা হোটেলের সুযোগ সুবিধা আছে৷’’ তবে মন্ত্রী, এমপি বা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা না নেয়া সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি এক ‘এক ধরনের আস্থাহীনতা’ বলে তিনি মনে করেন৷

ভিআইপিরা হাসপাতালে একটু আরাম আয়েশে থাকতে চান: ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ

সাধারণ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে যারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান তাদের মধ্যে তিন ধরনের রোগী আছে৷ ১. যারা বিত্তশালী এবং ক্ষমতাবান৷ ২. যারা ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন এবং ৩. যাদের চিকিৎসার ব্যাপারে এখানকার চিকিৎসকেরা আশা ছেড়ে দেন৷

এদের বড় অংশটি যান ভারতে৷ আর ভারতে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্যই বেশি রোগী যান৷ এর বাইরে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে যান বিত্তবানরা৷ ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ ২১ হাজার ৫২১ জন বাংলাদেশি চিকিৎসা ভিসায় দেশটিতে গিয়েছেন৷ এর এটা প্রতিবছর কমপক্ষে শতকরা পাঁচ ভাগ হারে বাড়ে৷

বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) তাদের এক পর্যবেক্ষণে জানায় ২০১২ সালে বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা বাবদ দেশের বাইরে গেছে ২০৪ কোটি ডলার৷ তবে বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে এখন এটা ৫০০ কোটি ডলারের বেশি হবে৷

গতবছরের এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য