বিপ্লবী নেতা চে গেভারা
১৩ মে ২০১৩কিন্তু সেই সাথে তিনি যে একজন অসাধারণ মেধাবী ব্যাক্তিত্ব ছিলেন, সেটা হয়ত অনেকেই জানেন না৷
কিউবার আলোকচিত্র শিল্পী আলবার্তো কোর্দা কি কখনও ভেবেছিলেন তাঁর তোলা একটি প্রতিকৃতি এতটা পরিচিতি পাবে? অ্যারনেস্তো গেভারা দে লা স্যারনা, বাংলায় যাঁকে আমরা চে গুয়েভারা বলে চিনি, তাঁর সাদা-কালো এই প্রতিকৃতি শুধু বিপ্লবেরই প্রতীক নয়, বিশ্ব যুব সমাজে সংস্কৃতির একটা অঙ্গও বটে৷ ১৯৬০ সালের ঐ ছবিটি টুপি, টি-সার্ট, পোস্টার এবং আরো কত কিছুতেই না ছাপা হয়৷
পুরো নাম: অ্যারনেস্তো গেভারা দে লা স্যারনা
জন্ম তারিখ: ১৪ই জুন, ১৯২৮
জন্মস্থান: সান্তা ফে, আর্জেনটিনা
মৃত্যু: ৯ই অক্টোবর, ১৯৬৭, ভালেগ্রান্ডে, বলিভিয়া
সমাধি: সান্টা ক্লারা, কিউবা
পেশা: চিকিৎসক, লেখক, সরকারি কর্মকর্তা
বাবা: অ্যারনেস্তো গেভারা লিঞ্চ
মা: ছেলিয়া দে লা স্যারনা
স্ত্রী: হিলডা গাডেয়া (১৯৫৫ – ১৯৫৯),
আলাইডা মার্শ (১৯৫৯–১৯৬৭)
সন্তান: হিলডা, আলাইডা, কামিল, ছেলিয়া এবং অ্যারনেস্তো
উল্লেখযোগ্য তৎপরতা: কিউবার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব, বলিভিয়ায় জাতীয় মুক্তিসেনা বিপ্লব
স্পেনিশ, বাস্ক ও আইরিশ বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের সন্তান চে কিছুটা বামপন্থি পরিবেশে বড় হন৷ ক্রীড়া, সাতার, ফুটবল ও দাবা খেলা ছাড়াও পড়ার প্রতি তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ৷ তাঁর বাড়িতে ছিল তিন হাজারেরও বেশি বই৷ কার্ল মার্ক্স, উইলিয়াম ফোলক্নার, অ্যামিলিও সালগারি, আন্দ্রে গিডি ও জুল ভার্ন থেকে শুরু করে জওহারলাল নেহেরু, ফ্রাঞ্জ কাফকা, আলব্যার কামু, ভ্লাদিমির লেনিন ওবং জ্যঁ পল সার্ত্র-এর রচনা কর্মের তিনি ছিলেন উৎসাহী ও সারগ্রাহী পাঠক৷ পরবর্তিকালে ল্যাটিন সাহিত্যের প্রতিও তাঁর আগ্রহ বেড়ে ওঠে৷ এ সমস্ত প্রভাবশালী বুদ্ধিজীবীদের বেশ কিছু নাম এবং তাঁদের ধ্যান, ধারণা ও দর্শন, নিজের হাতে তাঁর নোটবুকে সুবিন্যস্তভাবে লিপিবদ্ধ করেছিলেন চে৷ লেখায় ছিল তাঁর দারুণ হাত৷
১৯৪৮ সালে বুয়েনস আইরেস বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসা বিভাগে পড়শুনা শুরু করেন৷ এ সময়ই ভ্রমণের বাসনা জাগে তাঁর মনে৷ ১৯৫০ সালে একটি সাধারণ সাইকেলে ছোট একটি ইঞ্জিন সংস্থাপন করে বেড়িয়ে পড়েন চে গেভারা৷ বহু মাস ধরে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দেন তিনি৷ আর্জেন্টিনা থেকে শুরু করে ল্যাটিন অ্যামেরিকার বহু প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেড়ান চে৷ এই ভ্রমণকালেই তাঁর নজরে পড়েছে দরিদ্র, ক্ষুধার্ত, লাঞ্ছিত ও নিপীড়িত মানুষের জীবন৷ আর সেই থেকেই ধীরে ধীরে বিদ্রোহের বীজ রোপিত হয় তাঁর মনে৷ এই ভ্রমণের পর আর্জেন্টিনায় ফিরে এসে ডাক্তারি শেষ করেন চে এবং পরবর্তী সময়ে মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন৷
শুধু চিকিৎসক হিসেবেই নন, মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে হাতে কলম ধরেছিলেন, সমান দক্ষতায় সেই হাতে অস্ত্রও চালিয়েছেন তিনি৷ ১৯৬৭ সালের ৯ই অক্টোবর মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হওয়ার পর প্রায় ৪৫ বছর পেরিয়ে গেছে৷ কিন্তু আজও চে গেভারা একজন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে বেঁচে রয়েছেন বহু মানুষের মনে৷