এসা-র মহাপরিচালক ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার
৫ অক্টোবর ২০১৫গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে রুশ ও অ্যামেরিকানরা মহাকাশে করমর্দন করেছিল৷ সেই সহযোগিতা আজ আরও দৃঢ় হয়েছে৷ মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ ভবিষ্যতেও সক্রিয় রাখতে চান ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার মহাপরিচালক ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার৷ তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য মহাকাশ যাত্রাকে আরও বেশি করে কাজে লাগানো উচিত বলে আমি মনে করি৷ শুধু রাশিয়া নয়, বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে এটি প্রজোয্য৷ আমি বলি, কোনো এক পক্ষের বয়কটের উদ্যোগের মাধ্যমে মহাকাশ যাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না৷ সংকটের সময়েও বিজ্ঞান জগতের মতো এই ক্ষেত্রটিও যেন যোগাযোগের সূত্র থাকে৷
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ভ্যোর্নার বলেন, ‘‘ছেলেবেলা থেকেই মহাকাশ বার বার আমার পিছু নিয়েছে, আমিও মহাকাশের পিছু নিয়েছি৷ প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই কৌতূহল রয়েছে৷ আমার ক্ষেত্রে সেটি প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের মধ্যে বিকশিত হয়েছে৷ আমার বয়স যখন তিন, বাবা সে সময়ে স্পুটনিক সম্পর্কে বলেছিলেন৷ সেটা আমার মনকে বেশ স্পর্শ করেছিল৷ তখন তিনি আমাকে স্পুটনিক দেখিয়েছিলেন, যদিও সেটা দেখা সম্ভব ছিল না৷ কিন্তু তিনি এমনভাবে দেখিয়েছিলেন যে, আমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম৷ মহাকাশের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণ এক নতুন ও পরিবর্তিত পর্যায়ে এসে পড়েছি৷ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ এই মুহূর্তে ইউরোপের ২২টি দেশ ও ক্যানাডা এসা-র সদস্য৷ তাই আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্ব আমরা বিলক্ষণ জানি৷ এ কারণে এসা পূর্ব ও পশ্চিমের বিভিন্ন শিবিরের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটানোর আদর্শ সহযোগী৷''
জার্মান এয়ারোস্পেস এজেন্সির প্রধান হিসেবে ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার প্রায় ৮ বছর ধরে নেটওয়ার্কিং ও বিভিন্ন স্বার্থের মধ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন৷ ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার শীর্ষে কাজের সময় তা অবশ্যই কাজে লাগবে৷
তিনি মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসের অনেক সন্ধিক্ষণের সাক্ষীও ছিলেন৷ যেমন দীর্ঘ শীতঘুমের পর রোসেটা-র জেগে ওঠা অথবা ‘চুরি' ধূমকেতুর উপর ‘ফিলে' রোবটের অবতরণের ঘটনা৷ ভ্যোর্নার বলেন, ‘‘চাঁদে প্রথম মানুষ নামা অথবা ইউরি গ্যাগারিনের মহাকাশযাত্রার মতো এই সব মুহূর্ত সত্যি অনবদ্য৷ কিছুকাল পর পর এমন সব বড় ঘটনা ঘটে৷ রোসেটাও একেবারে সেই পর্যায়ের একটা সাফল্য৷ ইতিমধ্যে জার্মানি তথা ইউরোপে আমরা এমন এক সম্মানজনক অবস্থায় পৌঁছেছি, যে গোটা বিশ্বে তার স্বীকৃতি পাওয়া যাচ্ছে৷ সেই স্বীকৃতি কাজে লাগিয়ে আমাদের এখন সত্যি আন্তর্জাতিক স্তরের মহাকাশ প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে৷ প্রথম আইডিয়া হিসেবে আমি চাঁদের পিছন দিকে এক স্থায়ী স্টেশন গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু করেছি৷''
সেখানে গবেষক ও ইঞ্জিনিয়াররা মহাকাশ অভিযানে আরও অগ্রগতির প্রস্তুতি নিতে পারবেন৷ চাঁদে প্রস্তাবিত স্টেশনটি প্রকৃত অর্থে সেই সব দেশের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে, যাদের মহাকাশ কর্মসূচি রয়েছে৷ ইয়োহান ডিট্রিশ ভ্যোর্নার বলেন, ‘‘আমার ধারণা, ভবিষ্যতে এমন প্রকল্প আমাদের বৈশ্বিক সমস্যা দূরে রেখে মহাকাশ যাত্রার মাধ্যমে সেতুবন্ধ রচনা করতে সাহায্য করবে৷''