তুরস্কে শরিয়া চালুর আহ্বান সমস্যাজনক?
২৭ এপ্রিল ২০১৬এই আহ্বানের ঘটনায় পশ্চিমা মধ্যবিত্ত নাগরিকদের চোখে রসবোধহীন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের ছবি বারবার ভেসে উঠছে যিনি শরিয়া আইন চালু করতে চান, এবং সেটা এমন এক জায়গায় যেখানে জার্মানি থেকে বিমানে যেতে লাগে মাত্র তিন ঘণ্টা৷
তবে বিষয়টি কখনও ঘটবে না৷ এর্দোয়ানের দল একেপি যদি আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের আধুনিক, ধর্মনিরপেক্ষ তুরস্কের মতবাদ ভেঙে দিতে চায় তাহলে দেশটির জনগণের একটি বড় অংশ বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নেমে আসবে, এমনকি এর্দোয়ানের দলের সমর্থকরাও৷
একেপি যদি সংবিধানে ধর্মীয় তত্ত্ব ঢোকানোর প্রস্তাব দেয় তাহলে তারা তাদের উদার সমর্থকদের হারিয়ে ফেলবে৷ রক্ষণশীলরা যদি তাদের সীমানা ছাড়িয়ে যায় তাহলে কী হতে পারে সেটা ২০১৩ সালের গেজি পার্ক আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে৷ সেই সময় তুরস্কের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার মানুষ, যাদের বেশিরভাগই তরুণ এবং যারা বিভিন্ন দল ও শ্রেণির, তারা এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল৷ সেই স্মৃতি এর্দোয়ান দ্রুত ভুলে যেতে পারেন না৷ তাছাড়া গত নির্বাচনের ফলাফল থেকে এর্দোয়ান এটি নিশ্চয় বুঝেছেন যে, একেপি কখনও সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না৷ অথচ সংবিধান পরিবর্তনের জন্য এটি প্রয়োজন৷ ফলে এর্দোয়ান আর কাহরামান যতই বলুন না কেন, সেটি কখনও হবে না৷
আসল ধর্মনিরপেক্ষতা কখনোই ছিল না
তুরস্ক প্রজাতন্ত্র সৃষ্টি হওয়ার কদিন পরই ‘প্রেসিডেন্সি অফ রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স' নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়৷ দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরই এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক বাজেট সবচেয়ে বেশি৷ বছরে প্রায় একশ কোটি ইউরো৷ এই প্রতিষ্ঠানের কাজ ইসলামের বিশ্বাস ও রীতিনীতি বাস্তবায়ন করা, মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা৷ তুরস্কে মসজিদের ইমামরা সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী৷ তবে দেশটিতে শুধু সুন্নি মুসলমান গোষ্ঠীকে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয় সরকার৷
তুরস্কে আসলে মুসলমানরাই সবচেয়ে বিপদে আছে৷ আলাউইট সম্প্রদায়ের প্রায় ২০ মিলিয়ন মানুষের বাস সেখানে৷ অথচ তাদের ধর্মীয় রীতিনীতি পালনে বাধা দেয়া হয় বলে সম্প্রতি নিশ্চিত করেছে ইউরোপের মানবাধিকার আদালত৷
ভবিষ্যতে তুরস্কের সংবিধানে ‘আল্লাহ' শব্দটি যোগ করা হবে কিনা তার ওপর ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি নির্ভর করছে না৷ সেটি হবেও না৷ আসল সমস্যা হলো, তুরস্কে কখনও আসল ধর্মীয় স্বাধীনতা ছিলই না৷
আপনি কি ডানিয়েল হাইনরিশের সঙ্গে একমত? আপনারও কি মনে হয় তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতা কখনোই ছিল না? লিখুন নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷