তুরস্কের নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ শিবিরের আশা ‘গান্ধী কেমাল’
৪ জুন ২০১১তুরস্কে এবারের নির্বাচনে শুধু দলগত নয়, আবার এক আদর্শগত সংঘাত দেখা যাবে৷ একদিকে আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মুস্তফা কেমাল আতাতুর্ক'এর অনুগামীরা – যারা বেশ কিছুকাল ধরে রাজনৈতিক আঙিনায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে৷ অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান'এর ইসলামপন্থী আক পার্টি – যে দল ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েও একের পর এক সংস্কার চালিয়ে দেশের অর্থনীতিকে মজবুত করে দেশ-বিদেশের সমীহ আদায় করতে সফল হয়েছে৷ জনমত সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এই দল পর পর দুটি কার্যকাল ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও বিপুল জনসমর্থন হারায় নি৷ তুরস্ক তাহলে কোনদিকে এগোচ্ছে?
আতাতুর্ক তুরস্ককে আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলে পশ্চিমা বিশ্বের দিকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন৷ সেখানে ইসলাম ধর্মের অবস্থান গৌণ৷ এই আদর্শে অনুপ্রাণিত একাধিক প্রজন্মের জীবনযাত্রা আমূল বদলে গেছে৷ শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে দোসর করে এই এলিট শ্রেণী বহুকাল অনেক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এসেছে৷ অন্যদিকে কড়া রাষ্ট্রীয় নীতির চাপে পড়ে ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজেদের গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল৷ আক পার্টির উত্থান সেই পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে৷ নতুন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তারা আবার সমাজের কেন্দ্রস্থলে এসে পড়েছে৷ ‘দেশ উচ্ছন্নে যাচ্ছে' বলে সেকুলারিস্ট বা ধর্মনিরপেক্ষতার প্রবক্তারা প্রমাদ গুনছেন৷ তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ইজমির'এ দুই শিবিরের এই বিভাজন বিশেষভাবে চোখে পড়ে৷ ধর্মীয় আক পার্টি ক্ষমতায় আসার পর সেকুলারিস্টদের দুর্গ বলে পরিচিত এই শহরের প্রতি বৈষম্য দেখিয়ে আসছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলছে৷ ভোট না পেয়ে তারা ইজমিরে কল-কারখানা গুটিয়ে ইস্তানবুলে পাঠিয়ে দিচ্ছে বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করছে৷
এবারের নির্বাচনে কিছুটা হলেও সমর্থন ফিরে পেতে পেতে মরিয়া প্রধান বিরোধী দল সিএইচপি৷ স্বয়ং আতাতুর্ক এই দলের প্রতিষ্ঠাতা৷ দলের নতুন নেতা কেমাল কেলেচদারোলু'কে ঘিরে নতুন করে আশা দানা বাঁধছে৷ চেহারায় মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে কিছু মিল থাকায় তাঁকে অনেকেই ‘গান্ধী কেমাল' নামে ডাকছে৷ তিনি দলকে বর্তমান যুগের জন্য উপযুক্ত করে তোলার চেষ্টা করছেন এবং মানুষের সমর্থন ফিরে পাচ্ছেন৷ নির্বাচনে জিততে না পারলেও জয়ের ব্যবধান কমানোই আপাতত তাঁর লক্ষ্য৷ সেক্ষেত্রে এর্দোয়ানের দল সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ আসন পাবে না এবং সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক