১৫ বছর বয়সে আটক ওমর খদরের যুদ্ধাপরাধের স্বীকারোক্তি
২৬ অক্টোবর ২০১০আল-কায়েদার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা পরিবারে জন্ম ক্যানাডীয় নাগরিক ওমর খদরের৷ মার্কিন বন্দিশালা গুয়ানতানামো বে'র ছোট্ট ঘরে গত মাসে নিজের ২৪তম জন্ম দিন পালন করেছে খদর৷ দীর্ঘ আট বছরেরও বেশি সময় ধরে গুয়ানতানামোতে রয়েছে সে৷ মিশরীয় বংশোদ্ভূত খদরের বাবা ২০০৩ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে বলে খবর৷ খদরের এক ভাই আব্দুর রহমান ক্যানাডীয় টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছে, সে নিজে এবং তার ভাই-বোনেরা আফগানিস্তানে আল-কায়েদার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছে৷ সে বলেছে, ‘‘আমাকে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে৷ আমাকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে৷'' খদরের বোন জয়নব এবং অপর ভাই আব্দুল্লাহর সাথেও আল-কায়েদার কোন সম্পর্ক আছে কি না তা খতিয়ে দেখাও হয়েছে বলে জানা গেছে৷
খদরের পারিবারিক ইতিহাস এমনটি হলেও সে নিজেকে ক্যানাডার সাথে বেশি করে সম্পৃক্ত বলেই মনে করে, এমন মন্তব্য মার্কিন সাবেক সামরিক আইনজীবী লেফটেন্যান্ট কমান্ডার বিল ক্যোয়েবলারের৷ তবে ওমর খদরের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি সবচেয়ে প্রশ্নসাপেক্ষ তা হলো সে যখন আফগানিস্তানে আটক হয় তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর৷ ক্যোয়েবলারের ভাষায়, ‘‘তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তখন সে ছিল আফগানিস্তানের চলমান যুদ্ধে ভীত-সন্ত্রস্ত এবং আহত ১৫ বছরের বালক৷ সে ঐ সব শিশুদের মতোই যারা ভুল করে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷ আর তার চারপাশে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে সে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছিল৷'' ২০০৮ সালে ক্যানাডীয় সংসদীয় কমিটির কাছে ক্যোয়েবলার জানিয়েছিলেন যে, মার্কিন সৈন্যরা খদরের পিঠে কমপক্ষে দুইবার গুলি করেছে৷ এমনকি অন্য একজন সৈন্য এতে বাধা দিলে তাকে প্রায় মেরে ফেলাই হচ্ছিল৷ খদর নিজেও বলেছে, তাকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমে আফগানিস্তানের বাগরাম সেনা শিবিরে এবং পরে গুয়ানতানামো বে বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়৷ আর তার উপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন৷
খদরের ঘটনাটি আবারো আলোচনায় আসল সোমবার যখন সে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এড়াতে স্বীকার করল যুদ্ধাপরাধের কথা৷ গুয়ানতানামো বে'র সামরিক আদালতে সে স্বীকার করেছে যে, ২০০২ সালে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করার সময় সে আল-কায়েদার সাথে কাজ করেছে এবং রাস্তার পাশে বোমা পেতে রেখে এক মার্কিন সৈন্যকে হত্যা করেছে৷ আদালতের কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা না হলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভাষ্য, মার্কিন কৌঁসুলি এবং আসামি পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে গোপন চুক্তির ভিত্তিতেই হয়তো এমন স্বীকারোক্তি৷ আর এর ফলে খদরকে আরো এক বছর কাটাতে হবে গুয়ানতানামো বন্দিশালায়৷ এরপর ক্যানাডায় ফিরে আরো সাত বছর কাটাতে হবে সেখানকার কারাগারে৷ আসামি পক্ষে আইনজীবী ডেনিস এডনি জানিয়েছেন, এমন ব্যবস্থা করার ব্যাপারে ‘কূটনৈতিক ইঙ্গিত' মিলেছে অটোয়া থেকে৷ তবে ক্যানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরেন্স ক্যানন সোমবার বলেন, ‘‘এটি মার্কিন সরকার এবং খদরের আইনজীবীদের মধ্যকার বিষয় এবং এ ব্যাপারে আর কোন মন্তব্য নেই৷'' এদিকে, খদরের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি বিবেচনা করে এটিকে পুনরায় তদন্ত করার জন্য আবেদন জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম