৭০ বছরে অনেকটা বিচ্যুত আওয়ামী লীগ
২৩ জুন ২০১৯হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়৷ জন্মলগ্নে এই দলের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'৷ ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে ‘মুসলিম' শব্দটি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ' নামকরণ করা হয়৷ স্বাধীনতার পর নামকরণ হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ'৷ বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা৷ এর পর থেকে গেল ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্বে আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, সময়ের হিসেবে যা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে অর্ধেকের বেশি৷
রাজনীতি বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন দলটির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘‘মুসলিম লীগ থেকে যখন এই দলটি আওয়ামী লীগ হয় তখন গণমানুষের দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে৷ স্বাধীনতা যুদ্ধে এই দলের অবদান অনস্বীকার্য৷ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর অনেকটাই দিক হারিয়েছিল দলটি৷ ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দলের হাল ধরার পর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে৷'' ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলছিলেন তিনি৷
১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০০১-২০০৭ পর্যন্ত একটা বিরতি দিয়ে আবার সরকার গঠন করে দলটি৷ এরপর থেকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে তারা৷
‘‘সম্প্রতি দলটি ধর্ম নির্ভর হয়ে পড়ছে৷ আমি বলব তারা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে,'' সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন৷ ‘‘উদাহরণ দিয়ে বলি- হেফাজতে ইসলাম৷ যে দলটি মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, নারী বিদ্বেষী তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সখ্য হতে পারে না৷ আবার ৭২ এর সংবিধান ফিরিয়ে আনতে গিয়ে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখা হয়েছে৷ তাহলে তো বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের জায়গায় তারা থাকল না৷ এখন বলা হচ্ছে এগুলো ভোটের রাজনীতি৷ কিন্তু আমি এটাকে বলব আদর্শ বিচ্যুতি৷''
মোটা দাগে তিনটি বিচ্যুতি ধরা পড়েছে রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক মঞ্জুরুল ইসলামের চোখে৷
‘‘প্রথমত, তৃণমূল রাজনীতি নির্ভর দলটি এখন অনেকটাই ব্যবসায়িক নির্ভর হয়ে পড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজেটেও,'' ডয়চে ভেলেকে বলেন তিনি৷ ‘‘যেমন ধরেন, ঋণ খেলাপিদের সুবিধা দেয়া হচ্ছে৷ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে৷ তারপরও সঞ্চয়পত্রের উপর উৎসে ৫ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছে৷ বাজেট প্রণয়নের সময় হয়ত অর্থমন্ত্রীর খেয়ালই ছিল না, এটা কেনেন সাধারণ মানুষ৷ যেটা মতিয়া চৌধুরীর চোখে ধরা পড়েছে৷ কারণ তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক৷ আরেকটা হল- আওয়ামী লীগে যুবলীগ-ছাত্রলীগের প্রভাব৷ দলের শুরুতেও সহযোগী সংগঠন হিসেবে যুবলীগ ছাত্রলীগ ছিল৷ কিন্তু তখন তাদের এত প্রভাব দলের উপর ছিল না৷ তাদের চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিতে ম্লান হচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড৷ আর তৃতীয়টা হল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল নিয়মিত না৷ এখানে গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব আমার চোখে পড়ছে৷ একটু চেষ্টা করলেই এখান থেকে বেড়িয়ে এসে আদর্শিক গণতান্ত্রিক দল হতে পারে আওয়ামী লীগ৷''
রবিবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নেতারা৷ পরে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল নিপীড়ন রোধ করতে, শোষণ-বঞ্চনা-ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে৷''