হৃদরোগের লক্ষণ আগেভাগে জানলেই ভালো
৫ জুলাই ২০২২দেখলে বোঝা না গেলেও কাটারিনা কাইসার কঠিন হৃদরোগে ভুগছেন৷ অথচ তার বয়স মাত্র ৩১৷ পাঁচ বছর আগেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ বোধ করতেন৷ একদিন দুপুরে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে কাটারিনা আচমকা অজ্ঞান হয়ে যান৷ তিনি নিজে সার্কুলেশনের সমস্যাকেই এমন অঘটনের জন্য দায়ী করেছিলেন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘মা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিলেন৷ আগেই ফার্স্ট এইড কোর্স করার কারণে তিনি উপসর্গগুলি ঠিকমতো বুঝেছিলেন৷ আরো বেশি সময় অপেক্ষা করলে আমি হয়তো বাঁচতামই না৷''
রোগ নির্ণয় করতে গিয়ে জানা গেল, তাঁর প্রথম স্তরের কার্ডিয়াক ইনসাফিসিয়েন্সি রয়েছে৷ সুস্থ হৃদযন্ত্র দুটি পর্যায়ে কাজ করে৷ কনট্র্যাকশন পর্যায়ে হৃদযন্ত্রের পেশি সংকুচিত হয়৷ সে সময়ে হৃদযন্ত্র থেকে শরীরে রক্ত পাম্প করা হয়৷ রিল্যাকসেশন পর্যায়ে হৃদযন্ত্রের পেশি শিথিল হয়ে যায় এবং রক্ত তখন আবার হার্ট চেম্বারে প্রবেশ করে৷ কার্ডিয়াক ইনসাফিসিয়েন্সি হলে হৃদযন্ত্র আর ঠিকমতো পাম্প করতে পারে না৷
প্রোফেসর ইনগ্রিড কিন্ডারমান এই রোগের বিশেষজ্ঞ৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা জানি, হৃদযন্ত্রের এমন দুর্বলতার পেছনে দুই-তিনটি প্রধান কারণ রয়েছে৷ বিশেষ করে বহু বছর ধরে উচ্চ রক্তচাপ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা না হলে এমনটা ঘটতে পারে৷ এমন পরিস্থিতিতে সেইসঙ্গে করোনারি হার্ট ডিজিজও হতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাক ঘটাতে পারে৷''
কাটারিনার ক্ষেত্রে এমন অবস্থার কোনো উৎস খুঁজে পাওয়া যায় নি৷ তবে ইতোমধ্যে জিনগত কারণে তাঁর পরিবারের মধ্যে এমন প্রবণতা শনাক্ত করা গেছে৷ তাঁর বাবার হৃদযন্ত্রেও দুর্বলতা রয়েছে৷ প্রো. কিন্ডারমান বলেন, ‘‘কার্ডিয়াক ইনসাফিসিয়েন্সির সূচনার সময়ে রোগীরা সাধারণত শারীরিক চাপের মুখে শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা টের পান৷ আগে দিব্যি যে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা যেত, এখন সেই একই পথে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ সেইসঙ্গে ‘লেগ এডেমা', অর্থাৎ পায়ের নীচের অংশে পানি জমা হয়৷ কোনো কোনো রোগীর পেট বড় হয়ে যায়৷ সেখানেও পানি জমতে থাকে৷ এ সবই কার্ডিয়াক ইনসাফিসিয়েন্সির লক্ষণ৷''
কাটারিনা প্রথমদিকে এমন কোনো উপসর্গ লক্ষ্য করেন নি৷ তাই হাসপাতালে ভর্তি হবার সময়ে তাঁর হৃদযন্ত্র বেশ দুর্বল হয়ে গিয়েছিল৷ কারোলা হামার ডাক্তারের সহকারী৷ তাঁর বাড়তি এক প্রশিক্ষণও রয়েছে৷ কার্ডিয়াক ইনসাফিসিয়েন্সির রোগীরা তাঁর কাছে আসেন৷ কারণ এমন মানুষের নিয়মিত চেকআপের প্রয়োজন আছে৷ সেইসঙ্গে ওষুধ ও জীবনযাত্রায় পরিবর্তনও জরুরি৷ যথেষ্ট নড়াচড়া এবং খাবারের দিকেও নজর দিতে হয়৷ পানিভরা খাদ্য ও লবণের পরিমাণ কমানো উচিত৷ স্যাচুরেটেড ফ্যাটও হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো নয়৷
কারোলা হামার তাই রোগীদের ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন৷ সেইসঙ্গে বেশি করে শাকসবজিও খেতে বলেন৷ স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত খেলাধুলা এবং ধূমপান এড়িয়ে চলতে পারলে সাধারণত কার্ডিয়াক ইনসাফিসিয়েন্সি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে৷
ইয়ুয়ানা গুশি/এসবি