যন্ত্রণা আর ঘৃণা ভুলে সেবা
২৬ মার্চ ২০১৬১৯৭২ সালে ক্রন্দরত এক ভিয়েতনামী কিশোরীর ছবি সারা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল৷ ভিয়েতনামে যুক্তরাষ্ট্রের ছোঁড়া নাপাম বোমার নির্মম শিকার ছিল মেয়েটি৷ মেয়েটির বয়স তখন ৯ বছর৷ যুদ্ধের সময় প্রাণ বাঁচাতে তার পরিবার একটি প্যাগোডায় আশ্রয় নেয়৷ সেই প্যাগোডায়ও আঘাত হানে নাপাম বোমা৷ হঠাৎ মেয়েটি দেখল তার কাঁধে আগুন৷ সব মানুষ আতঙ্কে ছুটছে৷ মেয়েটিও কাঁদতে কাঁদতে ছুটতে শুরু করল৷ সেই ছবি পুলিৎজার পুরস্কারও জিতেছিল৷ কিম ফুক নামটি তখন থেকেই পরিচিত৷
কোথায় আছেন, কী করছেন এখন কিম ফুক? এই কৌতূহলই মিটিয়েছে রয়টার্স ফাউন্ডেশনের একটি সাক্ষাৎকার, যেখানে ফুক নিজেই জানিয়েছেন তাঁর বর্তমান জীবনের খুঁটিনাটি সব কথা৷ সেখানেই বেরিয়ে এসেছে এমন একটি তথ্য যা শুনে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন – নাপাম বোমায় শরীরের ৬৫ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল যাঁর, সেই কিম ফুক এখন যুদ্ধাহত সৈন্যদেরই সেবা করেন৷
১৯৭২ সালে নাপাম বোমায় গা ঝলসে যাবার পর ভিয়েতনাম থেকে কিউবায় চলে গিয়েছিলেন কিম ফুক৷ কিউবা থেকে পাড়ি জমান ক্যানাডায়৷ ক্যানাডার টরন্টোতেই ‘রেস্টোর হিরোজ' নামের একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের হয়ে যুদ্ধাহত সেনাদের সেবা করছেন ৫২ বছর বয়সি কিম ফুক৷
সমাজকর্মী স্বামী আর দুই সন্তান নিয়ে সুখেই আছেন কিম ফুক৷ স্বামী-সন্তানই অবশ্য সুখের একমাত্র উৎস নয়৷ বরং মূল উৎস ক্ষমা এবং সেবা৷ ফুক জানিয়েছেন, নাপাম বোমায় শরীর ঝলসে যাওয়ার পর দীর্ঘদিন এক ধরণের ক্ষোভ আর হতাশাকেই আঁকড়ে ধরে ছিলেন৷ প্রায়ই ভাবতেন, ‘‘আমার সঙ্গেই কেন এমন হলো? আমাকেই কেন এমন কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে? আমি তো সোজা-সরল বাচ্চা একটি মেয়ে, জীবনে এমন কোনো ভুল তো করিনি যার জন্য এমন শাস্তি পেতে হবে!''
এমন ভাবনা কষ্টই শুধু বাড়াতো৷ এক সময় খ্রিস্টান ধর্ম করে নাকি সেই কষ্ট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছেন কিম ফুক৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ঘৃণা আর তীব্র কষ্টানুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকার ওই সময়টায় বেশ কয়েকবার আমি মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছেছিলাম৷ যখন আমার দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের ক্ষমতা করতে শিখলাম তখন থেকে যেন আমার পৃথিবীতে স্বর্গ নেমে এসেছে৷ ''
এখন ‘রেস্টোর হিরোজ'-এর হয়ে যুদ্ধাহতদের সেবা করেন কিম ফুক৷ এক সময় ইউনেস্কোর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করা ফুক যুদ্ধের নির্মমতার শিকারদের সহায়তা করার জন্য একটা ফাউন্ডেশনও খুলেছেন৷ ফাউন্ডেশনটি মূলত যুদ্ধাহত বা যুদ্ধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করে৷
এসিবি/ডিজি (টমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)