1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাংস খেয়েই মানুষ হয়ে উঠেছে মানুষ

৭ ডিসেম্বর ২০২১

উন্নত মস্তিষ্কের কারণে মানুষ বাকি প্রাণীদের থেকে আলাদা৷ বিজ্ঞানীদের মতে, মাংস খাওয়া শুরু করে আদি মানুষ এমন বিস্ময়কর বিবর্তন সম্ভব করতে পেরেছে৷ আজকের যুগে প্রোটিনের বিকল্প উৎস অবশ্য মাংসের গুরুত্ব কিছুটা কমিয়ে দিচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/43xG4
ছবি: Federico Gambarini/dpa/picture alliance

মানুষেরও ডাইনোসরের মতো দশা হতে পারে৷ কিন্তু আমরা এখনো টিকে আছি৷ প্রশ্ন হলো, ডাইনোসরদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কী? আসলে সেই প্রাণীর তুলনায় আমাদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি উন্নত৷

বিবর্তন প্রক্রিয়ায় এটা বড় একটা সুবিধা বটে৷ কিন্তু তার একটা উচ্চ মূল্যও রয়েছে৷ জীবাশ্মবিদ হিসেবে ফিলিপ গুনৎস বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, শরীরের মধ্যে মস্তিষ্কের অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়৷ ফলে প্রজাতি হিসেবে এমন বড় মস্তিষ্ক সামলানোর সামর্থ্য থাকতে হবে৷ শরীরের মাত্র কয়েক শতাংশ দখল করলেও দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন ধরে মস্তিষ্ক আমাদের প্রায় ২৫ শতাংশ শক্তি শুষে নেয়৷’’

এমন শক্তি কোথা থেকে এলো? আমাদের মস্তিষ্ক কীভাবে আজকের অবস্থায় পৌঁছলো? জীবাশ্মবিদ হিসেবে ফিলিপ গুনৎস সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চান৷

মানুষের মস্তিষ্কের বিবর্তনের রহস্য উন্মোচন করতে আমাদের সবচেয়ে কাছের আত্মীয়, অর্থাৎ ‘গ্রেট এপ্স’ বলে পরিচিত বানরদের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে৷ তুলনা করলেই বোঝা যাবে, এই বানর নিরামিষ খায়৷ আমাদের পূর্বপুরুষরাও প্রথমদিকে নিরামিষাশী ছিল৷

প্রায় ৩০ লাখ বছর আগে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসে৷ লুসি নামের প্রথম যুগের মানুষ ঘনঘন না হলেও মাংস খেতে শুরু করে৷ বিশেষ খাঁজযুক্ত প্রাণীর হাড় থেকে সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে৷ পাথরের হাতিয়ার দিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা হাড় থেকে মাংস আলাদা করতো৷

তারপর ৩৫ লাখ বছর আগে মাংস খাবার প্রবণতা দ্রুত বেড়ে যায়৷ গুনৎস বলেন, ‘‘পরে মানুষ ধীরে ধীরে শিকার করতে শুরু করে বলে আমাদের বিশ্বাস৷ দলবদ্ধভাবে শিকার করে সাফল্য ও দক্ষতা আরও বেড়ে যায়৷ ফলে মানুষ আরো মাংস খাবার সুযোগ পায়৷ ফলে বাড়তি শক্তি উদ্বৃত্ত হতে থাকে৷ সে কারণে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্ক আরো বড় হয়ে ওঠে৷ অর্থাৎ এই বিবর্তন নিজস্ব ছন্দেই ঘটেছে এবং অবশেষে আমাদের শরীরের আকারের তুলনায় মস্তিষ্ক অত্যন্ত বড় হয়ে উঠেছে৷’’

শিকারের পদ্ধতি, কৌশল ও হাতিয়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়িয়ে মানুষ আরও উন্নত শিকারি হয়ে উঠেছিল৷ শিকার করে পাওয়া মাংসের সঙ্গে আমাদের মস্তিষ্কের আকারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে৷

একটি তত্ত্ব অনুযায়ী কাঁচা শাকসবজি খাবার হজমের জন্য আমাদের পূর্বপুরুষদের পাচনতন্ত্র খুব বড় ছিল৷ সেই প্রক্রিয়ায়ও অনেক শক্তির প্রয়োজন হতো৷ মাংস খেয়ে তারা সে তুলনায় অনেক সহজে অনেক বেশি শক্তি পেতো৷ পাচনতন্ত্র ধীরে ধীরে ছোট হতে লাগলো৷ ফলে উদ্বৃত্ত শক্তি মস্তিষ্কের বিবর্তন প্রক্রিয়া আরও তরান্বিত করলো৷ এভাবে আমাদের মস্তিষ্কের বিবর্তনের ক্ষেত্রে মাংস গুরুত্বপূর্ণ উৎস হয়ে উঠলো৷

তবে মাংসের ফ্যাট না প্রোটিন – ঠিক কোন উৎস থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই শক্তি এসেছিল, আজ তা বোঝা প্রায় অসম্ভব বলা চলে৷ ফিলিপ গুনৎস মনে করেন, ‘‘প্রোটিনই আজ আমাদের মস্তিষ্কের আকার এত বড় করে তুলেছে৷ বিশাল এই মস্তিষ্কের বিবর্তনের জন্য মূলত মাংস, বিশেষ করে প্রোটিন ও ফ্যাট থেকে আমাদের বাড়তি শক্তির প্রয়োজন হয়৷’’

আমাদের বিবর্তনের ক্ষেত্রে মাংস ছিল অপরিহার্য৷ তবে ৩০ লাখ বছর আগের তুলনায় আজ আমাদের হাতে আরও উচ্চ মানের ফলমূল, তরিতরকারি ও শস্য এসে গেছে৷ ফলে আমাদের মস্তিষ্কের সম্ভবত আর মাংস থেকে শক্তির প্রয়োজন নেই৷

ইয়েন্স হানে/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান