1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানবজাতির মাংস খাওয়ার ইতিবৃত্ত

৮ মার্চ ২০১৯

খাদ্য হিসেবে মাংসের দোষগুণ নিয়ে নানা মুনির নানা মত৷ জার্মানি তথা ইউরোপে মাংস খাবার প্রবণতা যুগে যুগে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলেছে৷ ইতিহাসের অনেক ঘটনাও খাদ্যগ্রহণের উপর প্রভাব রেখেছে৷

https://p.dw.com/p/3EbjM
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/A. Jagel

আমাদের আদি পূর্বপুরুষরা বহুকাল নিয়মিত মাংস খেতেন না৷ বড়জোর কুড়িয়ে পাওয়া মাংস খাওয়ার প্রবণতা ছিল৷ প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে শিকার ও মাংস কাটার সরঞ্জাম মানুষের হাতে আসায় পরিস্থিতি বদলে গেল৷

তার পরেও বহুকাল ধরে মানুষ অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণ মাংস খেত৷ তৃতীয় খ্রিষ্টাব্দের সময়ে মানুষ সারা বছরে মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ কিলোগ্রাম মাংস খেত বলে জানা গেছে৷

ধীরে ধীরে মানুষ এমন এক পশু খুঁজে পেল, যার শরীরে অনেক মাংস রয়েছে৷ শূকর পালন করাও অনেক সহজ, তাদের উচ্ছিষ্ট খাবার খাওয়ালেই চলে৷ শূকর কার্যত নিজেরাই নিজেদের খাদ্য সংগ্রহ করে৷ প্রয়োজনে তাদের ধরে জবাই করলেই হলো৷ ফলে মধ্যযুগের সূচনার সময় পর্যন্ত মাংসের চাহিদা প্রায় ৫ গুণ বেড়ে গেল৷

প্রথম খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে পৃথিবীর জনসংখ্যাও দ্রুত বাড়তে শুরু করে৷ খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিকাজের প্রসার ঘটে৷ মধ্যযুগের তুঙ্গে, অর্থাৎ একাদশ শতাব্দীতে মানুষ বছরে মাথাপিছু ৪০ কিলোগ্রাম মাংস খেতো৷

তারপর প্লেগ এসে গোটা মহাদেশের জনসংখ্যা এক ধাক্কায় কমিয়ে দিলো৷ সে যাত্রায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল৷ তার জের ধরে গবাদি পশু প্রজননের প্রবণতা এবং খাদ্য হিসেবে মাংসের প্রচলন বাড়তে লাগলো৷

তারপর পঞ্চদশ শতাব্দীতে আধুনিক যুগের সূচনায় জার্মানির মানুষ বছরে মাথাপিছু ১১০ কিলোগ্রাম মাংস খেতে শুরু করে৷ খাদ্য নিরাপত্তার ফলে জনসংখ্যাও দ্রুত বাড়তে থাকে৷ মাত্র তিনশো বছরের মধ্যে জনসংখ্যা প্রায় তিন গুণ বেড়ে যায়৷

তারপর মাংস খাবার প্রবণতা আবার কমে যায়৷ স্বল্প পর্যায়ের তুষার যুগে এমনকি গ্রীষ্মকালেও শস্য জমাট রাখা সম্ভব হওয়ার ফলেও এমনটা দেখা গিয়েছিল৷

ঊনবিংশ শতাব্দীর সূচনায় বছরে মাথাপিছু ১৪ কিলোগ্রামের বেশি মাংস খাওয়া সম্ভব ছিল না৷ তখন পশুর গোটা দেহ কাজে লাগানো হতো৷ জবাইয়ের পর যা খাওয়া সম্ভব হতো না, তা শুকিয়ে অথবা স্মোক করে রাখা হতো৷

তারপর শিল্পায়ন ও কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ শুরু হলো৷ রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থার কল্যাণে বিদেশ থেকে মাংস আমদানি করে মজুত রাখাও সম্ভব হলো৷

দুই বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল বাদ দিলে সার্বিকভাবে মাংস খাওয়ার প্রবণতা আবার বাড়তে শুরু করে৷ জার্মানির অর্থনৈতিক বিস্ময়ের যুগে মাথাপিছু মাংসের পরিমাণ প্রায় ৫০ কিলোগ্রাম ছুঁয়েছিল৷

পশুখামারেও স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু হলো সেইসঙ্গে তার জের ধরে ফ্যাক্টরি ফার্মিং৷ ফলে বেশ সস্তায় বিশাল পরিমাণ মাংস কেনা সম্ভব হলো৷

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে জার্মানিতে কারি সসেজ ও হ্যামবার্গার খুব জনপ্রিয় হয়ে পড়ে৷ অন্যদিকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেও আন্দোলন শুরু হয়৷ প্রতিবাদী মানুষ বিকল্প ধারার জীবনযাত্রা ও খাদ্যগ্রহণের প্রতি আকৃষ্ট হয়৷ তবে মাংস খাবার প্রবণতার উপর তার প্রভাব পড়ে নি৷ এমনকি রোগের প্রসার ও মাংস নিয়ে অসংখ্য কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও জার্মানির মানুষ মাংস খাওয়া ছাড়েন নি৷ আজকের পরিস্থিতি কী?

জার্মানিতে প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ অত্যন্ত কম অথবা আদো মাংস খান না৷ জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ কট্টর নিরামিষাশী৷ তা সত্ত্বেও বহু বছর ধরে জার্মানিতে বছরে মাথাপিছু ৬০ কিলোগ্রাম মাংস খাবার প্রবণতা চলে আসছে৷

লেনা গানশো/এসবি