1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বৈরুতে সমকামী জীবনযাপন: স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অভাব

২৬ নভেম্বর ২০২১

গত গ্রীষ্মে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দিয়েছিল বৈরুতের স্বাভাবিক জীবনযাপন৷ এরপর সবার সাথে সাথে সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনেও নানা পরিবর্তন এসেছে৷

https://p.dw.com/p/43Wz9
গত গ্রীষ্মে একটি ভয়াবহ বিস্ফোরণ কাঁপিয়ে দিয়েছিল বৈরুতের স্বাভাবিক জীবনযাপন৷ এরপর সবার সাথে সাথে সমকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনেও নানা পরিবর্তন এসেছে ৷
ছবি: Getty Images/I.Chalhoub

আগস্ট মাসের সেই বিস্ফোরণ ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল লেবাননের ‘হেলেম’ কার্যালয়, যদিও সেই সংস্থার কর্মীরা অক্ষত ছিলেন৷ হেলেম নিজেদের ‘আরব বিশ্বের প্রথম এলজিবিটিকিউআইএ বা তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীদের অধিকার বিষয়ক প্রথম সংগঠন’ বলে দাবি করে৷

হেলেম এর পরিচালক তারেক জেইদান বলেন, ‘‘ভাগ্যিস আমরা কেউ আহত হইনি৷ আমাদের অফিস পুরো নষ্ট হয়ে যায়৷ আমরা আমাদের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, ফাইল হারিয়ে ফেলি৷ শুধু তাই নয়, বৈরুতের ভিন্ন লিঙ্গ পরিচয়ের মানুষের কাছে এটা একটা নিরাপদ স্থান ছিল৷ সেটা নষ্ট হয়ে গেলো৷’’

কিন্তু এর ঠিক ১৫ মাস পরেই হেলেম তার অফিস ফিরে পায়৷

সবার জন্য নিরাপদ পাড়া

হেলেমের অফিসের ঠিক পাশেই মার মিখায়েল ও গেমমায়জেহ পাড়া দু'টি, যেখানে বিস্ফোরণ ঘটে৷ এই পাড়া দু'টি বৈরুতের সব জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ, পানশালা, ক্যাফেতে সাজানো ছিল৷ এই পাড়াগুলিতে অন্যান্য পাড়ার তুলনায় বাসার ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে কিছুটা নিরাপদও ছিল৷ ফলে, যেসব তৃতীয় লিঙ্গের বা সমকামী মানুষ রীতিমত সচ্ছল, তারাই সেখানে থাকতে পারতেন৷

বিস্ফোরণের ফলে সেই চিত্রেও পরিবর্তন এসেছে৷

জেইদানের মতে, এই সচ্ছল পাড়া ছাড়াও বিস্ফোরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শহরের অন্যান্য অঞ্চলে থাকা সমকামী জনতাও৷ যাদের বাসা এক সময় এত অভিজাত পাড়ায় না থাকলেও অন্তত মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল, সেই সব বাসা ভেঙে পড়ায় তারা এখন গৃহহীন৷ অনেকে বাধ্য হয়েছেন স্বাধীন জীবনযাপন ছেড়ে আবার নিজের পরিবারের সাথে থাকতে৷ জেইদানের মতে, ‘‘অনেকে পরিবারের বা পাড়ার মানুষের কাছ থেকে পাওয়া নানা ধরনের নিপীড়ন, অত্যাচার, সহিংস আচরণ ও মানসিক চাপ থেকে পালাতেই ঘর ছেড়েছিলেন৷’’

মানা জুমানার অবস্থা অনেকটা এমনই৷ বিস্ফোরণের সময় এই সমকামী নারী (নাম পরিবর্তিত) রাতে নিজের বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন৷ এখনও সেই দিনের বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি চোখে অন্ধকার দেখেন৷ বিস্ফোরণের ফলে নিজের বাসা ও চাকরি হারিয়ে ফেলেন মানা জুমানা৷ আর্থিক স্বাধীনতা হারিয়ে আবার নিজের বাসায়, পরিবারের কাছে ফেরত আসেন তিনি৷ তিন বছর আগে, পরিবারের সাথে মতের মিল না হবার কারণেই ঘর ছেড়েছিলেন তিনি৷

তবে আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেক ভালো হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান তিনি৷ বিস্ফোরণের পর থেকে তার জীবনযাপনের প্রতি সহনশীল হয়েছেন জুমানার মা ও বোন৷ কিন্তু এমন সৌভাগ্য হয়নি বৈরুতের সকল ভিন্ন লিঙ্গ ও যৌন পছন্দের মানুষের৷

মানসিক আঘাতের ছাপ

বৈরুতের বিস্ফোরণ এই গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে একটা অংশকে বাধ্য করেছে শহর বা দেশ ছাড়তেও৷ জেইদান এবিষয়ে বলেন, ‘‘সেখানে গিয়েও তারা শান্তিতে থাকতে পারেন না কারণ সেই সমাজেও তাদের অত্যাচারের শিকার হতে হয়৷’’

অনেকে বিস্ফোরণের পর শহরের সাথে নিজের পুরানো সম্পর্কও হারিয়ে ফেলেছেন৷ আবি হায়দার মার মিখায়েল পাড়ায় নিয়মিত যাতায়াত করলেও বিস্ফোরণের পর থেকে সেই পাড়ার আর পুরোনো মেজাজ অনুভব করতে পারেন না তিনি৷ শুধু তাই নয়, এক সময় যে সব বন্ধুদের সাথে মিলে ঘুরে বেড়াতেন হায়দার, সেই বন্ধুরাও দেশান্তরী হয়েছে৷

ফলে, মার মিখায়েলের আগের জৌলুস আর নেই বলেই তার মত৷ তিনি বলেন, ‘‘আগের মতো টান অনুভব করিনা৷ যে পাড়ার হাত ধরে এত সম্পর্ক হয়েছে, এত মানুষকে পেয়েছি, সেই পাড়াকে নতুন করে দাঁড় করানো সহজ নয়৷ বিশেষ করে এখন সমাজ যতটা ভঙ্গুর, তাতে তো এটা আরোই অসম্ভব৷’’

হেলেম সংস্থার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী শহরের মোট সমকামী জনগণের ৮০ শতাংশই বর্তমানে বেকারত্বের সাথে লড়ছে৷ পাশাপাশি, এই গোষ্ঠীর মানুষের পক্ষে দেশের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার সুবিধা নেওয়াও সহজ নয়৷

বিস্ফোরণ পরবর্তী বাস্তবতা, করোনা অতিমারি, অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও সামাজিক অচলাবস্থা - এই সব মিলেই প্রশ্নের মুখে লেবানেনর রাজধানীর বাসিন্দা সমকামী ও ভিন্ন লিঙ্গ পরিচিতির মানুষদের৷

হায়দার তবুও স্বপ্ন দেখেন একদিন বিয়ে করে সংসার সাজানোর৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি জানি লেবাননে আমার জন্য কোনো স্থান নেই৷ আমি জানি আমাকে ভালো থাকতে হলে অন্য কোথাও যেতে হবে৷’’

রামি আল আমিন/এসএস

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান