1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা

১৫ নভেম্বর ২০২৩

বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল৷

https://p.dw.com/p/4Yodw
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ছবি: Mortuza Rashed/DW

নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপির ডাকা পঞ্চম দফা অবরোধের প্রথম দিনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিইসি৷ সকাল ১০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম৷

তিনি বলেন, ‘‘আজ বিকাল ৫টায় বর্তমান কমিশনের ২৬তম সভা অনুষ্ঠিত হবে৷ সেই সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করা হবে৷ সেই চূড়ান্ত তফসিল অনুযায়ী সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সরাসরি ভাষণ প্রদান করবেন এবং সেই ভাষণেই তিনি সমগ্র দেশবাসীকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল জানিয়ে দেবেন৷’’

নিরাপত্তা ইস্যুতে জানতে চাইলে ইসি সচিব বলেন, ‘‘আমি গতকালও বলেছি, আজকেও বলছি, এই বিষয়টি দেখবে আসলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী৷ আমরা তাদের কাছে অনুরোধ রেখেছি৷ তারা কী স্ট্র্যাটেজি নিয়েছে সেটা তারা বলতে পারবেন৷’’

নির্বাচনি পরিবেশ নিয়ে ইসির অবস্থান জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আমরা বিব্রত হই... আমরা বারবারই বলছি যে নির্বাচন কমিশন মনে করে, নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করার মতো পরিবেশ আছে৷’’

বিএনপিকে কারাগারে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচন?

সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো৷ বুধবার সকাল থেকে শুরু হয়েছে পঞ্চম দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন৷ এমন রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মানতে তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম সংসদ অধিবেশন বসে৷ সাংবিধানিক নিয়ম অনুসারে, এর আগের ৯০ দিনের মধ্যে ভোটের আয়োজন করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে৷

সেই হিসেবে গত ১ নভেম্বর থেকে নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে৷ ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতার কথা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন সিইসি৷ আর চলতি বছরের ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা আগে থেকেই বলে আসছিল আউয়াল কমিশন৷

২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেয় কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন৷ বর্তমান কমিশনে সিইসির সঙ্গে আছেন আরো চার কমিশনার৷ তারা হলেন: আহসান হাবিব খান, রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর ও মো. আনিছুর রহমান৷

Bangladesch Dhaka | Bürgergespräch für faire Wahlen
২০২২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন কাজী হাবিবুল আউয়াল৷ছবি: bdnews24

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাতে পারেন সিইসি৷

সংলাপের হাওয়া

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ব্যর্থ হওয়ার পর দেশজুড়ে আবারও শুরু হয়েছে সহিংসতা৷ ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত অন্তত শ খানেক বাস পোড়ানোর খবর পাওয়া গেছে৷ বুধবার সকালেও বাস পোড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেই শর্তহীন সংলাপের প্রস্তাব নিয়ে বেশ সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সংসদের বাইরে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে চিঠি দিয়েছেন৷

যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতাকে ‘ইতিবাচক' হিসেবে দেখছে সরকার৷ অন্তত তেমন ইঙ্গিত মিলেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কথায়৷ তিনি বলেছেন, "আমাদের বন্ধু দেশ যদি আমাদের কোনো সাজেশন দেয়, উই টেইক ইট সিরিয়াসলি৷ আমরা সেটা পর্যালোচনা করি৷ যদি মনে হয় যে এটা দেশের মঙ্গলের জন্য, উই একসেপ্ট ইট৷''

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘‘আমাদের সংলাপে আপত্তি নেই৷ আমরা গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাই না৷ গণতন্ত্র সমুন্নত করতে যা যা করা দরকার, তা আমরা করব৷ সেখানে যদি সংলাপের প্রয়োজন হয়, আমরা সেটা করব৷ কিন্তু কার সঙ্গে করব, সেটা বিবেচনার বিষয় আছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷''

সমাবেশ ও নির্বাচন ঘিরে কার কী আশঙ্কা?

তবে শেষপর্যন্ত যদি সংলাপের সূচনা ঘটে, সেক্ষেত্রে তফসিল কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে কিনা, তা নিয়েও নানা ভাবনা আছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷ কিন্তু ইতিহাস বলছে, পুনঃতফসিল নতুন কিছু নয়৷

নির্বাচনে পুনঃতফসিল

তফসিল ঘোষণা হলেই যে সেটা আর পরিবর্তন করা যাবে না, তেমন কোনো ধরা বাধা রীতি নেই৷ পরিস্থিতির প্রয়োজনে পুনঃতফসিলের রীতি বাংলাদেশের নির্বাচনি ইতিহাসে নতুন কিছু নয়৷

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল৷ কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভোটের দিন চূড়ান্ত করে তফসিল ঘোষণা করেছিলেন৷ কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনঃতফসিলের মধ্য দিয়ে ভোট সাত দিন পিছিয়ে দেয় হুদা কমিশন৷ ২৩ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৩০ ডিসেম্বর৷

২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর দশম জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন৷ ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াত জোটের আন্দোলনের মধ্যেই কম সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ ওইবার তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণ হারায় শতাধিক মানুষ৷ তবে ঘোষিত তফসিল থেকে সরে আসেনি তৎকালিন কমিশন৷

২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি নবম সংসদ নির্বাচনের ভোটের তারিখ ঘোষণা করে এম এ আজিজের নেতৃত্বাধীন কমিশন৷ কিন্তু ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারির পর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে৷ এরপর, ২১ জানুয়ারি ইসির তৎকালিন জনসংযোগ কর্মকর্তা এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সেই ভোটের সব কার্যক্রম বাতিল করে৷ ৩১ জানুয়ারি বিদায় নিতে হয় পুরো কমিশনকে৷

অন্যদিকে, ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন ওই সময়ের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. শামসুল হুদা৷ পরে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এ তফসিলে চারবার পরিবর্তন আনা হয়৷ শেষ পর্যন্ত ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।