1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চার ছেলে হারানো মায়ের ক্ষোভ

২৪ আগস্ট ২০১৮

ফিলিপাইন্সে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ক্লারিটা আলিয়ার চার ছেলে৷ রদ্রিগো দুতার্তে যতদিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন, ততদিন আরো অনেক মা-কে তাঁদের সন্তানদের কবর দিতে হবে বলে মনে করেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/33idb
ছবি: DW/Ana P. Santos

‘‘আমার সঙ্গে যা করলে তার জন্য তোমাকে অনুতাপ করতে হবে৷ আমি তোমার সন্তানদের এক এক করে মেরে ফেলব,'' ক্ষোভের সঙ্গে আলিয়াকে বলেন পুলিশ কর্মকর্তা৷ তাঁর কথা মতো আলিয়ার ছেলেরা একের পর এক মারা পড়ল৷

প্রথমে হত্যা করা হয় রিচার্ডকে (১৮)৷ অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করলেও বেঁচে যান তিনি৷ কয়েক মাসের মাথায় তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ওই বছরই পাশের এলাকায় একটি ক্যান্টিনে খাওয়ার সময় কুপিয়ে হত্যা করা হয় ১৬ বছরের ক্রিস্টোফারকে৷ পরে ১৫ বছরের ববি এবং তারপর ১৪ বছরের ফের্নান্দোকে হত্যা করা হয়৷

ওই ঘটনা স্মরণ করে আলিয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রিচার্ড ও ক্রিস্টোফারকে মারতে তারা যে ছোরা ব্যবহার করেছিল, সেগুলো কসাইখানায় ব্যবহার করা হয়৷ মানুষ হত্যায় তারা যে ছোরা ব্যবহার করেছিল, সেরকম ছোরা ব্যবহৃত হয় শুয়োর মারতে৷'' 

ফিলিপাইন্সের মিন্দানা দ্বীপের দাবাউয়ের শহরতলিতে নিজের কুঁড়েঘরে বসে কথা বলছিলেন তিনি৷

২০০১ সালের জুলাই থেকে ২০০৭ সালের এপ্রিলের মধ্যে অজ্ঞাত মুখোশধারীদের হাতে খুন হন আলিয়ার চার ছেলে৷

স্বভাবসুলভ শাসানির সুরে গত জুলাইয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রেসিডেন্ট দুতার্তে অবৈধ মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর প্রশাসনের প্রাণঘাতী অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন৷তিনি বলেন, ‘‘এটা বিরামহীন এবং আরো কঠোর হবে৷''

দুই বছর আগের এই দিনেই মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি৷

‘দাবাই ফর্মুলা'

তবে আলিয়ার (৬৪) সন্তানদের জন্য মরণ এসেছিল দুতার্তে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অনেক আগে৷

২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে দাবাউ শহরের মেয়র ছিলেন দুতার্তে৷ দুই দশকের বেশি সময় ওই পদে থেকে কঠোর ভাষী ও শক্ত শাসক হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে তোলেন তিনি৷ আর এর মধ্য দিয়ে অপরাধপ্রবণ একটি শহরকে সুসজ্জিত মহানগর এবং দেশের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলেন৷

তবে এর জন্য যে মূল্য দিতে হয়েছিল, তা ছিল অনেক বেশি৷ কিলিং স্কোয়াড সশস্ত্র গ্রুপ যারা বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা করত৷ দাবাউয়ের রাস্তায় ঘুরে ঘুরে তারা সন্দেহভাজন ছোট অপরাধী ও মাদকসেবীদের মেরে ফেলত৷

দাবাউ ডেথ স্কোয়াড হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তারা৷ চরমপন্থা থেকে সরে আসা ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছিল এই গ্রুপ৷ দুতার্তের অধীনে থেকে তারা নিজেদের মতো করে ‘বিচার ব্যবস্থার' প্রচলন করেছিলেন৷

২০০৯ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, দুতার্তে মেয়র থাকাকালে দাবাউয়ে ‘টার্গেট' করে হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়েছিল৷ ১৯৯৮ সালে যেখানে এ ধরনের ঘটনায় দুজন নিহত হন, সেখানে ২০০৮ সালে মারা পড়েন ১২৪ জন৷ আর শুধু ২০০৯ সালের জানুয়ারিতেই ৩৩ জনকে হত্যা করা হয়৷

দাবাউয়ে কিলিং স্কোয়াডের হত্যাকাণ্ডের বিচার-বিশ্লেষণও করেছে এইচআরডাব্লিউ: জোড় বেঁধে নম্বরবিহীন মোটরসাইকেলে এসে দিনের বেলায় সবার সামনে ‘টার্গেট করা' ব্যক্তিকে গুলি করত তারা৷

এভাবে যারা মারা পড়তেন তাদের আগেই সাবধান করে দেওয়া হতো৷ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত না হলে যাদের হত্যা করা হবে, তাদের তালিকায় নাম ঢুকে গেছে বলে ওই ব্যক্তিদের জানাতেন পুলিশ কর্মকর্তা ও গ্রাম্য কর্মকর্তারা৷

এই হত্যাকাণ্ডের শিকারদের অধিকাংশই ছিলেন শহরের দরিদ্র পরিবারের তরুণ৷

সব ক্ষেত্রেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর পুলিশ আসত৷ মামলা খুব একটা হতো না আর হলেও কাউকে জবাবদিহি করতে হতো না৷

ওই হত্যাকাণ্ডের ধরন অনেকটাই এখনকার মাদকবিরোধী অভিযানের মতো ছিল৷ 

ডয়চে ভেলেকে দেওয়ার এক সাক্ষাৎকারে দেশে মাদক নির্মূলে দুতার্তের ‘দাবাউ ফর্মুলা' প্রয়োগের সমালোচনা করেন সিনেটর আন্তোনিও ত্রিল্যানেস৷

দুতার্তে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন৷

‘আরো অনেকে মারা পড়বে'

ছেলে রিচার্ডকে ধরতে যখন বাড়িতে পুলিশ এসেছিল, তখন খুব সাহসী ভূমিকা নিয়েছিলেন আলিয়া৷ ধর্ষণের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করতে এসেছিল পুলিশ৷ সেই সময় পুলিশের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখতে চেয়েছিলেন আলিয়া৷পুলিশ তা দেখাতে না পারায় ছেলেকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকার করেন তিনি৷

‘‘ওই সময় সেখানে অনেক মানুষ ছিল৷ সবার সামনে আমি চেচামেচি করায় ওই পুলিশ কর্মকর্তা অপমানিত বোধ করেছিল বলে আমার মনে হয়,'' সেদিনের ঘটনা স্মরণ করে বলেন আলিয়া৷

তখনকার ঘটনা সব ডায়েরিতে লিখে রেখেছেন আলিয়া৷ ছেলেদের ছবিসহ তাদের প্রত্যেককে হত্যায় কারা জড়িত ছিল, তাদেরও নাম লিখে রেখেছেন তিনি৷

২০১৬ সালে যখন দুতার্তে প্রেসিডেন্ট হন, সে খবর শুনে ভয়ে কুকড়ে গিয়েছিলেন আলিয়া৷ আরো অনেক মা তাঁদের সন্তান হারাবেন–এই শঙ্কা পেয়ে বসেছিল তাঁকে৷

প্রথম সন্তান হারানোর পর ১৭ বছর কাটলেও এখনো ক্ষোভের আগুন রয়েছে এই মায়ের মনে৷

‘‘দুতার্তে একটা শয়তান৷ সবার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী৷ সে টিভিতে কী বলেছে শুধু সেটাই শুনুন–‘তোমাদের ছেলে-মেয়েদের ঠিক কর, তা না হলে তাদেরও হত্যা করা হবে৷''

প্রতিবেদন: অ্যানা পি. সান্তোস/এএইচ