1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

থামছে না বোমা, বিরোধীরা দুষছেন পুলিশমন্ত্রী মমতাকে

৭ জুন ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গে সমানে বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। সরকার বলছে, পুলিশ কম বলে বোমা উদ্ধার কম হচ্ছে।

https://p.dw.com/p/4SHpk
বাসন্তীতে বোমা বিস্ফোরণের পরের ছবি।
বাসন্তীতে বোমা বিস্ফোরণের পরের ছবি। ছবি: Subrata Goswami/DW

বিরোধী দলের নেতারা প্রশ্ন তুলছেন পুলিশ মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা নিয়ে৷ বোমার মতো বিষয় নিয়ে কতিপয় তৃণমূল নেতার মন্তব্য- পঞ্চায়েতে  ‘পটকা' ফাটতেই পারে!

পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে যে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামগঞ্জে প্রচুর বোমা মজুত করে রাখা আছে তা একের পর এক বিস্ফোরণ এবং বিভিন্ন জেলা থেকে বোমা উদ্ধারের ঘটনা থেকেই স্পষ্ট। সোমবারও বৈষ্ণবনগর থেকে ১৩টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। চাপড়ায় ড্রামভর্তি বোমা পাওয়া গেছে। মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে দুই ব্যাগ ভর্তি বোমা উদ্ধার হয়েছে।

 একদিন আগেই শৌচাগারে বোমা বিস্ফোরণে এক বালকের মৃত্যু হয়েছে। এরপর যে প্রশ্নটা উঠছে, এবারও কি পঞ্চায়েত নির্বাচন রক্তাক্ত ও সহিংস হতে চলেছে? ১১ মাস পর যে লোকসভা নির্বাচন হবে, সেখানেও কি সহিংসতার ছায়া দীর্ঘ হচ্ছে?

আর এই বোমা-কাণ্ড নিয়ে রাজ্য সরকার ও তৃণমূল নেতারা যা বলছেন, তা নিয়ে আরো বেশি করে প্রশ্ন উঠছে।

মন্ত্রী যা বলেছেন

বোমা উদ্ধার প্রসঙ্গে পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ''নতুন থানা তৈরি হয়েছে। অথচ, পুলিশ কর্মী কম। শোভনদেব বলেছেন, ''অনেক থানা হয়েছে। আমি ৫০ লোকের হাসপাতাল করেছি। কিন্তু একশটা বেড করে দিলাম। হওয়ার কথা ৫০ বেড। তখন যে সমস্যা হয়, এখানেও তাই হয়েছে।''

মন্ত্রী জানিয়েছেন, ''মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তিনি চান পুলিশে নিয়োগ হোক। কেন দেরি হচ্ছে সেই প্রশ্নও তিনি তুলেছেন।'' শোভনদেবের আশা, ''এবার দ্রুত পুলিশে নিয়োগ হয়ে যাবে। তখন সমস্যাও মিটে যাবে।''

মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''তিনি বরং পুলিশমন্ত্রীকে বলুন, তিনি ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না। ফেল করেছেন।'' আর রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''পুলিশ তো কোনো দুষ্কৃতীকে ধরার ক্ষমতাই রাখে না। সব দুষ্কৃতী তো তৃণমূলে।''

তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য

তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র বলেছেন, ''রাজ্যে ২৯৪টা বিধানসভা আসন আছে। এক লাখের বেশি পঞ্চায়েত আছে। তাতে দুই-চারটা পটকা, বাজি ফাটবে না? এটা হয় নাকি?''

আবার অর্জুন সিংয়ের মতে, ''এত রোদ উঠেছে, গরম পড়েছে বলে বোমা ফাটছে। আর বাংলায় কবে বোমা ছিল না? সিপিএমের সময় ছিল। তৃণমূলের সময়ও আছে। বোমা হলো সবচেয়ে সস্তার অস্ত্র। পুলিশ সক্রিয় হলে বোমা উদ্ধার হবে।''

তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের ব্যাখ্যা, ''খুব বেশি গরম পড়েছে। এই গরমে পটাশিয়াম ক্লোরেট ও আর্সেনিক ট্রাইসাপফায়েড বাইরে রাখলে বিস্ফোরণ হতেই পারে।''

বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''পশ্চিমবঙ্গ বারুদের স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে। আমরা রোজ বগটুই, এগরা, ক্যানিং, বাসন্তী দেখছি। মুর্শিদাবাদের আমবাগান থেকে, ভাঙড়ের তৃণমূল নেতাদের বাড়ি থেকে বোমা পাওয়া গেছে। মুখ্যমন্ত্রী আর কিছু করতে পারেননি, কেবল চপ শিল্প ও বোমা শিল্প করতে পেরেছেন।''

বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ''সারা বছর শয়ে শয়ে মানুষ বোমা বিস্ফোরণে মারা যাচ্ছেন, তার জন্য কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করবেন? তার পদাগ করা উচিত। তিনি করবেন না। কারণ, তিনি ক্ষমতা ছাড়া বাঁচতে পারবেন না।''

তৃমমূল সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ''তৃণমূল বোমা, গুলির উপর ভরসা করে রাজনীতি করছে না। এটা বিরোধীরা করতে চান। কারণ, তারা জনবিচ্ছিন্ন।''

কেন এই হাল?

সাংবাদিক আশিস গুপ্ত মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে এখন রাজনৈতিক লড়াই তীব্র হয়েছে। যত তীব্র হবে, ততই রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়বে। ডয়চে ভেলেকে আশিস বলেছেন,  ''পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস আছে। ৭১-৭২-এর রাজনৈতিক সহিংসতা, বাম আমলে পরের দিকে রাজনৈতিক সহিংসতা এবং এখন তৃণমূলের সময়ের সহিংসতা সবই আমাদের সামনে আছে।'' তার মতে, ''এই সহিংসতা কখনো বাড়ে, কখনো কমে। এখন বেড়েছে। কারণ, বিজেপি যেভাবে হোক পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। বামেরা বিধানসভায় আসন না পেলেও এখনো একটা রাজনৈতিক শক্তি। কংগ্রেসও কিছু এলাকায় ভাল লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। তৃণমূল জিততে মরিয়া। ফলে পঞ্চায়েতে সহিংসতা বাড়তেই পারে। তার দায় শাসক দলকেই প্রধাণত নিতে হবে।''

জিএইচ/এসিবি (পিটিআই, এবিপি আনন্দ, টিভি৯)