1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংখ্যালঘুদের ওপর হামলায় গ্রেপ্তার ২৮

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ জানুয়ারি ২০১৯

ফরিদপুরের সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলায় নির্বাচন পরবতী সহিংসতায় অনেকেই এলাকা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন৷ ওই এলাকায় সংখ্যালঘু হিন্দুদের টার্গেট করে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷

https://p.dw.com/p/3B0ga
Bangladesch Hindus Überfall Jessore
ফাইল ফটোছবি: DW

অর্ধশতেরও বেশি বাড়ি-ঘরে হামলার অভিযোগ পাওয় গেলেও পুলিশ মামলা নিয়েছে ৭টি৷ আর হামলাকারীদের কয়েকজনকে আটক করা হলেও অধিকাংশই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে৷

ফরিদপুর-৪  আসনটি ভাঙ্গা, সদপুরের একাংশ এবং চর ভদ্রাসন নিয়ে গঠিত৷ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী৷তিনি ২০১৪ সালেও স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের কাজী জাফর উল্যাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে হেরে যান৷ নিক্সন স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও তিনি আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক পর্যায়ের এক নেতার ভাগ্নে৷ কাজী জাফর উল্যাহ ২০১৪ সালেও নৌকা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন৷

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন রাতেই হামলা শুরু হয়৷ এরপর সোমবার ও মঙ্গলবার হামলা অব্যাহত থাকে৷ সংখ্যালঘু হিন্দুদের কমপক্ষে ৩০টি বাড়ি-ঘরে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ হামলার পর অনেকেই ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন৷ ওইসব এলাকায় পুলিশ টহল বাড়ানো হয়েছে৷ রবিবার রাতে হামলার পর কয়েকটি এলাকায় সেনাসদস্যরাও টহল দেন বলে জানা গেছে৷

গোপাল মন্ডল

মঙ্গলবার নৌকা প্রতীকের কাজী জাফর উল্যাহ এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন, ‘‘নির্বাচনের দিন রাতে ও পরদিন ভাঙ্গায় অন্তত ৮৬টি জায়গায় হামলা হয়েছে৷ বাড়িঘর দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে৷ আমরা এ ব্যাপারে থানায় ৪৮টি অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু পুলিশ মাত্র ৭টি মামলা নিয়েছে৷''

ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের খাটসা গ্রামের গোপাল মন্ডলের বাড়িতে হামলা হয় ৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রাতেই৷ হামলার পর তিনি তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন৷ অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি ডয়চে ভেলেকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘ভোটের দিন রাত সাড়ে ৭টা-৮টার দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর লোকজন আমাদের গ্রামে হামলা চালায়৷ তারা ৩-৪শ' হবে৷ তাদের হাতে ধারলো অস্ত্র ছিল৷ আমরা নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়েছি, এটাই আমাদের অপরাধ৷ তারা আমার বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে৷ টাকা এবং মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়৷ আমার দাদুর গলায় রামদা ধরে৷ তাকে মারপিট করে৷ এখন বাড়িতে আমার মা-দাদু আছেন৷ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমি পালিয়ে আছি৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘ওই রাতে আমাদের ইউনিয়নের আরো ২০-২৫টি বাড়িতে হামলা হয়৷ কিন্তু তারা এখন কেমন আছেন আমি জানি না৷ আমি তো এলাকায় নেই৷''

বাসুদেব সরকার

একই উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ভদ্রকান্দা গ্রামের বাসুদেব সরকার ৩০ ডিসেম্বর রাতের হামলার বর্ণনা দেন ডয়চে ভেলের কাছে৷ তিনিও হামলার পর এলাকা ছেড়েছেন ভয়ে৷ তিনি জানান, ‘‘আমাদের এলাকার সেন্টারে নৌকা প্রতীক কম ভোট পায়৷ স্বতন্ত্র বেশি পায়৷ আমরা ভোট গণনা শেষে বড়ি চলে যাই৷ এরপর রাতেই হামলা হয়৷ আমি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি৷ আমার কাকা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা৷ তাই আমাদের বাড়িটিই তারা টার্গেট করে৷ রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হামলা হয়৷ আমাদের যৌথ পরিবার৷ ১৭ জন সদস্য৷ তিনটি ঘর৷ তিনটি ঘরই ভাঙচুর ও লুটপাট করে৷'' তিনি আরো জানান, ‘‘আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও হামলা হয়৷''

হামলার বিষয়ে কথা বলার জন্য কাজী জাফর উল্যাহকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি৷ আর নিক্সন চৌধুরীর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷ তবে নিক্সন চৌধুরীর সমর্থক বলে পরিচিত কাউলিবেড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘হামলা  দু'পক্ষই করেছে৷ হিন্দুদের বাড়ি-ঘরেও হামলা হয়েছে৷ নৌকা যেহেতু পরাজিত হয়েছে তাই তাদের ওপর হামলা বেশি হয়েছে৷''

জাকির হোসেন

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘আমি নিক্সন চৌধুরীর লোক হলেও হামলায় জড়িত নই৷ হামলার সঙ্গে ছন্নছাড়া ধরনের লোকরা জড়িত৷''

ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন এই হামলার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘‘নির্বাচনের দিন রাতে ছাড়াও পরের দিনও হামলা হয়েছে৷ এখানে দুইপক্ষই কমবেশি হামলায় জড়িত৷ আমরা এরই মধ্যে ৭টি মামলা নিয়েছি৷ আরো মামলা হবে৷ এ পর্যন্ত আমরা ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এখন এলাকার পরিস্থিতি শান্ত আছে৷ যেসব এলাকায় হামলা হয়েছে, সেখানে পুলিশ পাহারা আছে৷ সড়কে টহল বাড়িয়েছি৷''

এদিকে ফরিদপুরসহ নির্বাচন পরবর্তী হামলা ও সহিংসতার তদন্ত করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন৷ হামলার বিষয়ে কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড, মিজানুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এবার নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা কম হলেও একটি মানুষের ওপর হামলা হলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়৷ নির্বাচনের আগে ও পরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার এই ঘটনা স্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আর যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে৷ জড়িত কেউই যাতে পার না পায়৷ আর ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপুরণ দিতে হবে সরকারিভাবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য