1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টানা অনশনে স্কুলের চাকরিপ্রার্থীরা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৮ মার্চ ২০১৯

চাকরির দাবিতে কলকাতার ধর্মতলায় অনশনে বসেছেন স্কুলের চাকরিপ্রার্থীরা৷ বৃহস্পতিবার তাঁদের অনশনের ২৯তম দিন৷ বুধবার ধর্নামঞ্চে এসে অনশনকারীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

https://p.dw.com/p/3Foof
SSC Hungerstreik Kalkutta
ছবি: DW/P. Samanta

‘নির্দিষ্ট অনুপাত মান্য করা হচ্ছে না’: ইলিয়াস

এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ করা হয়৷ যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না, এই সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগে কলকাতার প্রেসক্লাবের লাগোয়া ফুটপাতে অনশনে বসেছেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে লাগাতার অনশন শুরু হয়েছে৷ চারশোর মতো প্রতিবাদী ধর্নামঞ্চে যোগ দিয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে৷ ফুটপাতে শতরঞ্জি বিছিয়ে ২৪ ঘণ্টা ধর্না দিচ্ছেন তাঁরা৷ কারও মাথার উপর ঝুলছে একফালি ত্রিপল, কেউ থাকছেন খোলা আকাশের নীচে৷ চৈত্রের চড়া রোদ তো আছেই, তার উপর বিকেলের কালবৈশাখী ঝড়ে বেসামাল হয়ে পড়ছে ধর্নামঞ্চ তথা ফুটপাতের অবস্থান৷ তবুও ২৯ দিন ধরে মাটি কামড়ে পড়ে রয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ পুরুষদের সঙ্গে মহিলারাও রয়েছেন৷ শৌচাগারের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, পাশেই নর্দমা৷ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অন্তঃসত্ত্বা মহিলারাও বসে রয়েছেন অবস্থানে৷ ছোট সন্তান কোলে রয়েছেন মায়েরাও৷ এখনও পর্যন্ত অনশনকারীদের ৯০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, কেউ ডায়রিয়ায়৷

দাবিসমূহ

কোন কোন দাবিতে এত কঠোর প্রতিবাদের রাস্তায় এগোলেন চাকরিপ্রার্থীরা? নদিয়ার চাপড়ার বাসিন্দা ইলিয়াস বিশ্বাস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রতি ১০০টি শূন্যপদের জন্য কাউন্সেলিংয়ে প্যানেলভুক্ত ও ওয়েটিং লিস্ট মিলিয়ে ১৪০ জন প্রার্থীকে ডাকার কথা ছিল৷ এর মধ্যে ১০০ জন প্যানেলভুক্ত ও বাকি ৪০ জন ওয়েটিং লিস্ট থেকে৷ কিন্তু, কমিশন যতজনকে প্যানেলে রেখেছে, তার থেকে দশগুণ বেশি প্রার্থীর নাম ওয়েটিং লিস্টে ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা নিয়মবিরুদ্ধ৷ অর্থাৎ, নির্দিষ্ট অনুপাত মান্য করা হচ্ছে না৷''

দার্জিলিং বাদ দিয়ে কোচবিহার থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, সব জেলার প্রার্থীরা প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন৷ ধর্নায় শামিল বর্ধমানের শফিকুল আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কুলের শূন্যপদ আপডেট করার কথা ছিল৷ তাতে শূন্যপদের সংখ্যা বাড়ত৷ কিন্তু নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সময় যে শূন্যপদ ছিল, পরীক্ষায় বসার আগে দেখা যাচ্ছে তাতে কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ এর ফলে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা সংকুচিত হচ্ছে৷''

‘শূন্যপদ আপডেট করার কথা ছিল’: শফিকুল

অনশনকারী তরুণ-তরুণীরা নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলছেন৷ তানিয়া শেঠের বক্তব্য, ‘‘গেজেটে স্পষ্ট বলা ছিল, চূড়ান্ত মেধাতালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশের সময় লিখিত পরীক্ষা, ছাত্রজীবনে সার্বিক পরীক্ষা ও মৌখিক পরীক্ষার ফল অনুযায়ী র‍্যাংক দেওয়া হবে৷ নম্বর এক হয়ে গেলে যাঁর বয়স বেশি, তিনি র‍্যাংকে এগিয়ে থাকবেন৷ এই নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না৷ এতে দুর্নীতির গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে৷''

অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর দেখা

এই ধর্মতলার অনশন মঞ্চই তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানের অন্যতম সোপান৷ সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় কৃষকদের জমি ফেরতের দাবিতে ২৬ দিন এখানে অনশন করেছিলেন তিনি৷ এই আন্দোলনে ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের ভিত টলে গিয়েছিল৷ চার সপ্তাহ অনশন চলার পরও ধর্মতলায় অনশনরত চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে কেন মুখ্যমন্ত্রী এলেন না, এই প্রশ্ন উঠছিল৷ অবশেষে বুধবার, অনশনের ২৮ দিনের মাথায় মঞ্চে আসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সঙ্গে ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রী অনশন তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে প্রতিবাদীদের উদ্দেশে বলেন, ‘‘আমার সহমর্মিতা আছে আপনাদের প্রতি৷ আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন, অনশন তুলে নিন৷ নির্বাচনি আচরণবিধি কার্যকর থাকায় আমি কিছু ঘোষণা করতে পারি না, তাতে নির্বাচনের বিধিভঙ্গ হবে৷ ভোটপর্ব মিটতে মে গড়িয়ে যাবে৷ ততদিন অপেক্ষা করুন৷ জুনের প্রথম সপ্তাহে আপনাদের কমিটির সদস্যদের সঙ্গে সরকার কথা বলবে৷ মুখ্যমন্ত্রী চাকরিপ্রার্থীদের ভরসা দিয়ে বলেছেন, দাবি যথার্থ হলে আমি রাজনৈতিক দল দেখি না৷ আপনারা অনেক কষ্ট করেছেন৷ যাই করা হোক, সবটাই নীতি মেনে করা হবে৷''

‘রাজ্যের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে’: পবিত্র সরকার

তবে যাই হোক, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস সত্ত্বেও বুধবার অনশন প্রত্যাহার করেননি চাকরিপ্রার্থীরা৷ অনেকে আবার বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবিটুকু সবটা পেশ করা গেল না৷

নির্বাচনি আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার আগে থেকেই অনশনে বসেছিলেন ভাবী শিক্ষক-শিক্ষিকারা৷ সরকারের তরফে সেভাবে সাড়া দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ অনশনকারীদের৷ সরকারের তরফে পাঁচ সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে সম্প্রতি৷ সরকারের সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের একটা বড় অংশ অনশন নিয়ে উদাসীন থেকেছে বলে অনেকে অভিযোগ করছেন৷

কবি শঙ্খ ঘোষ ও অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ধর্না-অনশনের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন৷ শিক্ষাবিদ, প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার মঞ্চে গিয়েছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার কোনো কারণে নিয়োগ দিতে পারছে না৷ তবে এমন নয় যে স্কুলে শিক্ষকের শূন্যপদ নেই৷ ৫-৬ বছর নিয়োগ হয়নি৷ স্কুলে অনেক শিক্ষক দরকার৷ তা সত্ত্বেও সরকার কেন দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করছে না, তা আমাদের কাছেও বিভ্রান্তিকর৷ এই ঘটনায় আমাদের রাজ্যের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য