1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শৌচালয়ের দাবিতে অঙ্কিতা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৯ মার্চ ২০১৯

ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার স্বচ্ছ ভারত প্রকল্প শুরু করেছে দেশ জুড়ে৷ জোর দেওয়া হয়েছে শৌচালয় নির্মাণে, তার পক্ষে ব্যাপক প্রচারও চলছে৷ যদিও শৌচালয় সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এখনও জেরবার ভারতের মহিলারা৷

https://p.dw.com/p/3Efhb
Indien Kolkata Ankita Sengupta wirbt für  öffentliche Toiletten
ছবি: privat

প্রিয়াংকা ভারতীর জীবনের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘টয়লেট এক প্রেম কথা' সিনেমায় দেখানো হয়েছিল সমস্যার কিছুটা অংশ৷ কিন্তু শহরে টয়লেটের অপ্রতুলতার দরুণ ফুটপাতবাসীরা যে অসহায়তার মধ্যে থাকেন, তার খবর দেওয়ার জন্য কোনো চলচ্চিত্র তৈরি হয়নি৷ কজন জানেন যে ফুটপাতে রাত কাটানো মহিলাদের ভরসা নিকটবর্তী সুলভ শৌচালয় বা নালা-নর্দমা৷ শুধু কি তাই? পথচলতি মহিলাদের জন্য শৌচালয় চোখে পড়ে না৷ যত্রতত্র পুরুষেরা শৌচকর্ম সারতেই পারেন, কিন্তু মহিলাদের এ ক্ষেত্রে কী হবে?

ভারত পরিচ্ছন্ন হচ্ছে, কিন্তু মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচালয় তৈরি হচ্ছে না কেন, এই প্রশ্ন ভাবিয়ে তুলেছিল অঙ্কিতা সেনগুপ্তকে৷ বছর পঁচিশের এই তরুণী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যে পদ্ধতিতে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন, তা দুঃসাহসিক বলা চলে৷

‘একটু সাহস করে এগিয়ে এলে অনেকটা ফল মেলে’

গত বছর মহিলাদের শৌচালয় সমস্যা ঘিরে অঙ্কিতার একটি কীর্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় হইচই ফেলে দিয়েছিল৷ কী ছিল সেই ঘটনা? বালিগঞ্জ স্টেশনের ধারে রেললাইনে অনেক পুরুষই শৌচকর্ম সারছিলেন৷ অনেক স্টেশনের কাছে লাইনের ধারে এই দৃশ্য দেখা যায়৷ সেখানে অঙ্কিতা আচমকা শৌচকর্ম করার ভঙ্গিতে বসে পড়েন৷ স্বাভাবিকভাবেই বিস্ফারিত চোখ আর বিদ্রূপ ধেয়ে আসে তাঁর দিকে৷ সেদিন মেয়েদের এই সমস্যার কথা জনসমক্ষে তুলে ধরতে অঙ্কিতার অস্বস্তি হয়নি, কারণ তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মহৎ৷ স্টেশনে উপস্থিত জনতার চোখে আঙুল দিয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন মেয়েদের অসুবিধার কথা- কেন নেই মহিলাদের জন্য শৌচালয়?

এই কাজের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে তাঁর প্রশংসা করেছেন, আবার বিদ্রূপও জুটেছে৷ রীতিমতো ট্রোলড হতে হয়েছে তাঁকে৷ এমনকি বাড়িতে অভিভাবকের কাছ থেকে বকুনি শুনতে হয়েছে৷ রাস্তাঘাটে কটূক্তি অঙ্কিতার পিছু ছাড়েনি৷ এই অন্ধকার দিকটি বাদ দিলে বলা যায়, তিনি সাড়াও ফেলেছেন, সাফল্যও পেয়েছেন৷ নির্দিষ্ট স্থানে তৈরি হয়েছে শৌচালয়৷ রাতে নিরাপত্তারক্ষীসহ সুলভ শৌচালয়ের ব্যবস্থাও হয়েছে৷

‘প্রান্তকথা' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী অঙ্কিতা বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল সমাজের জন্য কিছু করার৷ আমাদের দেশে অনেক মেয়ে, শুধু মেয়ে কেন, অনেকেই নিজের কথাটা বলতে পারে না৷ আমি শুধু সেই কথাটাই বলেছি৷ সত্যিটা কঠোর ভাবে সবার সামনে তুলে ধরায় কিছুটা ব্যঙ্গ জুটেছে, তবে সাফল্যও পেয়েছি৷''

‘অঙ্কিতার প্রতিবাদ সমাজকে নাড়া দিতে পেরেছে’

সমাজসেবা যে মহিলাদের পেশা হতে পারে, এটা অনেকে ভাবতে পারতেন না৷ সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশুনো করা অঙ্কিতার বাবা-মাও এ ব্যাপারে মেয়ের চিন্তাভাবনাকে গুরুত্ব দিতে রাজি ছিলেন না৷ ঘর থেকে সেখান থেকেই অঙ্কিতার প্রথম লড়াই শুরু হয়েছিল৷ মহিলাদের শৌচালয়ের সমস্যা অঙ্কিতা জেনেছেন তাঁর কাজের সূত্রেই৷ গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে যে সব পরিবার বসবাস করে, তাঁদের সঙ্গে রাত কাটিয়ে অঙ্কিতা প্রত্যক্ষ করেছেন মহিলাদের রাতের শৌচালয় বলতে আদতে নোংরা দুর্গন্ধময় নালা-নর্দমা৷ এই অভিজ্ঞতাই তরুণীকে প্রান্তিক মহিলাদের স্বর হয়ে উঠতে সাহায্য করেছে৷ অঙ্কিতা বলেন, ‘‘মেয়েদের কিন্তু প্রতিবাদ করা উচিত৷ অন্তত চুপচাপ না থেকে কারও কাছে সমস্যার কথা তুলে ধরা উচিত৷ একটু সাহস করে এগিয়ে এলে অনেকটা ফল মেলে৷ অনেকে সাহস দেখালে ফল আরও ব্যাপক হতে পারে৷''

একলা মেয়ের অভিনব প্রতিবাদ সমাজকে ঠিক কতটা নাড়া দিয়েছে? প্রান্তকথা-র প্রধান বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই অঙ্কিতার প্রতিবাদ সমাজকে নাড়া দিতে পেরেছে৷ বালিগঞ্জে ওভাবে প্রতিবাদ করার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় ঘটনাটি৷ রেলের আধিকারিক ও স্থানীয় কাউন্সিলারের উদ্যোগে মহিলাদের টয়লেট নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়৷ তালা লাগানো টয়লেটগুলি খুলে দেওয়া হয়৷ নতুন টয়লেট তৈরির ব্যবস্থা হয়৷''

এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পথশিশু থেকে শুরু করে যৌনকর্মী, তৃতীয় লিঙ্গ, এমনকী সব রকমের প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করে৷ তেমনই কাজ করতে গিয়ে অঙ্কিতা গড়িয়াহাট উড়ালপুলের নীচে বসবাসকারী পথশিশুদের জীবনযাপন প্রত্যক্ষ করেন৷ ওই শিশুরা নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হয়৷ এদের মধ্যে অনেকেই স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায়নি৷ কেউ বা হয়তো স্কুল থেকে ড্রপ আউট৷ রূপসা ও আরিফা খাতুন নামের দুই শিশুকে স্কুলে ভর্তির উদ্যোগ নেন অঙ্কিতা৷ এদের পরিবারকে বোঝানোর পাশাপাশি তিনি স্কুলেও কথা বলেন৷ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবাক হয়ে বলেছিলেন, এরা তো পথশিশু, এদের ভর্তি নিতে হবে? অঙ্কিতা তখন শিক্ষার অধিকার নিয়ে সওয়াল করেন৷ বলেন, ১৪ বছর বয়স অবধি সবারই শিক্ষার অধিকার আছে৷ একজন উচ্চবিত্তের যেমন আছে, তেমনই আছে সর্বহারা পথশিশুরও৷ প্রধান শিক্ষক বাধ্য হয়েছিলেন পথশিশুদের ভর্তি নিতে৷ অঙ্কিতা বলেন, ‘‘সংবিধানের কথা মেনে চলা একজন সচেতন নাগরিকের কর্তব্য৷ সেটাই অনেকে করেন না৷ যাতে তাঁরা সেইটুকু অন্তত করেন, তার জন্য সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে৷'' রূপসা আর আরিফার পড়াশুনো এখনও চলছে৷ লজ্জা নারীর ভূষণ - এই চিরকালীন মিথ ভেঙে চুরমার করে অঙ্কিতা হয়ে উঠেছেন নারী দিবসের উজ্জ্বল মুখ৷ প্রান্তকথা-য় তাঁর সঙ্গে রয়েছেন পাঁচ শতাধিক তরুণ-তরুণী৷ সকলের সঙ্গে সকলের উন্নয়নের সরকারি স্লোগান সার্থক করে তোলার চেষ্টা করছেন তাঁরা৷