1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনের পর ম্যার্কেল কী করবেন?

৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

২৬শে সেপ্টেম্বর জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের পর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল অবসর নিচ্ছেন৷ অবসর জীবন কীভাবে কাটাতে চলেছেন তিনি?

https://p.dw.com/p/3zyJB
Deutschland Wein l Angela Merkel besucht Weinfest "Dürkheimer Wurstmarkt"
ছবি: Ronald Wittek/dpa/picture-alliance

ব্যক্তি হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেল কিছু পদ রান্না করতে ভালোবাসেন৷ যেমন আলুর স্যুপ ও প্লাম কেক৷ তবে ২৬শে সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তিনি মোটেই কাজ থেকে অব্যাহতি পাচ্ছেন না৷ কারণ নতুন সরকার গঠন হওয়া পর্যন্ত তাঁকে নির্বাহী সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে৷ সম্প্রতি তিনি বলেছেন, যে কার্যকালের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী সক্রিয় থাকবেন৷

গত কয়েক দশকের গড় হিসেব অনুযায়ী জার্মানিতে সাধারণ নির্বাচনের পাঁচ থেকে ছয় সপ্তাহ পর নতুন চ্যান্সেলরের নেতৃত্বে  সরকার গঠিত হয়েছে৷ ২০১৭ সালের নির্বাচনের পর সেই অবস্থায় পৌঁছতে সাড়ে পাঁচ মাস সময় লেগেছে৷ অর্থাৎ আবার তেমন জটিলতা দেখা দিলে ম্যার্কেল হয়তো তার রাজনৈতিক অভিভাবক হেলমুট কোলের রেকর্ড ভেঙে ফেডারেল জার্মানির ইতিহাসে চ্যান্সেলরের দীর্ঘতম কার্যকাল পূরণ করবেন৷ ৫,৮৭০ দিনের সেই সীমানা অতিক্রম করতে হলে ম্যার্কেলকে কমপক্ষে ২০২১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত চ্যান্সেলর থাকতে হবে৷

বই  পড়া    একটু  ঘুমের  সময়

গত জুলাই মাসে ওয়াশিংটন সফরের সময় আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে তার অবসর জীবনের পরিকল্পনার কথা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল৷ সাধারণত এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও সে বার তিনি বলেছিলেন, সবার আগে কিছুদিন বিরতি চান তিনি৷ তার পর অন্যদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করার কথা ভাববেন৷ তাকে বুঝতে হবে, অন্য কেউ তার এত দিনের দায়িত্ব পালন করছেন৷ ম্যার্কেল বলেন, ‘‘মনে হয়, সেটা উপলব্ধি করে আমার ভালোই লাগবে৷''

কাজ থেকে অবসর পেয়ে ম্যার্কেল নিজের আগ্রহ সম্পর্কে ভাবনা চিন্তা করতে চান৷ বিগত ১৬ বছরে তিনি সেই লক্ষ্যে তেমন সুযোগ পান নি৷ মুচকি হেসে তিনি আরও বলেন, হয়তো বই পড়ার চেষ্টা করবেন, ক্লান্তি কাটাতে একটু বেশি ঘুমাবেন৷ ম্যার্কেলের ভাষায় ‘‘তারপর দেখা যাক, কোথায় আবার উদয় হই৷''

তদন্তে  নামছেন  ‘‘মিস  ম্যার্কেল''

এক ফটো শিল্পী ও গোয়েন্দা কাহিনি লেখক ম্যার্কেলের ভবিষ্যৎ আগেই পরিকল্পনা করে ফেলেছেন৷ আন্দ্রেয়াস ম্যুয়ে ম্যার্কলের মতো দেখতে এক মডেলকে নিয়ে শান্ত ও নির্জন পরিবেশে ছবি তুলে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন৷ ডাভিড সাফিয়ের নামের লেখক মনে করেন, যে কর্মব্যস্ত জীবনের শেষে ম্যার্কেলের সময় দ্রুত ‘বোরিং' বা একঘেয়ে হয়ে উঠবে৷ ম্যার্কেলও ব্রান্ডেনবুর্গে নিজের ভিটেতে ফেরার পর আগাথা ক্রিস্টির ‘মিস মার্পেল' নামের গোয়েন্দা চরিত্রের মতো গোয়েন্দাগিরি শুরু করবেন৷ লেখকের কল্পনায় একটি খুনের ঘটনার জের ধরে ম্যার্কেলের মধ্যে আবার কাজের স্ফুলিঙ্গ জেগে উঠবে৷

যে মানুষটি কয়েক দশক ধরে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কর্মব্যস্ততার মধ্যে কাটিয়েছেন এবং গুরুদায়িত্ব পালন করে এসেছেন, তিনি কি রাতারাতি হাত ঝেড়ে ফেলতে পারেন? মজার সেই কাহিনির শুরুতেই সেই প্রশ্ন রাখা হয়েছে৷ বার্লিনে ম্যার্কেল নিজেই বলেছেন, কোনো কিছুর অভাব বোধ হচ্ছে কিনা, সেটা আর না থাকলে তবেই তা বোঝা যায়৷

নিশ্চিত  অবসর  ভাতা

গত ১৭ই জুলাই আঙ্গেলা ম্যার্কেল ৬৭ বছর পূর্ণ করেছেন৷ আর্থিক সচ্ছলতা সম্পর্কে তাকে দুশ্চিন্তা করতে হবে না৷ বর্তমানে তিনি চ্যান্সেলর হিসেবে মাসিক ২৫ হাজার ইউরো ভাতা পাচ্ছেন৷ সেই সঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে ১০ হাজারের বেশি আয়ও রয়েছে৷ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি সংসদে সক্রিয় রয়েছেন৷ সেই কাজের শেষে তিন মাস পর্যন্ত সংসদ হিসেবে পূর্ণ ভাতা পাবেন৷ তারপর সর্বোচ্চ ২১ মাস পর্যন্ত সেই অংকের অর্ধেক পেতে পারেন৷

চ্যান্সেলর, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য হিসেবে ম্যার্কেলের দীর্ঘ কার্যকালের সুবাদে প্রাপ্য অবসর ভাতার মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়ে চূড়ান্ত অংক স্থির করা হবে৷ বর্তমান আইন অনুযায়ী সব হিসেবনিকেশ করে ম্যার্কেল শেষ পর্যন্ত মাসে ১৫ হাজার ইউরো অবসর ভাতা পেতে পারেন৷ তাছাড়া আজীবন দেহরক্ষী ও চালকসহ সরকারি গাড়িও তার প্রাপ্য৷ বুন্ডেসটাগ ভবনে বেশ কয়েকজন কর্মীসহ নিজস্ব একটি দফতর তার জন্য বরাদ্দ থাকবে৷

দ্বিতীয়  কর্মজীবনও  সম্ভব

জার্মানিতে সরকারের প্রাক্তন সদস্যদের গোপনীয়তার শপথ মেনে চলতে হয়৷ সে সব কথা পেটে রাখতে হলেও পরামর্শদাতা এবং রাজনৈতিক আঙিনায় অসংখ্য যোগাযোগের সুবাদে এমন ব্যক্তিরা শিল্পবাণিজ্য জগতে বেশ জনপ্রিয়৷ ম্যার্কেলের কয়েকজন পূর্বসূরি বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ করেছেন৷ যেমন হেলমুট স্মিট ১৯৮২ সালে সাপ্তাহিক ‘ডি সাইট' পত্রিকার প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন৷ ২০১২ সালে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কোনো লেকচারের জন্য তিনি ১৫,০০০ ডলারের কম পারিশ্রমিক না নেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷

হেলমুট কোল ও গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার প্রাক্তন চ্যান্সেলর হিসেবে স্মিটের তুলনায় আরও বেশি আয়ের মুখ দেখেছেন৷ কোল রাজনীতি ও স্ট্র্যাটেজিক সংক্রান্ত পরামর্শ দিতে নিজেই একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ লবিয়িং করে ও পরামর্শ দিয়ে তিনি মোটা অংকের আয় করেছেন৷

শ্র্যোডারকে  ঘিরে  বিতর্ক

প্রাক্তন চ্যান্সেলর হিসেবে গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার ২০০৫ সালে কার্যকালের কয়েক মাস পরেই নর্ড স্ট্রিম নামের পাইপলাইন কোম্পানির হয়ে আসরে নেমে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন৷ চ্যান্সেলর হিসেবে রাশিয়ার গাজপ্রম কোম্পানির এই প্রকল্পের হয়ে তদ্বির করে তার পরেই সেই কোম্পানির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ছিল অত্যন্ত দৃষ্টিকটু৷ সেই ঘটনার পর আইন প্রণয়ন করে স্থির করা হয়েছে, যে জার্মানির কোনো প্রাক্তন চ্যান্সেলরকে নতুন কাজ নেবার আগে চ্যান্সেলর দফতরে জানাতে হবে৷ প্রস্তাবিত সেই ভূমিকা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ ক্ষূণ্ণ করতে পারে কিনা, এক এথিক্স কমিটি সরকারকে সে বিষয়ে পরামর্শ দেবে৷ তেমন আশঙ্কা দেখা দিলে সরকার ১৮ মাস পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে৷

ম্যার্কেলের  স্বামী  আপাতত  বার্লিনেই

ম্যার্কেল কি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নতুন কোনো কাজ করতে চাইবেন? এখনো পর্যন্ত তিনি সে বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্চ্য করেন নি৷ আপাতত তিনি বার্লিনেই থাকবেন বলে মনে হচ্ছে৷ কারণ তার স্বামী ইওয়াখিম সাউয়ার কোয়ান্টাম রসায়নের প্রোফেসর হিসেবে এখনো কাজ গুটিয়ে আনার কথা ভাবছেন না৷ ৭২ বছর বয়সি সাউয়ার আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিলেও আপাতত ২০২২ সাল পর্যন্ত বার্লিনের হুমবল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র রিসার্চার হিসেবে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন৷

সাবিনে কিনকার্ৎস/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য