1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

টিকা থাকা সত্ত্বেও হাম সম্পর্কে সচেতনতা কম

২৪ আগস্ট ২০২০

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় টিকা আবিষ্কারের অপেক্ষা করলেও আমরা কি অন্যান্য মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষিত? যেমন মিজলস বা হামের টিকা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন না৷

https://p.dw.com/p/3hOWi
ছবি: Imago/photothek/U. Grabowsky

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কোলন শহরে ফ্লু ছড়িয়ে পড়েছিল৷ অনেক মানুষ সর্দি-কাশির ফলে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন৷ শহরের এক হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে আলেক্স সাউয়ারও আচমকা অসুস্থ বোধ করলেন৷ তবে তিনি তখনো জানতেন না, যে ফ্লু নয় – তাঁর আসলে মিজলস বা হাম হয়েছে৷

প্রথম উপসর্গগুলি ফ্লুয়ের মতোই৷ ক্লান্তি, গলায় ব্যথা, কাশি ইত্যাদি৷ হামের ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বলে আলেক্স নিজে ছোঁয়াচে রোগের উৎস হয়ে উঠলেন৷

মিজলস হলেই শহরের স্বাস্থ্য দফতরে তা নথিভুক্ত করা হয়৷ এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট আট জন সেই তালিকায় স্থান পেয়েছিলেন, যা মোটেই অস্বাভাবিক নয়৷ তবে সেই হাসপাতালের কর্মীরা লক্ষ্য করলেন, যে একমাত্র শহরের এয়ারেনফেল্ড এলাকায়ই হামের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে৷ সেটা কি তাহলে মহামারির লক্ষণ?

আলেক্স সাউয়ার নিজের পারিবারিক ডাক্তারের কাছেই গিয়েছিলেন৷ তিনি গলার ব্যথা সারাতে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েছিলেন৷ ফ্লুয়ের মতো উপসর্গের কারণে প্রথম দিকে হাম প্রায়ই শনাক্ত করা যায় না৷ কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খেলে হাম সারে না৷ আলেক্সের অবস্থার অবনতি ঘটতে লাগলো৷ সেই সময়ের কথ মনে করে তিনি বললেন, ‘‘শরীর একেবারে ভেঙে পড়ে৷ এর বর্ণনা দেওয়া কঠিন৷ আমি কোনোদিন স্টিমরোলারের নীচে চাপা পড়ি নি বটে, তবে মনে হচ্ছিল আমার সঙ্গে যেন সে রকমই কিছু একটা ঘটেছে৷ ৪০ ডিগ্রিরও বেশি জ্বরের ফলে কিচ্ছু করার উপায় ছিল না৷ খাবার কোনো ইচ্ছা থাকে না, ওজন কমে যায়৷ বলদের মতো ঘাম হয়৷ ভালো ঘুম হয় না, আবার পুরোপুরি জেগে থাকারও উপায় নেই৷ এমন অসহায় অবস্থায় মনে হচ্ছিল কিছু একটা করতে হবে৷’’

অ্যামবুলেন্স করে কোনোরকমে হাসপাতালে ভর্তি হলেন আলেক্স৷ এর পরেই গোটা শরীরের উপর লাল দাগ ছেয়ে গেল৷ তখন প্রথম বার মিজলস বা হাম ধরা পড়লো৷ আলেক্সকে এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হয়েছিল৷ শরীরে ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর৷ তারপর আবার চোখের সমস্যাও শুরু হলো৷ আলেক্স বলেন, ‘‘যত বার মিজলস হবে, ততবার কনজাংকটিভাইটিস হবেই৷ আমার ক্ষেত্রে সেটা এতটাই মারাত্মক রূপ ধারণ করেছিল, যে তিন দিন পর আমি প্রায় কিছুই দেখতে পারছিলাম না৷ সবকিছু ঝাপসা হয়ে উঠেছিল৷ ফলে সেটাই সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছিল৷ এমন ভয়ংকর অবস্থা বর্ণনাও করা যায় না৷’’

এর মধ্যে শহরের স্বাস্থ্য দফতরে প্রতিদিন আরও মিজলস রোগীর নাম নথিভুক্ত করা শুরু হলো৷ কর্মীরা তৎপর হয়ে উঠলেন এবং রোগের প্রসার বন্ধ করতে যারা আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের শনাক্ত করার কাজ শুরু করলেন৷ কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল৷ কোলনের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তা প্রো. গেয়ারহার্ড ভিজেম্যুলার বলেন, ‘‘মিজলস যে কোলন শহরের জনসংখ্যার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমরা বুঝতে পারলাম৷ ফলে আমাদের মনে দুশ্চিন্তা ছড়িয়ে পড়লো৷’’

দ্রুতবেগে হামের রোগীদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো, যা ছিল এর এক বছর আগের তুলনায় দশ গুণ বেশি৷ ২০১৮ সালের মার্চ মাসে হাসপাতাল ও ডাক্তারের চেম্বারে হামের উপসর্গ নিয়ে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগলো৷ ডাক্তাররা বুঝলেন যে এই সব রোগী পাঁচ দিন আগেই ছোঁয়াচে রোগের উৎস হয়ে উঠেছেন৷

এই সময়কালে তাঁরা আশেপাশের অরক্ষিত সব মানুষের মধ্যে রোগ ছড়িয়ে দিতে পারেন৷ টিকার ভয়, সচেতনতার অভাব অথবা ভুলো মনের কারণে অনেকেরই হাম থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা নেই৷ দুবার টিকা না নিলে যে কেউ এমন ভাইরাসে আক্রান্ত হতে ও ছড়িয়ে দিতে পারে৷

এফা শুলটেস/এসবি

গতবছরের জানুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...