1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম অনেকেই ঢাকা ছাড়ছেন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ মার্চ ২০২৩

দ্রব্যমূল্যের চাপে মানুষ অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে খাবারে কাটছাঁট করা ছাড়াও কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ আবার কেউ আগের বাসা ছেড়ে কম ভাড়ায় ছোটো বাসায় উঠছেন৷

https://p.dw.com/p/4OZJb
অক্টোবরে সিপিডি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা৷
অক্টোবরে সিপিডি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা৷ছবি: Samir Kumar Dey/DW

নাজমুল হক তপন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন৷ বেতন পান ৫২ হাজার টাকা৷ তিন সদস্যের পরিবার তার৷ মেয়েটি এইএচএসসির ছাত্রী৷ তার কথা, ‘‘এখন আর সংসার চলছে না৷ গত চার বছরে বেতন বাড়েনি৷ কিন্তু খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ৷ আসলে জোর করে এখন জীবন চালচ্ছি৷ সেই মুড়ির টিন বাসের মতো৷ রাস্তায় চলাচলের কোনো অবস্থাই নাই৷ তাই ‘আল্লাহর নামে চলিলাম' বলে জোর করে চালানো হচ্ছে৷ জীবন  এখন মুড়ির টিন বাসের মত৷''

তিনি বলেন, ‘‘আগে মাসে একবার গরুর মাংস খেতাম৷ এখন তিন মাসে একবার খাই৷ দুধের খরচ বাঁচাতে দুধের চা খাওয়া বাদ দিয়েছি, রং চা খাই৷ গেস্ট আসলে শুধু দুধ চাই দেই৷ বাসায় অতিথি আসলে আরো কষ্ট বেড়ে যায়৷ এখন শাক-সবজি দিয়েই চলছে৷ খাবার পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছি৷ আর আগের বাসা পরিবর্তন করে মেয়ের স্কুলের কাছে ছোট বাসা নিয়েছি৷ তাতে বাসা ভাড়াও কম লাগছে আর স্কুলে যাওয়ার খরচও বেঁচে যাচ্ছে৷ তবে যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে সামনের বছর মেয়েটিকে পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি করতে পারলে তাকে হোস্টেলে দিয়ে দেব৷ আর আমরা স্বামী-স্ত্রী এক রুমের একটি বাসা নিয়ে থাকবো৷ তা না হলে গ্রামের বাড়ি চলে যেতে হবে৷''

আগে মাসে একবার গরুর মাংস খেতাম, এখন তিন মাসে একবার খাই: নাজমুল হক তপন

একই ধরনের কথা বলেন রফিক রাফি নামে আরেকজন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ৩০ হাজার টাকা বেতন৷ চারজনের সংসার৷ বাসা ভাড়া লাগে না৷ নিজেদের বাসায় থাকি৷ কিন্তু ওই বেতনে প্রতিমাসেই ধারদেনা করতে হয়৷''

ঢাকায় একটি সরকারি প্রাইমারি স্কুলে সহকারি শিক্ষক সালমা বেগম৷ তিনি ও তার স্বামীর মিলিয়ে তাদের মোট মোট বেতন ৭২ হাজার টাকা৷ সালমা বেগম বলেন, ‘‘আমাদের তিনজনের সংসার৷ শ্বশুর বাড়িতেও টাকা দিতে হয়৷ সব মিলিয়ে আমাদের চলতে খুব কষ্ট হচ্ছে৷ করোনার সময় থেকে ঋণ নেয়া শুরু করি৷ সেই ঋণ এখনো শোধ করছি৷ নতুন করে ঋণ নিয়ে কীভাবে শোধ করবো? তাই নানাভাবে সংসারের খরচ কমানোর চেষ্টা করছি৷''

তিনি বলেন, ‘‘গত তিন মাসে যা অবস্থা সব কিছুর দাম ১০ থেকে ৩০ ভাগ বেড়ে গেছে৷ প্রতিদিনই বাড়ছে৷ তাই মাছ-মাংস খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছি৷ নতুন পোশাকও কিনছি না৷ তারপরও সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে৷''

রংপুরের গফুর মিয়া এক বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন রিকশা চালাতে; কিন্তু টিকতে না পেরে আবার গ্রামে ফিরে গেছেন৷ তিনি জানান, ঢাকায় এসে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তিন মাস পর বউ ছেলে-মেয়েকে গ্রামের বাড়ি পাঠাই৷ এরপর একা থেকে অনেক কষ্ট করে ঋণ শোধ করে গ্রামের বাড়ি চলে এসেছি৷ এই বাজারে ঢাকায় টিকে থাকা সম্ভব ছিলো না৷''

গত অক্টোবরে সিপিডি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানায়, রাজধানীতে বসবাসরত চার সদস্যের একটি পরিবারের মাসে খাদ্য ব্যয় ২২ হাজার ৪২১ টাকা৷ মাছ-মাংস বাদ দিলেও খাদ্যের পেছনে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫৯ টাকা৷ এটা ‘কম্প্রোমাইজড ডায়েট' বা আপসের খাদ্য তালিকা৷ প্রচলিত ১৯টি খাবারের ওপর ভিত্তি করে তারা এই তথ্য তখন দেয়৷

প্রয়োজনীয় খাবার না খাওয়ায় একটি অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে: এস এম নাজের হোসেন

সিপিডির গবেষণা বলছে, ২০১৯ সালেও একজনের উপার্জন দিয়ে চারজনের একটি পরিবার ১৭ হাজার ৫৩০ টাকায় চলতে পারতো৷ তখন মাছ-মাংস বাদ দিলে ওই পরিবারের খাবার খরচ হতো ৬ হাজার ৫৪১ টাকা৷

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘‘সিপিডির ওই হিসাব আরো সাত-আট মাস আগের৷ এখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷ আমাদের বিবেচনায় মূল্যস্ফীতি ১৫ ভাগ ছাড়িয়ে গেছে৷ যদিও সরকারের হিসাবে তা কম৷''

তার কথা, ‘‘যা পরিস্থিতি তাতে অনেকেই খাদ্য তালিকা কাটছাঁট করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছেন না৷ অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন৷ নতুন করে ঋণ নিয়ে তারা শোধ করবেন কীভাবে? তাই একটি অংশ স্ত্রী সন্তানকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন৷ আবার কেউ কেউ আগের বাসা ছেড়ে কম ভাড়ায় ছোট বাসায় উঠেছেন৷ পরিবহণ ভাড়া কুলাতে না পেরে অনেকে এখন পায়ে হেঁটে চলাচল করছেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘এখন খাদ্য কম কেনায়, প্রয়োজনীয় খাবার না খাওয়ায় একটি অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগতে শুরু করেছে৷''

বিবিএস রবিবার যে মূল্যস্ফীতির সরকারি হিসাব প্রকাশ করেছে তাতে মূল্যস্ফীতি আবারো বেড়েছে৷ ফেব্রুয়ারিতে ৮.৭৮ শতাংশে পৌঁছেছে৷ যা জানুয়ারি মাসে ছিলো ৮.৫৭ শতাংশ৷ তবে গত বছরের আগস্টে এই হার ছিল ৯.৫২ শতাংশ৷ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. সামসুল আলম বলেছেন, ‘‘মূল্যস্ফীতি বাড়লেও পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হবে না৷''