সুমো কুস্তির চরম দুর্দিন
৩০ নভেম্বর ২০১২থলথলে আর বিশাল শরীরের দুটো মানুষ একে অন্যকে ফেলার জন্য লড়ছে৷ যিনি ফেলতে পারবেন তিনিই বীরদেরও বীর, তিনিই সেরা৷ পুরো জাপান তাঁকে এক রকম মাথায় তুলে নাচবে৷ কী দিন ছিল সুমো কুস্তির, সুমো কুস্তিগীররাই তখন দেশের সেরা সুপারস্টার৷ মাইনোউমির তো জীবনের একমাত্র লক্ষ্য সুমো কুস্তিগীর হওয়া৷
সেটা আশির দশকের কথা৷ এমনিতে মাইনোউমির স্বাস্থ্য বেশ ভালো৷ কুস্তিগীর হতেই পারেন৷ কিন্তু উচ্চতা একটু কম হওয়ায় পড়ে গেলেন সমস্যায়৷ তো সব সমস্যারই তো কোনো না কোনো সমাধান আছে৷ মাইনোউমিও খুঁজে বের করলেন উপায়৷ ডাক্তারকে গিয়ে বললেন উচ্চতা বাড়ানোর ব্যবস্থা করে দিতে৷ যে কথা সে-ই কাজ৷ প্রথমে মৃদু আপত্তি করলেও মাইনোউমির জোরাজুরিতে তাঁর মাথায় সিলিকন ইনজেকশন দিয়ে দিলেন ডাক্তার৷ লম্বা হয়ে গেলেন মাইনোউমি৷ বাকিটা ইতিহাস৷ নিজের শরীরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বড় কুস্তিগীরদের হারিয়ে হারিয়ে মাইনোউমি এমন জনপ্রিয় হয়েছিলেন যে জাপানের মানুষ এখনো তাঁকে স্মরণ করে৷ করলে কী হবে, মাইনোউমির এখন মন ভালো নেই৷ জাপানে এখন আর কেউ আগের মতো সুমো কুস্তিগীর হতে চায়না এটা দেখে তিনি খুবই হতাশ৷
সুমো কুস্তির একসময়ের সুপারস্টার মাইনোউমির মতো এইজি তাকাশেও হতাশ৷ তাকাশে জাপানের সুমো কুস্তি বিষয়ক ম্যাগাজিন ‘সুমো'-র সম্পাদক৷ এখন খোদ জাপানে সুমোর যে দুরবস্থা তা তাঁরও মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে৷ গত মাসে সুমো কুস্তিগীর হবার পরীক্ষায় অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে মাত্র একজন৷ এ বছর সারা দেশে এমন আগ্রহীর সংখ্যা মাত্র ৫৬৷ অথচ ঠিক ৩০ বছর আগে, সুমোর জনপ্রিয়তা যখন তুঙ্গে, তখন জাপানে সুমো-তারকা হতে চেয়েছিলেন ২২৩ জন!
কিন্তু দেশের ঐতিহ্যবাহী, জনপ্রিয় একটি খেলার এমন দুর্দশা কেন? কেন এখন সুমো কুস্তির গ্যালারি প্রায় ফাঁকা থাকে? তরুণরা কেন আসতে চাইছেনা এ খেলায়? টিভি চ্যানেলগুলোও কেন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে? কারণ অবশ্য আছে অনেক৷ সুমো কুস্তিতে এখন আর দেশের বড় কোনো তারকা নেই, এ খেলায় ড্রাগ কেলেঙ্কারি ঢুকেছে, অনেক খেলোয়াড় সন্ত্রাসমূলক কার্যকলাপে জড়িয়েছেন – এ সবকে বড় কারণ মনে করছেন অনেকে৷ অনেকে আবার দুষছেন বেসবল আর ফুটবলকে৷ এই খেলাদুটোর জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়াতেই নাকি সুমোর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে জাপানের তরুণরা৷
এসিবি/এসবি (রয়টার্স)