চীনে ইন্টারপোল প্রধান ঘুষ নেয়ার অভিযোগে আটক
৮ অক্টোবর ২০১৮নিখোঁজ হওয়ার দুই সপ্তাহ পর সোমবার চীনের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় মেংকে আটকের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করলো৷
এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘মেং-এর বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়া এবং আইন ভঙ্গ করার অভিযোগ রয়েছে৷'' একই সাথে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে বিবৃতিতে৷ বলা হয়েছে, মেং ‘‘নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন৷''
ইতিহাসের প্রথম চীনাইন্টারপোল প্রধান নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি চীনা সরকারের জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রীরও দায়িত্ব পালন করছিলেন মেং৷
রোববার চীনের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা জানিয়েছিল, সম্প্রতি গঠন করা ন্যাশনাল সুপারভাইজরি কমিশন মেং-এর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে৷ কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা তখন জানানো হয়নি৷
ইন্টারপোল জানিয়েছে, মেং সংস্থাটির প্রধানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন৷ জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক কিম জং ইয়াংকে দেয়া হয়েছে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব৷
আতঙ্কে পরিবার
মেং নিখোঁজ হওয়ার পর প্রথম ফ্রান্সের লিওঁতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন মেং-এর স্ত্রী গ্রেস মেং৷স্বামীর জীবন হুমকির মুখে বলে মনে করেন গ্রেস৷
গ্রেস জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হওয়ার আগে মেং তাঁকে একটি ছুরির ছবি পাঠিয়েছেন৷ এর মাধ্যমে মেং যে বিপদে পড়েছেন, সেটিই বোঝাতে চেয়েছেন বলেও দাবি গ্রেসের৷
এর চার মিনিট পর আরেকটি মেসেজ পান গ্রেস, যাতে লেখা ছিল, ‘‘আমার কলের জন্য অপেক্ষা করো৷'' তবে এরপর মেং-এর মোবাইল ফোন থেকে আর কোনো মেসেজ বা কল আসেনি৷
নিজের ও দুই সন্তানের জীবন নিয়ে আশংকায় থাকার কথাও জানিয়েছেন গ্রেস৷ বিপদের কথা চিন্তা করে, সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তাঁর চেহারা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না করার অনুরোধও করেন৷
চীনে ন্যাশনাল সুপারভাইজরি কমিশনকে দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি ও তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত, এমনকি আটকের ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে৷ এবং এ কাজে তেমন কোনো জবাবদিহিতার মুখোমুখিও হতে হয় না কমিশনকে৷
আইন অনুযায়ী, কাউকে আটক করা হলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের এ ব্যাপারে জানানোর কথা থাকলেও জাতীয় নিরাপত্তা, জঙ্গিবাদ অথবা তথ্য পাচারের অভিযোগ ইস্যুতে কমিশনের সদস্যদের ছাড় দেয়া হয়েছে৷
এই কমিশন গঠন হওয়ার পর থেকে কোনো তথ্য ছাড়াই কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত আটকে রাখা হয়েছে অনেককেই৷ তবে ইন্টারপোলের প্রথম চীনা প্রেসিডেন্ট মেং কোন ইস্যুতে চীন সরকারের তদন্তের মুখোমুখি হতে পারেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি৷
২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু করেন৷ তাঁর এই উদ্যোগে ছয় বছরে ১০ লাখেরও বেশি সরকারি কর্মকর্তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ চীনাদের কাছে এই অভিযান বেশ জনপ্রিয় হলেও এর মাধ্যমে শি তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের ঘায়েল করছেন বলেও মনে করেন বিশ্লেষকরা৷
এডিকে/এসিবি (এএফপি, এপি, রয়টার্স)