গেমারদের বার্নআউট রুখতে উদ্যোগ বাড়ছে
২৭ এপ্রিল ২০২১গেমিং শিল্পে সক্রিয় চিকিৎসকেরা বহু বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত ট্রেনিং, ঘুমের ঘাটতি ও অপরিক্ষীত সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন৷ গেমার ডাক্তার হিসেবে লিন্ডসে মিলিয়োরে মনে করেন, ‘‘বার্নআউট অনেক ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে পড়ছে৷ দুর্ভাগ্যবশত এ বছর গেমিং জগতে বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ অ্যাথলিটদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে৷ এর প্রভাব এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে৷ আমরা যেভাবে গেমারদের বাড়াবাড়ি মাত্রায় তাতিয়ে রাখি, সেটাও এর বড় কারণ৷ তাদের ভালোভাবে সাহায্য করি না৷ মনে রাখতে হবে, গেমিং সময় কাটানোর উপায় হলেও ই-স্পোর্টস কিন্তু একটা পেশা৷''
গেমিংয়ের ক্ষেত্রে বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করা হয় বলে ‘এক্সসেল ইস্পোর্টস'-এর মতো পেশাদারী গেমার টিম খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে বড় পরিবর্তন আনছে৷ পারফর্মেন্স কোচ হিসেবে ফাবিয়ান ব্রইশ বলেন, ‘‘আমরা রক্ত পরীক্ষা করি, পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করি৷ আমরা খেলাধুলা করি, ট্র্যাকারের সাহায্যে ঘুমের উপর নজর রাখি, যেমনটা এনবিএ লিগে করা হয়৷ আমি পারফর্মেন্স কোচ হিসেবে কাজ করি৷ গেমারদের কম খেলতে বলতে বেশ অদ্ভুত লাগে৷ কারও বার্নআউট অথবা সমস্যা হলে তাদের বদলে ফেলা হয়৷ আমার মতে, সংগঠনই পুরোপুরি বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর জন্য দায়ী৷ কোনো অ্যাথলিট কেন এমন জীবনযাত্রা বেছে নেয়?''
ধীরে ধীরে আরও বেশি ই-স্পোর্টস টিম গেমারদের চুক্তিতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পদক্ষেপ অন্তর্গত করছে৷ যেমন কমন রুম, ব্যক্তিগত রাঁধুনী, ফিটনেস কোচ, পারফর্মেন্স কোচ এবং ফিজিওথেরাপি ও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরামর্শের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে৷ তবে পেশাদারী গেমারদের সক্রিয় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে খুব কম বিধিনিয়ম চালু রয়েছে৷ ফাবিয়ান ব্রইশ বলেন, ‘‘তারা খুবই কম ঘুমায়৷ সময়ের কোনো ঠিকঠিকানা নেই৷ ভোর তিনটে বা পাঁচটার সময় ঘুমাতে যায়, যথেষ্ট সূর্যের আলো পায় না, শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রা কম৷ সাধারণত তাদের কোনো রাঁধুনী নেই৷ ফলে ভালো করে খাওয়াদাওয়া হয় না৷
ফুটবলের ক্ষেত্রে যেমন টিমের কোচ থাকে, ই-স্পোর্টসের ক্ষেত্রে তেমন কোচের লাইসেন্স এখনো চালু হয় নি৷ অনেক টাকা আয় করা ভালো কথা, কিন্তু কাউকে যদি ২৫ বা ৩০ বছর বয়সে কাজের জগত থেকে বিদায় নিতে হয়, সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক৷ সারা জীবন ধরে খারাপ স্বাস্থ্যের বোঝা বইতে হয়৷''
ওলোফমাইস্টার আবার নিজের ‘ফেজ ক্ল্যান' টিমের সঙ্গে পেশাদারী পর্যায়ে খেলতে শুরু করেছেন৷ সেরে ওঠার পথ তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ ছিল৷ ওলোফ কাইবিয়ার গুস্তাফ্সশোন নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমি আরও খেলাধুলা করেছি এবং আরও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করেছি৷ তাতে আমার উপকার হয়৷ প্রকাশ্যে মানতে না চাইলেও অনেক গেমার আসলে প্রচণ্ড স্ট্রেসে ভোগে৷ কেউ কিছু না বললে তাদের জীবনযাত্রা একই রকম থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই ভালো নয়৷''
ই-স্পোর্টস জগত এখনো খুবই নতুন৷ আরও বেশি প্রতিযোগিতা এবং পুরস্কারের বেড়ে চলা অর্থের সঙ্গে সঙ্গে তরুণ পেশাদার গেমারদের শারীরিক ও মানসিক বার্নআউট এড়ানো অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে৷
আমেলিয়া হেমফিল/এসবি