1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণহত্যার সাফাই গাইতে আদালতে সু চি

১০ ডিসেম্বর ২০১৯

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানিতে দেশের হয়ে লড়তে নেদারল্যান্ডসের হেগে গিয়েছেন অং সান সু চি৷

https://p.dw.com/p/3UYbx
Japan Außenminister Taro Kono in Myanmar mit Aung San Suu Kyi
ফাইল ফটোছবি: Reuters/Stringer

মানবতা ও মানবাধিকারের পক্ষে লড়াইয়ের পুরস্কারস্বরূপ ২৮ বছর আগে যিনি শান্তিতে নোবেল জেতেন৷ গণতন্ত্রের পক্ষে অহিংস আন্দোলন করতে গিয়ে প্রায় ১৫ বছর গৃহবন্দি জীবন কাটানো সু চি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছিলেন৷

সেই সু চি ২০১৫ সালে বিপুল ভোটে জিতে মিয়ানমারের ক্ষমতায় এসে পুরো ভোল পাল্টে ফেলেন৷

২০১৭ সালের অগাস্টে মিয়ানমারের কয়েকটি সীমান্ত স্থাপনায়  'বিচ্ছিন্নতাবাদীদের' হামলার পর পশ্চিমের রাখাইন রাজ্যে বিশেষ করে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় সেনা অভিযান শুরু হয়৷

‘সন্ত্রাস দমনের' নামে ওই সেনা অভিযানে গণহত্যা, গণধর্ষণ, নির্যাতন এবং বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠে৷  প্রাণ বাঁচাতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়৷

কয়েকটি স্বাধীন ফ্যাক্টফাইন্ডিং কমিটি ওই অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার দাবি করেছে এবং জাতিসংঘ মিয়ানমারের সেনা অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন' বলে বর্ণনা করেছে৷ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন থেকেও অভিযানের তীব্র সমালোচনা করে জড়িত সেনাকর্মকর্তাদের বিচারের দাবি করা হয়৷

নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে লাখ লাখ মানুষকে দেশ ছাড়তে দেখেও ‘নিষ্ক্রিয়' ভূমিকায় ছিলেন সু চি৷

মঙ্গলবার প্রথম দিনের শুনানিতে গাম্বিয়া নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে৷ বুধবার মিয়ানমার নিজেদের পক্ষে ব্যাখ্যা দেবে৷ তিন দিনের এ শুনানির তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য গ্রহণ হবে৷ এজন্য বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের তিন প্রতিনিধি হেগে গেছেন৷ যারা আদালতে নিজেদের উপর হওয়া নিপীড়নের বর্ণনা দেবেন৷

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর আইসিজে তে এটি তৃতীয় গণহত্যা মামলার শুনানি৷

ওআইসিভুক্ত পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া গত নভেম্বরে মিয়ানমারের  বিরুদ্ধে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এর শাস্তির বিধানে ১৯৪৮ সালে স্বাক্ষরিত ‘জেনোসাইড কনভেনশন' লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এ মামলা করে৷

গাম্বিয়া নিজেও ওই কনভেনশনে স্বাক্ষরকারি দেশ এবং ১৯৫৬ সাল মিয়ানমারও স্বাক্ষর করে৷

কনভেনশনের আওতায় দেশগুলো শুধু গণহত্যা থেকে বিরত থাকাই নয় বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা এবং এমন অপরাধের জন্য শাস্তি বিধানেও বাধ্য।

৫৭ সদস্যের ওআইসির বাকি সদস্যরাষ্ট্রগুলো গাম্বিয়াকে সমর্থন দিয়েছে৷  এছাড়া কানাডাও গাম্বিয়ার পক্ষে৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কানাডা সু চিকে দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করেছে৷ শান্তিতে তার নোবেল বাতিলের দাবিও উঠেছে৷

নভেম্বরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে করা মামলায় গাম্বিয়া মিয়ানমারে ‘এখনো গণহত্যা চলছে' অভিযোগ তুলে তা বন্ধে দেশটির বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে৷

গাম্বিয়ার মামলার পর আইসিজে থেকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হয় এবং সু চি নিজে দেশর প্রতিনিধি দলের প্রধান হয়ে হেগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানান৷

এক সময় মানবতার পক্ষে কথা বলে বিশ্বজুড়ে নায়কের খ্যাতি পাওয়া সু চি  তার দেশের সেনাবাহিনীর হত্যাযোজ্ঞের পক্ষে সাফাই দিতে আদলতে দাঁড়িয়েছেন৷ যদিও সু চির ব্যাখ্যা তিনি দেশের স্বার্থরক্ষায় আইসিজে তে এসেছেন৷

এদিকে, হেগে শুনানি শুরুর একদিন আগে থেকে রোহিঙ্গা মুসলমান সমর্থক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ‘বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন' শুরু করে৷

রোহিঙ্গা অধিকার নিয়ে বিশ্বজুড়ে কাজ করা সংগঠন ‘দ্য ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন'(এফআরসি)  এক বিবৃতিতে বলেছে, ১০টি দেশের ৩০টি মানবাধিকার সংগঠন একযোগে এ ক্যাম্পেইন শুরু করছে৷ তারা সবাইকে এই ক্যাম্পেইনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷

রোহিঙ্গা গণহত্যার জন্য মিয়ানমারকে বিচারের আওতায় আনতে যে ১০টি সংগঠন গাম্বিয়াকে সহায়তা করছে, তাদের একটি হল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)৷

এইচআরডব্লিউর পরিচালক পরম-প্রীত সিং এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, "গাম্বিয়ার এই আইনি পদক্ষেপের ফলে বিশ্বের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এখন আদালত রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিতে পারবে৷

১৯৯৩ সালে বসনিয়ায় গণহত্যার বিচারের শুরুতে আইসিজে সার্বিয়ার বিষয়ে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা নিয়েছিল৷

আইসিজে মূলত প্রতিপক্ষ দেশগুলোর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করে৷ আর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)  ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের শাস্তি দেয়৷

এসএনএল (রয়টার্স)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য