1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণমাধ্যমের ঈদ আয়োজনে উপলক্ষ লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যায়

২১ এপ্রিল ২০২৩

'এপ্রিল সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম মাস/প্রজননমৃত ভূমি থেকে লিলাক ফুল বেরিয়ে আসছে/মিশে যাচ্ছে স্মৃতি ও আকাঙ্ক্ষা, উদ্দীপনা/বসন্তের বৃষ্টিতে নিস্তেজ শিকড়৷'- টি এস ইলিয়টের কবিতায় এপ্রিল খুব বেদনায়ক মাস৷

https://p.dw.com/p/4QPIj
Bangladesch Eid ul-Fitr
ফাইল ফটো৷ ছবি: Getty Images/AFP

কিন্তু তীব্র গরমের মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ মাসটা দ্বিগুণ আনন্দময়৷ একদিকে পয়লা বৈশাখ আরেকদিকে ঈদ-এক মাসেই দুটি উৎসবের দেখা মিলছে৷ ঈদ যতটা ধর্মীয় অনেক সময় তার চেয়ে  বেশি উৎসবের৷ এই উৎসব মানুষের, সমষ্টির আনন্দের৷ কালের বিবর্তনে উৎসব আয়োজনের নানা উপাদান যেমন বিস্মৃত হয়ে গেছে তেমনি যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন নতুন উপাদান৷ নিঃসন্দেহে গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে গণমাধ্যম ঈদ উদযাপনের ক্ষেত্রে একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷ পত্রিকাগুলো ঈদসংখ্যা আর টেলিভিশনগুলো নানা অনুষ্ঠানের পসরা সাজিয়ে দেশবাসীর ঈদ উদযাপনকে অনেক বেশি বিনোদনে রাঙাতে চায়৷ এর সাথে হাল আমলে যুক্ত হয়েছে নানান অনলাইন প্ল্যাটফর্ম৷ তবে মানের নিম্নমুখীতা আর বাণিজ্যিক স্বার্থের প্রাধান্যের কারণে গণমাধ্যমের নানা ধরনের ঈদ আয়োজন বরাবরের মতো সমালোচনার সম্মুখীন হয়৷ গণমাধ্যমের ঈদ আয়োজনের প্রধান লক্ষ্য বিনোদনকে ছাড়িয়ে ব্যবসায়িক উপলক্ষ যখন মুখ্য হয়ে পড়ে তখন সেসব আয়োজন পাঠক-দর্শকের মানসিক স্বস্তির চেয়ে পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷    

বাংলা পত্রিকার ঈদ সংখ্যার ইতিহাস শত বছরের বেশি পুরানো৷ যতদূর জানা যায়, ১৯০৩ সালের ডিসেম্বরে সৈয়দ এমদাদ আলী সম্পাদিত নবনূর পত্রিকাই প্রথম ঈদ-সংখ্যা প্রকাশ করেছিল৷ সাহিত্য নির্ভর প্রকাশনার মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের ধারণা বাংলায় প্রথম প্রবর্তন করেছিল নবনূর পত্রিকা৷ এরপর ঈদ সংখ্যা বের করে ১৯৩৬ সালের ডিসেম্বরে সিলেট থেকে প্রকাশিত মাসিক আল ইসলাহ৷ সাপ্তাহিক মোহাম্মদী ১৯৩৮ সালে এবং মাসিক মিল্লাত ১৯৪৬ সালে ঈদ সংখ্যা বের করেছিল৷ কলকাতায় ১৯৪৮ সালে ৬২ জন নারী লেখকের লেখা নিয়ে বেগম পত্রিকার প্রথম ‘ঈদসংখ্যা বেগম' প্রকাশিত হয়েছিল৷ একসাথে এতজন নারী লেখকের লেখা তখনকার সময়ে আর কোনো পত্রিকায় ছাপা হয়নি, এখনও হয় না৷ স্বাধীন বাংলাদেশে সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রথম ঈদসংখ্যা প্রকাশ করেছিল৷ এরপর আশি ও নব্বইয়ের দশকে পূর্বাণী, সচিত্র সন্ধানী, চিত্রালী, রোববার, তারকালোক, শৈলী, সাপ্তাহিক ২০০০-এর ঈদসংখ্যাগুলো পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছিল৷ বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো গত শতক পর্যন্ত ঈদে কয়েক পৃষ্ঠার বিশেষ সংখ্যা বা সাপ্লিমেন্ট প্রকাশ করতো৷ এখনকার দৈনিকগুলো ৫০০-৬০০ পৃষ্ঠার যে ঢাউস সাইজের ম্যাগাজিন আকারে ঈদ সংখ্যা বের করে তার প্রচলন শুরু হয়েছিল ২০০০ সালে দৈনিক যুগান্তরের হাত ধরে৷ ২০০২ সালের পর থেকে অন্য দৈনিকগুলো এ ধরনের ঈদসংখ্যা বের করা শুরু করে৷ এখন শুধু ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিকই নয়, রাজধানীর বাইরে বিভিন্ন আঞ্চলিক দৈনিকও ঈদ ম্যাগাজিন প্রকাশ করছে৷ বাংলাদেশে এখন ঈদে ৩০-৪০টি দৈনিক ঈদসংখ্যা বের করে থাকে৷ শিশু-কিশোরদের জন্য ২০২২ সালে প্রথম ঈদসংখ্যা প্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷

Bangladesch | Wahlen | Talkshow
মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়৷ছবি: bdnews24.com

প্রযুক্তির প্রভাব আর পাঠকের রুচির পরিবর্তনে বাংলাদেশে সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর প্রভাব কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও দৈনিক পত্রিকাগুলোর ঈদ সংখ্যার ব্যাপকতা বেড়েছে৷ কিন্তু একটি অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায় যে, সংখ্যা ও কলেবরে দৈনিক পত্রিকাগুলোর ঈদসংখ্যা যতটা বেড়েছে মানের দিকে ততটাই নিম্নগামী হয়েছে৷ এক সময় ঈদ সংখ্যা ছিল তরুণ-কিশোর বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালির ঈদ আকর্ষণের একটা বড় বিষয়৷ ঈদ সংখ্যাগুলো সংগ্রহ করা ও সেগুলো পড়ার জন্য পাঠকদের মধ্যে একটা উত্তেজনা ও আবেগ কাজ করতো৷ তখন ঈদসংখ্যাগুলো ছিল উৎসবেরই অংশ৷ বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছুটির অলস দিনগুলো পার করার অপার সঙ্গী ছিল এই ঈদসংখ্যাগুলো৷ কিন্তু এখন ঈদসংখ্যাগুলো আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু একঘেঁয়েমিতে ভরা৷ বৈচিত্র্যতার দিক থেকে চিন্তা করলে এ অভিযোগ একেবারে অমূলক নয়৷ ঈদ সংখ্যার অবয়ব, শৈলী ও বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যতার দিক থেকে সাপ্তাহিক বিচিত্রা যে আধুনিকতার ছোঁয়া বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে যুক্ত করেছিল পাঁচ দশক পরেও বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলো সে জায়গাতেই আটকে আছে৷ অন্যভাবে বলা যায়, বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো ফি বছর যে ঢাউস সাইজের ঈদসংখ্যা প্রকাশ করে তার গঠন ও অবয়ব আসলে সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো থেকে ধার করা৷

স্বাধীনতার আগে যেসব বাংলা পত্রিকা ঈদ সংখ্যা বের করতো সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল শুধু ঈদকেন্দ্রিক ও সাহিত্য নির্ভর৷ এক্ষেত্রে নবনূর, আল ইহসান, মিল্লাতের প্রকাশনার কথা বলা যায়৷ স্বাধীনতার পর সাপ্তাহিক বিচিত্রাসহ অন্যান্য সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো ঈদসংখ্যার বিষয়বস্তুতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছিল৷ দেশি ফ্যাশন, বিনোদনসহ যেসব আনন্দ ও বৈচিত্র্যময় বিষয় সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো ঈদসংখ্যায় যুক্ত করেছিল সেগুলোতেই এখনও আটকে আছে দৈনিক পত্রিকাগুলো৷ সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর ঈদসংখ্যায় যথেষ্ট পরিকল্পনার ছাপ লক্ষ্য করা যেতো৷ এখনকার ঈদসংখ্যাগুলোতে পরিকল্পনার ছাপ দেখা যায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের প্রতিযোগিতায়৷ এখন বিজ্ঞাপন এত বেশি থাকে যে, কখনও কখনও মনে হতে পারে একটি বিজ্ঞাপনের ম্যাগাজিনে গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ ছাপা হচ্ছে৷ আশি-নব্বইয়ের দশকের সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর ঈদসংখ্যাগুলোতে প্রবন্ধ ও ফিচারগুলো ছাপা হতো ওই সময়কার সমসাময়িক নির্দিষ্ট ইস্যু বা বিষয়কে কেন্দ্র করে৷ এমনকি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগে মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত মাসিক মিল্লাতেও ১৯৪৬ সালের ঈদসংখ্যায় তৎকালীন দাঙ্গার কারণে ঈদসংখ্যার শিরোনাম ছিল ‘আজিকার দিনেও খাদ্য নষ্ট করবেন না৷' সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত ‘আপনার বাড়ির পাশের অন্তত একজন টোকাইকে আপনার শিশুর সাথে ঈদের কাপড় উপহার দিন'-এমন উদাত্ত আহ্বান সম্বলিত রনবীরের ‘টোকাই সমিতি' কার্টুন এখনকার ঈদসংখ্যায় চোখেই পড়ে না৷ ঈদসংখ্যাগুলোর বড় একটি আধেয় হলো উপন্যাস৷ সৈয়দ শামসুল হকের 'নিষিদ্ধ লোবান', মহাশ্বেতা দেবীর ‘চোট্টি মুণ্ডা ও তার তীর', শওকত আলীর ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন', 'উত্তরের খেপ', হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘মহাপুরুষ', হুমায়ুন আহমেদের 'অপরাহ্ন', 'সৌরভ', ‘রূপার পালঙ্ক', ইমদাদুল হক মিলনের 'পরাধীনতা', হুমায়ূন আজাদের 'কবি অথবা দণ্ডিত পুরুষ'-এর মত বিখ্যাত উপন্যাসগুলো আমরা পেয়েছিলাম ঈদসংখ্যা থেকেই৷ এখনকার ঈদসংখ্যাগুলোতে এমন উপন্যাস তো দেখা যায়ই না, উপরন্তু বেশিরভাগ উপন্যাসের নামে থাকে প্রকাশিতব্য উপন্যাসের সারসংক্ষেপ৷ আর যেসব ছোটগল্প এখন ছাপা হয় তার বেশিরভাগই রবীন্দ্রনাথের "ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা, ছোট দুঃখ ছোট কথা … শেষ হয়ে হইল না শেষ” – এমন ধারণাকে অসার প্রমাণের জন্যই যেন প্রকাশিত হয়৷

একবিংশ শতাব্দীতে এসে ‘টেলিভিশন বুম’ বা বিস্ফোরণ ঘটার পর ঈদ উৎসবের একটা বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে টিভি অনুষ্ঠানগুলো৷ একদিনের ঈদ আনন্দকে টেনে সাতদিন-দশদিনে নিয়ে যেতে এই বোকার বাক্স চ্যানেলগুলোর জুড়ি মেলা ভার৷ কিন্তু গত এক দশকে একই ধরনের অনুষ্ঠান সূচি, কাহিনী ও প্লটহীন নাটক-টেলিফিল্ম, এবং বিজ্ঞাপন আধিক্যের কারণে অনেকেই টেলিভিশনের বিনোদনকে ‘ঈদ নির্যাতন' হিসেবে বলে থাকেন৷

গত কয়েক বছরের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোর ঈদের অনুষ্ঠানের আধেয় বিশ্লেষণ করলে কিছু বৈশিষ্ট্য সহজেই অনুমেয় হয়৷ বাংলাদেশে এখন ৪৫টি টিভি চ্যানেল রয়েছে৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই বিনোদন চ্যানেল৷ প্রতি ঈদে এসব চ্যানেলের অনুষ্ঠানের ধরন, প্রচারের সময় এবং সর্বোপরি মানের ক্ষেত্রে এক অদ্ভুত সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়৷ টিভি চ্যানেলগুলোর সকালটা শুরু হয় বাংলা ছায়াছবি দিয়ে, দুপুর গড়াতেই শুরু হয় টেলিফিল্ম আর সন্ধ্যা থেকে চলে নাটক ও বিজ্ঞাপনের অত্যাচার, রাতটা শেষ হয় লাইভ স্টুডিও কনসার্ট দিয়ে৷ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ঈদকে ঘিরে এত টিভি অনুষ্ঠানের সমাহার বেশিরভাগ অনুষ্ঠানের আধেয়ে ঈদ বলেই কিছু থাকে না৷ যেমন-বাংলাদেশের বিনোদন চ্যানেলগুলোর সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ঈদ অনুষ্ঠান হলো নাটক ও টেলিফিল্ম৷ গত ঈদে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে ২০০-২৫০ নাটক ও টেলিফিল্ম প্রচারিত হয়েছিল যার ৯৯ শতাংশের মধ্যে ঈদ বলে কিছুই ছিল না৷ যে উৎসবকে ঘিরে টেলিভিশনগুলোর আধেয় সাজানো হচ্ছে সেসব আধেয়ের মধ্যেই সেই উৎসবের রেশমাত্র নেই - এমনটা বিশ্বের অন্য কোনো দেশের বিনোদন চ্যানেলে পাওয়া যাবে না৷ অর্থাৎ ঈদ-কেন্দ্রিক নাটক, সিনেমা, টেলিফিল্ম প্রচার হতে আমরা দেখি না৷ উপরন্তু গত কয়েক বছরে ঈদে ধারাবাহিক নাটকের নামে এক ধরনের নতুন ভাঁড়ামি শুরু হয়েছে৷ 'আরমান ভাই' কিংবা 'সিকান্দার বাকশ' জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর থেকে জাহিদ হাসান কিংবা মোশাররফ করিম মত শক্তিশালী অভিনেতাকে হাসির পাত্র বানিয়ে বিনোদনের নামে আবর্জনাতুল্য এই ধারাবাহিকের গণ্ডি থেকে বের হতে পারছে না ঈদ নাটকগুলো৷

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর ঈদ অনুষ্ঠান দেখলে মনে হতেই পারে ঈদ যেন মানুষের জীবনে হঠাৎ করে আসা কোনো উপলক্ষ৷ এর সাথে মানুষের জীবনের বাকি সময়টার কোনো সংযোগ নেই৷ শুধু ঈদ নয়, যে কোনো সময় বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোর বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলোর দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে না পারার পেছনে দায়ী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি৷ বাংলাদেশের যে কোনো টিভি নাটকের চেয়ে জি বাংলা, স্টার জলসার সিরিয়ালগুলো অনেক বেশি জনপ্রিয়৷ শারদীয় দুর্গা পূজার সময় এসব ভারতীয় টিভি চ্যানেল নতুন কোনো নাটক সম্প্রচার করে না৷ বার মাসে তের পূজোর অনুষ্ঠানকে তারা প্রতিদিন প্রচারিত নাটকগুলোর বিষয়ের মধ্যে ফুটিয়ে তুলে৷ ফলে ওই নাটকগুলোর অনেক বিষয়কে দর্শকদের নিজেদের জীবনের অংশ মনে হয়৷ বিটিভির ঈদের আনন্দমেলা, ইত্যাদি, শুভেচ্ছার মত একটি শক্তিশালী ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান গত দুই দশকে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো উপহার দিতে পারেনি৷ ফজলে লোহানী'র ‘যদি কিছু মনে না করেন'- এর মত ঈদ অনুষ্ঠানের আশা তো সুদূর পরাহত৷

উৎসবকেন্দ্রিক গণমাধ্যমের পরিবেশনার তাত্ত্বিক আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংস্কৃতির গণমাধ্যমীকরণ বা মিডিয়াটাইজেশন অব কালচার৷ সফল গণমাধ্যমগুলো সংস্কৃতিকে এমনভাবে চিত্রিত করে যাতে মানুষ এগুলো তাদের নিত্যদিনের আর স্বাভাবিক জীবনের অংশ হিসেবে ভাবতে পারে৷ এতে দর্শকরা গণমাধ্যমের আধেয়ের সাথে নিজেদের অঙ্গীভূত করতে পারে৷ আর দর্শক হৃদয় জয় করতে পারলে লগ্নির অর্থ যে উঠে আসবে তা বলাই বাহুল্য৷  কিন্তু বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো পুঁজি ও ব্যবসায়িক স্বার্থের আশায় উৎসব আর সংস্কৃতিকে নিজের মত করে চিত্রায়ণ করে, যেখানে বিজ্ঞাপনদাতা আর এজেন্সির চাহিদাকে দর্শকদের চাহিদার চেয়ে বড় করে দেখা হয়৷ গণমাধ্যম যে কোনো উৎসবকেন্দ্রিক আয়োজনে পাঠক-দর্শকের সুস্থ বিনোদনকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হিসেবে ঘোষণা করে৷ কিন্তু বিজ্ঞাপনের বাজার ধরতে গিয়ে পরিকল্পনাহীন, মানহীন বিষয়বস্তুর আধিক্য যখন সে লক্ষ্যকে ছাড়িয়ে যায় তখন সেটি আর বিনোদন থাকে না৷ কখনও কখনও তা পাঠক-দর্শকদের জন্য হয়ে যায় নির্যাতন৷ কিন্তু মনে রাখতে হবে অন্তর্জালের ব্যাপক বিস্তৃত যুগে পাঠক-দর্শকদের হাতে অনেক বিকল্প আছে৷ বেসরকারি টিভির মানহীন অনুষ্ঠান আর বিজ্ঞাপনের নির্যাতন সহ্য করার চেয়ে যে কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্ম থেকে নিমিষেই বিনোদন খুঁজে নিচ্ছে তারা৷ এত টিভি চ্যানেল আর এত অনুষ্ঠানের মাঝেও কেন বাংলাদেশী দর্শকরা ঈদের সময় ভারতীয় বাংলা চ্যানেল দেখে তা নিয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ আছে৷ বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর ঈদ সংখ্যার চেয়ে কলকাতার শারদীয় সংখ্যাগুলোর দিকে বাংলাদেশী পাঠকের এত মোহ কেন তা জানাটা মুদ্রণ মাধ্যমের জন্য জরুরি৷ ঈদ সংখ্যা বা ঈদ অনুষ্ঠান যাই হোক না কেন-তা কেন এখন আর মানসিক স্বস্তির আয়োজন করতে পারছে না তা বাংলাদেশের গণমাধ্যম শিল্পের সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান