1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

করোনাকালেও বিষাক্ত মিথানলে মৃত্যু

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বগুড়া ও গাজীপুর মিলিয়ে ‘বিষাক্ত মদ’ পানে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ মৃত্যুর কারণ বার্নিশের কাজে ব্যবহার্য বিষাক্ত মিথানল৷ প্রতি লিটারে দাম মাত্র ৫০ টাকা হলেও উচ্চ মূল্যে তা দেশি মদ হিসেবে বিক্রি হয়৷

https://p.dw.com/p/3owu6
অ্যালকোহল পানের প্রতীকি ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Fotolia/Africa Studio

বগুড়ায় ১৯ জন এবং গাজীপুরের একটি রিসোর্টে তিন জনের মৃত্যুর জন্য এই মিথানলই দায়ী বলে মনে করছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বলে জানানো হয়েছে৷

অতি লাভের বলি?
ইথানল ফার্মাসিউটিক্যালস ও হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানে ব্যবহার করা হয়৷ জানা গেছে, সাধারণভাবে ইথানল দেশি মদ বলে চালানো হয়৷ এর প্রতি লিটারের দাম ৪০০ টাকা৷ এতে ৯০ থেকে ৯৬ ভাগ অ্যালকোহল থাকে এবং এগুলো মদ হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ৷ আর রঙ ও বার্নিশের কাজে ব্যবহার করা হয় মিথানল, যাতে শতভাগ অ্যালকোহল৷ রঙ ও বার্নিশের কাজে ব্যবহার করা হয় বলে এতে বিষাক্ত ট্যাবলেট মেশানো হয়৷ এর প্রতি লিটারের দাম ৫০ টাকা৷ বেশি লাভের আশায় সরাসরি ইথানল বা ইথানলের সাথে মিথানল মিশিয়ে বিক্রি করা হয়৷ কখনো কখনো মেশানো হয় ঘুমের ট্যাবলেট৷ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘এই উচ্চ মাত্রার অ্যালকোহল পানে মৃত্যু প্রায় অবধারিত৷ আর কেউ বেঁচে থাকলেও পঙ্গু হয়ে যান৷’’

উচ্চ মাত্রার অ্যালকহল পানে মৃত্যু প্রায় অবধারিত, কেউ বেঁচে থাকলেও পঙ্গু হয়ে যান: ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা

বাংলাদেশে এর আগেও একই ধরনের বিষাক্ত মদ পানে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৮ সালে গাইবান্ধায় পহেলা বৈশাখের সময় ৭১ জন, ২০২০ সালে বগুড়াতেই ২২ জন মারা যান৷

যেখানে পাওয়া যায়

বাংলাদেশে ইথানল ও মিথানল আমাদানি হয়, স্থানীয়ভাবে উৎপাদনও হয়৷ একটি সরকারি এবং চারটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন উৎপাদনে আছে৷ দুই মাস আগে অনিয়মের অভিযোগে রংপুর ডিস্টিলারির উৎপাদন বন্ধ করে দেয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর৷ আর ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি অনুমতি নিয়ে তাদের কাজে বাইরে থেকে আমদানি করে ইথানল ও মিথানল৷ অভিযোগ আছে, দুই উৎস থেকেই এসব মদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য বাইরে বিক্রি হয়৷ বগুড়ার একটি হোমিওপ্যাথিক দোকানে দুই হাজার ৫৫০ লিটার এই ধরনের স্পিরিট পাওয়া গেছে৷ কিন্তু তার অনুমোদন আছে বছরে মাত্র ৩০ লিটারের৷ ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা জানতে চান, ‘‘তাহলে তারা এত স্পিরিট দিয়ে কী করে?’’

সারা দেশে অনুমোদিত মদের দোকান আছে ২০৩টি৷ কিন্তু এর বাইরে অবৈধ মদের দোকান আছে কয়েকগুণ৷ নানা ধরনের প্রভাব আর ক্ষমতার ব্যবহার করে এইসব অবৈধ দোকান পরিচালনা করা হয়৷ আর বাইরে কিছু হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানেও এই ব্যবসা চলে৷

রেক্টিফাইড স্পিরিটের সাথে মিথানল মিশিয়ে বিক্রি করেছিল: ওসি হুমায়ুন কবির

বগুড়ায় ৫ হোমিও দোকান
ড. দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, ‘‘বগুড়ার ঘটনায় আমরা ময়না তদন্ত ও সুরতহাল রিপোর্ট পেলে মূল কারণ নির্ণয় করতে পারবো৷ প্রাথমিকভাবে বিষক্রিয়া বলা হয়েছে৷ তবে এর আগে গাইবান্ধা এবং এই বগুড়ায় একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে৷ ওই সময় যারা মারা গেছেন, তারা মিথানল পানে মারা গেছেন৷ এবারও একই ঘটনা ঘটেছে বলেই মনে হচ্ছে৷’’

বগুড়ার ঘটনায় পাঁচটি হোমিওপ্যাথিক ওষুধের দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ যারা মারা গেছেন, তারা ওই পাঁচটি দোকান থেকেই বিষাক্ত মদ কিনে খেয়েছিলেন৷ দোকান গুলো হলো: পারুল হোমিও, পূনম হোমিও, খান হোমিও, করতোয়া হোমিও এবং নূর হোমিও৷ পারুল হোমিওর মালিক নূরুন্নবীসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এছাড়া এক হাজার ৫০০ লিটার স্পিরিট জব্দ করা হয়েছে৷ বগুড়া সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘‘তদন্তে জানতে পেরেছি, রেক্টিফায়েড স্পিরিটের সাথে তারা মিথানল মিশিয়ে বিক্রি করেছিল৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য