1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শত্রুঘ্নর ঐতিহাসিক জয়, জয় বাবুলের

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৬ এপ্রিল ২০২২

পশ্চিমবঙ্গের দু'টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জয় পেল তৃণমূল কংগ্রেস৷ আসানসোল লোকসভা ও বালিগঞ্জ বিধানসভায় জয় পেয়েছে শাসকদল৷

https://p.dw.com/p/4A1Xp
শত্রুঘ্ন সিনহা তিন লক্ষ ভোটে জয়ী হয়েছেনছবি: Imago Images/Hindustan Times

গত ১২ এপ্রিল রাজ্যের দু'টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়৷ আজ সকাল আটটায় শুরু হয় গণনা৷ বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে শাসক দলের প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় জিতেছেন ১৯ হাজার ৯০৪ ভোটে৷ তিনি পেয়েছেন ৫০ হাজার ৭২২ ভোট৷ সায়রা শাহ হালিম পেয়েছেন ৩০ হাজার ৮১৮ ভোট৷ আর বিজেপির কেয়া ঘোষ পেয়েছেন ১২ হাজার ৯৬৭ ভোট৷

বিজেপির কাছ থেকে আসানসোলের আসন ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল৷ এই কেন্দ্রে গত দু'বারের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেওয়ায় উপনির্বাচন করাতে হয়৷ বালিগঞ্জে প্রবীণ বিধায়ক ও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় প্রয়াণে আসনটি শূন্য হয়েছিল৷

‘সার্বিক ভাবে সংখ্যালঘু ভোটাররা তৃণমূলের পক্ষে রয়েছেন’

দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা মুসলিম প্রধান৷ এই বিধানসভার ৫১ শতাংশ ভোটার মুসলিম৷ এখানকার সাতটি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত পাঁচটিতে মুসলিম ভোটারের সংখ্যা ৬০ শতাংশের বেশি৷ বিজেপি-ফেরত বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে মুসলিমদের একটা বড় অংশের অসন্তোষ চাপা থাকেনি৷ তাই এক বছর আগে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের ৭৫ হাজার ভোটে জেতা আসন নিয়েও কিছুটা চাপে ছিল শাসক দল৷ বালিগঞ্জে জিতলেও ব্যবধান অনেক কমেছে তৃণমূলের৷ দুই কেন্দ্রে জয়ের পর জনতাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

Indien | Wahlkreis Ballygunge in Kalkutta
বাবুল সুপ্রিয় জিতেছেন ১৯ হাজার ৯০৪ ভোটেছবি: Subrata Goswami/DW

বালিগঞ্জের ভোট প্রচারে তৃণমূলের পর বিজেপি সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান হলেও প্রথম কয়েকটি রাউন্ডে গেরুয়া শিবির ছিল চতুর্থ স্থানে৷ গণনা শেষে তারা কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে৷ সিপিএমের সায়রা হালিম দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন৷ গত নির্বাচনে এই আসনে লড়ে মাত্র আট হাজারের কিছু বেশি ভোট পেয়েছিলেন তার স্বামী সিপিএমের ফুয়াদ হালিম৷ সেই ভোট ৩০ হাজারের উপরে নিয়ে গিয়েছেন সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী সায়রা৷ বাবুল বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকাকালীন এনআরসি-র পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন৷ তাই মুসলিম ভোটের একটা বড় অংশ তার পাশে থাকেনি বলে মনে করা হচ্ছে৷

এই পরিস্থিতি আঁচ করে ভোটের প্রচারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ব্যক্তিকে দেখে নয়, দল দেখে ভোট দিন৷ বাবুল এখন জয় শ্রীরাম ছেড়ে জয় বাংলা বলছেন৷ কিন্তু বালিগঞ্জে গতবার দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি এত ভোট হারালো কেন? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘এটা সংখ্যালঘু প্রধান এলাকা৷ তাই আমাদের সম্ভাবনা কমই ছিল৷ এছাড়া উপনির্বাচন বলে আমাদের ভোটারদের অধিকাংশ ভোট দিতে বের হননি৷''

যদিও রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি বালিগঞ্জ নিয়ে আশাবাদী ছিল৷ বিশেষত রামপুরহাটে গণহত্যার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছিল প্রচারে৷ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সংখ্যালঘুদের বার্তা দিয়ে বলেছিলেন তৃণমূলকে যারা ভোট দিয়েছেন তাদের রামপুরহাটের ঘটনা থেকে বোঝা উচিত, কাদের তারা সমর্থন করেছেন৷ যদিও বালিগঞ্জের ভোটের ফলে তৃণমূলের খোয়ানো ভোট বামেদের ঝুলিতে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বালিগঞ্জে সংখ্যালঘুদের একাংশ মুখ ফিরিয়েছে ঠিকই৷ কিন্তু আসানসোলের সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের উপরই আস্থা রেখেছেন৷ সার্বিক ভাবে সংখ্যালঘু ভোটাররা তৃণমূলের পক্ষে রয়েছেন৷''

বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত সরকারি ভাবে ঘোষণা না হলেও ইতিহাস তৈরি করে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা তিন লক্ষ ভোটে জয়ী হয়েছেন৷ সাড়ে ছয় লাখের উপরে ভোট পেয়েছেন তিনি যা মোট ভোটদাতার ৫৫ শতাংশের বেশি৷ আসানসোলে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বিজেপি ১ লক্ষ ৯৭ হাজার ভোটে জিতেছিল৷ এর থেকে বেশি ব্যবধানে সেই আসন তারা এ বার হারিয়েছে৷ তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একের পর এক কারখানা কেন্দ্রীয় সরকার বন্ধ করেছে৷ তার উপর জ্বালানি থেকে জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী৷ এর জবাব মানুষ দিয়েছে৷ আসানসোলের এক-তৃতীয়াংশের বেশি ভোটার অবাঙালি৷ এই জনতার একাংশ যে বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়েছে, সেই অনুমান করছেন পর্যবেক্ষকরা৷ আমতা, রামপুরহাট থেকে হাঁসখালি, বিভিন্ন ইস্যুতে বিজেপি পথে নামলেও তার প্রভাব উপনির্বাচনে অন্তত দেখা গেল না৷''

নীলাদ্রি বলেন, ‘‘গণহত্যা বা ধর্ষণের ঘটনায় তৃণমূল সমালোচিত হলেও জনতার উপর যে তার প্রভাব সেভাবে পড়েনি তা বোঝা গেল৷ তবে শাসক দলের নেতাদের তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ বা গ্রেফতার করলে তৃণমূলের সংগঠনে প্রভাব পড়তে পারে৷''