1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে মেয়েরা'

সমীর কুমার দে, ঢাকা২৭ জুলাই ২০১৫

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে ক'দিন আগেও মেয়েরা পানির বোতল, চিপস, ঝিনুকের মালা বিক্রি করত৷ আজ তারা ভাসছে উত্তাল সাগরে৷ সার্ফিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিতছে পুরস্কার৷ এতে তাদের সহযোগিতা করছে ‘কক্সবাজার লাইফ সেভিং সার্ফিং ক্লাব'৷

https://p.dw.com/p/1G5K8
Bangladesch Bildergalerie Surfer surfen Mädchen Kinder
ছবি: Getty Images/A. Joyce

বাংলাদেশে পারিবারিক ও সামাজিক বহু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে৷ তার মধ্যে মেয়েদের সার্ফিংয়ে আসা সহজ ছিল না৷ নাসিমা আক্তার নামে ১৮ বছরের এক দুরন্ত কিশোরী সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে গৌরবের পথে দৃপ্ত পায়ে প্রথম এগিয়েছেন৷ বঙ্গোপসাগরের বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা ছিল৷ মিতালি গড়ে উঠেছিল সমুদ্রের সঙ্গে৷ তিনি নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন এক অনন্য উচ্চতায়, যদিও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তাঁর সার্ফিং কেরিয়ার৷ বছর দেড়েক আগে তাঁকে বিয়ে দিয়ে দেন গরিব পিতা৷ আর সেই থেকে সার্ফিং থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান নাসিমা৷

Bangladesch Bildergalerie Surfer surfen Mädchen Kinder
চলছে প্রশিক্ষনছবি: Getty Images/A. Joyce

তবে নাসিমা চলে গেলেও ততদিনে অন্য মেয়েদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেছে সার্ফিং৷ দেশি-বিদেশি মানুষের নজর পড়েছে কক্সবাজারে মেয়েদের সাফিংর দিকে৷ এরপর নতুন করে মেয়েদের খুঁজতে শুরু করে সার্ফিং ক্লাবগুলো৷ পেয়েও যায়৷ তাদের একজন রিপা আক্তার (১২)৷ গত ২৭শে এপ্রিল কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত মেয়েদের সার্ফিং প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে সে৷ অথচ বছর দু'য়েক আগেও সমুদ্রসৈকতের ধারে পানির বোতল, চিপস আর ঝিনুকের মালা বিক্রি করত রিপা৷

দুই বোনের মধ্যে রিপাই বড়৷ তাই পরিবারের চাপ ছিল৷ তারপরও ধীরে ধীরে নামকরা সার্ফার হয়ে উঠেছে সে৷ রিপা নিজেই শুধু সার্ফিং করছে না, এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পরিবারকেও সহযোগিতা করছে৷ নিজে পেয়েছে নতুন সার্ফিং বোট৷

ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে রিপা জানাল, ‘‘বিচের ধারে পানির বোতল, চিপস ও ঝিনুকের মালা বিক্রি করার সময় ছেলেদের সার্ফিং করতে দেখতাম৷ আমরা পানিতে নামতে চাইলে বোট দিত না৷ কিন্তু ওরা সার্ফিং শেষে চলে গেলে আমরা বোট খুলে পানিতে নিয়ে খেলতাম৷ সেই থেকে শুরু৷ এখন অবশ্য রাশেদ ভাই ও শিফাত ভাই সহযোহিতা করেন৷''

Bangladesch Bildergalerie Surfer surfen Mädchen Kinder
সার্ফিংয়ের বাইরে ওদের আনন্দছবি: Getty Images/A. Joyce

কক্সবাজারের মৌসুমী হকার জাহাঙ্গীর আলম ও গৃহীনি কাজল বেগমের ছোট মেয়ে, রিপা আক্তারের ছোট বোন রিতাও সার্ফিং শুরু করেছে৷ শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে শুকনোছড়িতে (নতুন নাম মুজিবনগর) তাদের বাড়ি৷

সার্ফিংয়ের ঐ প্রতিযোগিতায় রানার্সআপ হয়েছে শবে মেহেরাজ (১৩)৷ দিনমজুর জাফর আহমেদ ও গৃহীনি বেবী আক্তারে চার মেয়ে, দুই ছেলের মধ্যে মেহেরাজ চতুর্থ৷ শহরের কাছে ঘোনারপাড়া তার বাড়ি৷ মেহেরাজের সার্ফিংয়ে আসার কাহিনি রিপারই মতো৷ শুধু রিপা বা মেহেরাজ নয়, সার্ফিংয়ে জড়িত সব কিশোরীর ‘লাইভ সেভিং' প্রশিক্ষণ রয়েছে৷ তাই এখন তারা শুধু তীরে নয়, সাগরের মধ্যেও সার্ফিং করতে যেতে পারে, অসুবিধা হয় না৷

‘কক্সবাজার লাইফ সেভিং সাফিং ক্লাব'-এ পুরুষ-নারী সবাই সাফিং করে৷ এই মুহূর্তে ১১ জন কিশোরী সাফিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, যাদের মধ্যে আটজন বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে৷ ক্লাবের সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ সাইফুল্লা শিফাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েদের এখানে আনা সহজ ছিল না৷ এখনও ধরে রাখা কঠিন৷ অ্যামেরিকার এলিয়ান্ট নামে এক নারীর অনুদানে এখনো আমরা কয়েকটি মেয়েকে ধরে রাখতে পেরেছি৷ উনি আমাদের অনুদান পাঠান৷ আর সেই টাকা থেকেই আমরা প্রতিটি মেয়েকে মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দেই৷ পাশাপাশি পোশাক ও বোটগুলো দেয়া হচ্ছে সেই অনুদানের টাকাতেই৷''

তবে অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে এই মেয়েদের আর ধরে রাখা যাবে কিনা – তা নিয়ে উদ্বিগ্ন এই কর্মকর্তা৷ তাঁর কথায়, ‘‘গরিব পরিবারের এই মেয়েদের বয়স একটু বাড়লেই পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়৷ ফলে নতুন নতুন কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে আনতে হচ্ছে৷ আগাগোড়া মেয়েদের ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷''

‘কক্সবাজার লাইফ সেভিং সাফিং ক্লাব'-এর সভাপতি রাশেদ আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘মেয়েরা সমুদ্রসৈকতে কাজ করত৷ তারা পানি, চিপস এবং ডিম বিক্রি করত৷ তাদেরই আমরা সার্ফিংয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করলাম৷ কিন্তু এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের মা-বাবা৷ কারণ তাদের উদ্দেশ্য ছিল আয় করা৷ দুই ঘণ্টা সার্ফিংয়ে সময় দেয়ার চেয়ে মা-বাবারা দুই ঘণ্টার আয়কেই বড় করে দেখেন৷ এ জন্য কাজটি খুব ধীরে এগোচ্ছিল৷''

তিনি বলেন, ‘‘মেয়েরা স্কেটিং করছে, সার্ফিং করছে, শিখছে৷ তারা নিজেদের জীবন নিজেরাই রক্ষা করছে৷ আমার বিশ্বাস, তাদের এই প্রচেষ্টা তাদের পরিবারের স্বপ্নেও একদিন পরিবর্তন ঘটাবে৷ অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের নিয়ে কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখবেন৷ আর মেয়েরা পরিবারে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে৷'

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য