1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমরা ভারতে ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে’

৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারতে বামপন্থি বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সোচ্চার প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায়৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ‘ফ্যাসিবাদী' আখ্যায়িত করেছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/34QSx
ছবি: AP

গত সপ্তাহে ভারতের পুলিশ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে কবি ভারভারা রায়, মানবাধিকারকর্মী বার্মন গনঞ্জালভেস, লেখক-আইনজীবী অরুণ ফেরেরা, সাংবাদিক-অধিকারকর্মী গৌতম নওলাখা এবং ট্রেড ইউনিয়ন নেতা সুধা ভরদ্বাজসহ অনেককে গ্রেপ্তার করে৷

গত ৩১ ডিসেম্বর পুনেতে একটি রাজনৈতিক সভার পর উচ্চ বর্গীয় হিন্দুদের সঙ্গে নিম্নবর্গীয় দলিতদের সংঘাতের ঘটনা তদন্ত শুরু করে কর্তৃপক্ষ৷ ওই ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে এই পাঁচজনকে আটক করা হয় বলে ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে৷

পুনে পুলিশের যুগ্ম কমিশনার শিবাজী বোড়কে এফপিকে বলেছেন, ‘মাওবাদীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার' জন্য তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পিটিআইয়ের খবরে আরো বলা হয়, ‘‘মাওবাদী নেতাদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ক্ষমতাসীন বিজেপি প্রেসিডেন্ট অমিত শাহ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে হত্যার পরিকল্পনা সম্বলিত দুটি চিঠি চালাচালি হওয়ায় অ্যাকশনে যায় পুলিশ৷''

প্রখ্যাত পাঁচ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে বিজেপি সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার যে কৌশল নিয়েছে, তারই অংশ হিসেবে এঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

এই প্রেক্ষাপটে ডয়চে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে ম্যানবুকার পুরস্কারজয়ী অরুন্ধতী রায় বলেন, মোদী সরকার আইনি কাঠামোকে ব্যবহার করে বিরোধী পক্ষ, মুক্ত চিন্তার ব্যক্তি এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর প্রতিনিধিদের ঘায়েল করতে চাইছে৷

ডয়চে ভেলে: সরকারবিরোধীদের সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারে ভারতজুড়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে৷ সরকারের পদক্ষপ আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন?

অরুন্ধতী রায়: ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় ও অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যগুলোতে কয়েক হাজার মানুষ এখন কারাবন্দি৷ এরা এমন সব ব্যক্তি, যাদের নাম-খ্যাতি নেই, আইনজীবী নেই এবং যারা সংবাদ সম্মেলন করতে পারে না৷ 

আগে আদিবাসীদের ‘মাওবাদী' তকমা দেওয়া হয়েছে৷ এখন দেওয়া হচ্ছে দলিত এবং তাঁদের সমর্থনকারীদের৷ আমরা সংবিধানের বিরুদ্ধে একটি ক্যু দেখতে পাচ্ছি৷ এটা একটা ভয়ানক পরিস্থিতি৷

কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক কর্মী বলছেন, সরকারের সাম্প্রতিক দমনপীড়ন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধীর ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থা ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ আপনি কি একমত? 

আমি মনে করি, এটা ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থার চেয়েও পরিস্থিতি বেশি গুরুতর৷ সে সময় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল সংবিধান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, যদিও তাতে মানুষের অধিকার খর্ব হয়েছিল৷ কিন্তু এই সরকার ভারতকে একটি ‘হিন্দু রাষ্ট্র' ঘোষণার লক্ষ্যে সংবিধান লঙ্ঘন করছে, যেখানে সংখ্যালঘু এবং ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে দ্বিমতকারীদের অপরাধী বানানো হচ্ছে৷

আমার মনে হয়, জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত গ্রেপ্তার, গুপ্তহত্যা, বিনা বিচারে হত্যা, বোমা হামলা, দাঙ্গা ও বিশেষ জনগোষ্ঠীর ওপর সংঘবদ্ধ নির্যাতন- এসব চলতে থাকবে৷

সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বেশ কয়েকজন উদারপন্থি কর্মীর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এই রকম ইঙ্গিত করেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ৷ পরিকল্পিত এসব প্রাতিষ্ঠানিক হামলার পেছনে কে বা কারা আছে বলে মনে করেন?

কর্নাটকে সাংবাদিক-অধিকারকর্মী গৌরি লঙ্কেশ হত্যার তদন্তে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাতে সনাতন সংস্থার মতো বেশ কিছু ডানপন্থি সংগঠনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷

এখন পর্যন্ত যে বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পুরোদস্তুর সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্ক যাদের হিস্ট লিস্ট, গোপন আস্তানা ও নিরাপদ আশ্রয়, অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বোমা হামলা, হত্যা ও মানুষকে বিষপ্রয়োগের পরিকল্পনা থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে৷

একইসঙ্গে আমার মনে হচ্ছে যে, সব কিছুকে সহজভাবে ভিন্ন খাতে নিতে পারছে কর্তৃপক্ষ৷ সাম্প্রতিক এই ধরপাকড়ও প্রকৃত ঝুঁকি থেকে মনোযোগ অন্যদিকে নেওয়ার চেষ্টা বলেই আমি মনে করি৷

এখন বিজেপির জন্য দলিত, মাওবাদী বা নক্সালদের ওপর তাদের হামলা ঢাকতে এসব করা হচ্ছে৷ এটার কারণ হচ্ছে, নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ থেকে বাদ পড়া মুসলিমদের থেকে ভিন্ন অবস্থায় থাকা আদিবাসী ও দলিতদের আসনগুলোর ওপর নজর পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর৷ অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং তাঁদের ‘মাওবাদী' হিসেবে বর্ণনা করে সরকার দলিতদের অধিকারের দাবিকে চাপা দিচ্ছে৷ দেশজুড়ে হাজার হাজার মানুষকে কারাগারে ভরা হয়েছে৷ গরিব ও সুবিধাবঞ্চিতরা নিজেদের ঘর, ভূমি ও মর্যাদার জন্য লড়ছে৷ এইসব মানুষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হচ্ছে, বিনা বিচারে তাঁদের গারদে পোরা হচ্ছে৷

আমরা এমন একটি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি যেখানে পুলিশই তাকে ফ্যাসিস্ট বলছে৷ আজকের ভারতে সংখ্যালঘু হওয়া অপরাধ, গরিব হওয়া অপরাধ৷ দরিদ্র মানুষের পক্ষে কথা বললে সরকার উৎখাতের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়৷

ভারতে এখন অসহায় মানুষকে অনেকটা জেলখানার মতো করে আটকে রাখা হয়েছে এবং তাঁদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে৷ প্রতিবাদকারীদের কারাবন্দি করা হচ্ছে৷ দেশকে আবার ফিরে পেতে ঈশ্বর আমাদের সহায় হোন৷

(ভারতের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক অরুন্ধতী রায় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘গড অব স্মল থিংস'-এর জন্য বেশি পরিচিত৷ এ উপন্যাসের জন্য ১৯৯৭ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি৷)

মুরালি কৃষ্ণন/ এএইচ

আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷