1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আংশিক ভাস্কর্য নিয়ে কোনো বিতর্ক নাই, এটা জায়েজ’

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ ডিসেম্বর ২০২০

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সিকদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভাস্কর্য আর মূর্তি এক না আলাদা, তা নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিতর্ক আছে৷’’

https://p.dw.com/p/3ma6r
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সিকদার
ইমাম প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমির পরিচালক মাওলানা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সিকদারছবি: privat

তবে পূর্ণ প্রতিকৃতি না হয়ে অর্ধেক বা আংশিক ভাস্কর্য নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই, এটা জায়েজ আছে, বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷

ডয়চে ভেলে: ভাস্কর্য ও মূর্তি এক না আলাদা?
মাওলানা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান সিকদার: এই বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য আছে৷ বিশেষ করে মিশরের কিছু আলেম কিছু কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য করেছেন৷ যদি এবাদতের উদ্দেশ্যে হয় তা হলো তো মূর্তি৷ আর এই ক্ষেত্রে সব মাজহাবই মুসলমানদের জন্য এটা হারাম বলছে৷ কারণ ইসলামের মৌলিক বিষয় হলো একত্ববাদ৷ মূর্তি একত্ববাদের বিরুদ্ধে যায়৷ আর ভাস্কর্য হলো তা, যা এবাদতের উদ্দেশ্যে নয়৷ কেউ বাসায় রাখার জন্য, কেউ স্মরণ করার জন্য ভাস্কর্য তৈরি করে৷ তবে এব্যাপারেও নানা মত আছে৷ পূর্ণ প্রতিকৃতি না হয়ে অর্ধেক৷ আবার শরীরের কোনো ভঙ্গি, যেমন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে তার হাতের তর্জনি৷ এসবের ক্ষেত্রে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য নাই৷ এটা জায়েজ আছে৷ তবে পুরো শরীরের যদি ভাস্কর্য হয় সেটা নিয়ে নানা মত, বিতর্ক আছে৷ মিশরের আলেমরা অবশ্য স্মরণ বা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য পুরো শরীরের ভাস্কর্যকে জায়েজ বলেছেন৷ তবে কট্টরপন্থিরা এটা সমর্থন করেন না৷ তারা মনে করেন এটাকে কেন্দ্র করে মূর্তি পুজা শুরু হয়ে যেতে পারে৷

‘ইন্দোনেশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে আছে, সেটাকে তারা পর্যটনের কাজে ব্যবহার করছে’

এ ব্যাপারে পবিত্র কোরানের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা কী?
বলা হয়েছে তোমরা আল্লাহর সাথে শরিক করবে না৷ ভাস্কর্য তো আর শরিক করার জন্য করা হয় না৷ ভাস্কর্য করা হয় কাউকে স্মরণ বা সম্মান দেখানোর জন্য৷ যেমন স্ট্যাচু অব লিবার্টি মানুষ দেখতে যায়৷ এখানে পর্যটনের একটা ব্যাপার আছে৷

এই বিষয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অবস্থান কী?
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এই বিষয়ে আরো গবেষণা করছে৷ আরো তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে৷ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটও দেখতে হবে৷ সব মিলিয়ে আরো গবেষণা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন একটা মতামত দেবে৷

শুধু মানুষ না সব প্রাণীর ভাস্কর্য বা মূর্তি নিয়েই বিতর্ক আছে?
আসলে শুধু মানুষ নয়, সব ধরনের প্রাণীর ভাস্কর্য বা মূর্তি নিয়েই বিতর্ক আছে৷ মাওলানাদের কেউ কেউ বলছেন যারা প্রাণীর ছবি আঁকবে বা মূর্তি বানাবে তারা কেয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশি শাস্তি পাবে৷ তবে এর বিপরীতেও মাওলানাদের মতামত আছে৷ বিষয়টি তো বাংলাদেশে নতুন৷ তাই আমরা আরো গভীর গবেষণা করছি৷

নিজের ছবি তোলা, ভিডিওতে নিজেকে দেখানো, টেলিভিশনে নিজেতে উপস্থাপন করা- সেব্যাপারে বিধান কী?
এই ব্যাপারগুলো নিয়েও আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য আছে৷ হজের জন্য ছবি তোলা, জাতীয় পরিচয় পত্র এসব কাজে তো ছবি ছাড়া চলবেনা৷ এগুলোতে জরুরি কাজ৷ আমাদের আলেম ওলামারা তাই জায়েজ বলেছেন৷

উচ্চ আদালত বলেছেন ভাস্কর্য, ম্যুরাল, প্রতিকৃতি এগুলো ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক না৷ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এবং মসজিদের ইমামদের এনিয়ে মানুষকে সচেতন করতে বলেছেন৷ আপনারা কী উদ্যোগ নিচ্ছেন?
উচ্চ আদালত যে নির্দেশ দেবে তাতো সরকারের কাছে আসবে৷ সরকারের নির্দেশ তো অবশ্যই আমরা পালন করব৷

হিন্দুসহ আরো অনেক ধর্মে মূর্তি তৈরি এবং পূজা করার তো নিয়ম আছে৷ এখন আমাদের দেশে যদি ভাস্কর্য অথবা মূর্তি নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মূর্তি নির্মাণ কি বন্ধ করে দেয়া হবে?
না অন্য ধর্মের মানুষকে মূর্তি নির্মাণে বাধা দেয়ার কোনো সুযোগ নাই৷ লা কুম দ্বীনি কুম ওয়াল ইয়া দ্বীনসহ আরো অনেক কথা আছে এনিয়ে৷ অন্যের ধর্মের ওপর বাধা দেয়ার কোনো এখতিয়ার আমাদের নাই৷ এটা করা সমীচীনও হবে না৷ মুসলমানরা মহত্ব , ভালোবাসা, উদরতা দিয়ে অন্যদের জয় করবে৷

যেভাবে ভাস্কর্য আর মূর্তি ভাঙার দাবি হেফাজতে ইসলাম বা তাদের অনুসারীরা করছে, সেটা আরো বেড়ে গেলে ভবিষ্যতে অন্য ধর্মের মূর্তি তৈরির ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবি উঠবে কিনা?
না সেটা হবে না৷ হবে বলে আমি মনে করি না৷

ওয়াজে তো কেউ কেউ বলেন সব মূর্তি ভেঙে ফেলতে হবে...
সেটা যারা বলে তারা অজ্ঞতা থেকে বলে৷ আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিয়ে এখানে এখনো বসবাস করছি৷ এটাই আমাদের সংস্কৃতি৷ এই উপমহাদেশে যে দুই-একটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে তার পিছনে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থ কাজ করেছে৷

মুসলিম দেশে কি ভাস্কর্য আছে?
হ্যাঁ আছে ৷ তুরস্ক, ইরান, ইন্দোনেশিয়াসহ আরো অনেক মুসলিম দেশে ভাস্কর্য আছে৷ ইন্দোনেশিয়ায় তো প্রচুর পরিমাণে আছে৷ সেটাকে তারা পর্যটনের কাজে ব্যবহার করছে৷

তুরস্কে বঙ্গবন্ধুর এবং বাংলাদেশে কামাল আতাতুর্ক-এর ভাস্কর্য নির্মাণের যে কথা হচ্ছে তা কি ইসলামের নীতির বিরুদ্ধে যাবে?
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের কোরান হাদিসের ওপর অনেক জ্ঞান আছে৷ তেলাওয়াতের দিক দিয়ে পৃথিবীর কোনো মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান তার সামনে কিছুই না৷ ওখানে অনেক ইসলামিক স্কলার আছেন৷ তাদের সঙ্গে নিশ্চয়ই তিনি আলাপ আলোচনা করেছেন৷

বাংলাদেশে ইসলাম নিয়ে ব্যাখ্যা বা ফতোয় দেয়ার অধিকার কার? হেফাজতে ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী না অনকোনো ইসলামি দলের?
না না না, নিশ্চয়ই না৷ এব্যাপারে তো হাইকোর্টের আদেশ আছে৷ তাতে বলা হয়েছে যারা ইসলামের ব্যাপারে পরিপূর্ণ অভিজ্ঞ তাদেরই এই অধিকার আছে৷ তবে আমাদের প্রস্তাব, জাতীয় পর্যায়ে একটা ফতোয়া বোর্ড থাকা দরকার৷ যারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামিক মতামত দেবেন৷ এটা জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে পর্যন্ত করা যেতে পারে৷ বাইরের লোক কেন ফতোয়া দেবে৷ সরকারের পক্ষ থেকে অভিজ্ঞ আলেমরা ফতোয়া দেবেন৷

ইসলামিক ফাউন্ডেশনেরও তো একটা ফতোয়া বিভাগ আছে৷ তারা কি দায়িত্ব নিতে পারে না?
এটা অনেক ছোট আঙ্গিকে আছে৷ এটাকে আরো বৃহত্তর আঙ্গিকে করা দরকার৷

ইসলামি রাষ্ট্র না হলে সেখানে ইসলামি আইন চলে কিনা?
ইসলামি রাষ্ট্র না হলে ইসলামি আইন কীভাবে আসবে? যারা ইসলামি আইনের কথা বলেন তাদের অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে হবে৷ তারপরে সংসদে পাস করবে৷ তারপরে ইসলামি আইন চালুর প্রশ্ন আসে৷

দেশে তো অনেক আগে থেকেই তো অনেকের ভাস্কর্য আছে৷ হঠাৎ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কেন কথা উঠল? এটা কি ধর্মীয় না রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে?
আমার কাছে মনে হয় এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে৷ আমরা হিসাব করে দেখেছি দেশে চার থেকে পাঁচ হাজার ভাস্কর্য আছে৷ আক্রমণ শুধু বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপরে৷ এটা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ৷ বঙ্গবন্ধু তো আমাদের হৃদয়ে৷ তিনি তো আমাদের জাতির পিতা৷ তাই যারাই এটা করছে তারা উদ্দেশ্যমূলভাবে করছে, না কোনো শক্তির স্বার্থে এটি করছে কিনা তা দেখার বিষয় আছে৷ আমার কাছে বিষয়টা ঘোলাটে মনে হচ্ছে৷