1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অমর্ত্য সেনের মমতা-মন্তব্যে জোর জল্পনা

পায়েল সামন্ত
১৭ জানুয়ারি ২০২৩

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে অমর্ত্য সেনের মন্তব্যে চাপানউতোর রাজনৈতিক মহলে৷ তৃণমূল উচ্ছ্বসিত নোবেলজয়ীর মূল্যায়নে৷ বিরোধীরা খারিজ করছে তার বক্তব্য৷

https://p.dw.com/p/4MIZe
Indien Nobelpreisträger  Amartya Sen
ছবি: Matthew Lloyd/Getty Images for ReSource 2012/Getty Images

নোবেল বিজেতা বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বরাবরই বিজেপির ঘোর সমালোচক৷ গেরুয়া শিবিরকে সমাজ, অর্থনীতির নানা প্রশ্নে অতীতে বিদ্ধ করেছেন তিনি৷ এবার সরাসরি বিজেপির বিরোধী কোনো নেতার প্রশংসা শোনা গেল ভারতরত্নের মুখে৷

সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেনকে প্রশ্ন করা হয়, মমতা কি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন? নোবেলজয়ী বলেন, ‘‘এমন নয় যে তাঁর এই দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা নেই৷ তাঁর সেই ক্ষমতা রয়েছে৷ কিন্তু মমতা বিজেপির বিরুদ্ধে জনগণের হতাশার বিষয়গুলিকে এক ছাতার তলায় এনে বিভেদের রাজনীতির অবসান ঘটাতে নেতৃত্ব দেবেন, এটা এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়৷''

তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা মামলা আদালতে বিচারাধীন৷ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের ফাঁস ক্রমশ জোরালো হচ্ছে৷ এই পরিস্থিতিতে সেনের মন্তব্য অক্সিজেন জুগিয়েছে ঘাসফুল শিবিরকে

খোদ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ সম্পর্কে প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, অমর্ত্য সেনের উপদেশ তার কাছে আদেশের মতো৷ তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের বক্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বিধানসভা নির্বাচনে সেটা বোঝা গিয়েছে৷''

নোবেলজয়ীর মতামতকে উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি৷ বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কেউ কোনো মন্তব্য করতেই পারেন৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী কেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতিও ভাবতে পারেন৷''

অমর্ত্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে অত্যন্ত স্বাভাবিক বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক শুভময় মৈত্র৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে বিজেপি গরিষ্ঠতা না পেলে অন্যান্য দল সুযোগ পাবে৷ সেই বিকল্প জোটের নেতা হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম গুরুত্বের সঙ্গে উঠবে৷ এই যোগ্যতা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আছে৷''

যোগ্যতা থাকলেই কি কেউ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে বসতে পারেন: নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়

সাক্ষাৎকারে সেন অবশ্য বিকল্প জোটের চেহারা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন৷ কংগ্রেসের দুর্বলতার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, যদিও এই সময় জোর চর্চায় রাহুল গান্ধীর ‘ভারত জোড়ো' যাত্রা৷ কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘উনি যদি অনুগ্রহ করে কংগ্রেসের ইতিহাস দেখেন, তা হলে বোঝা যাবে এই দলে জোয়ার-ভাঁটা, ওঠা-নামা এসেছে৷ কংগ্রেসই পারে সারা দেশে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে৷''

বিজেপি বিরোধী শিবিরে আঞ্চলিক দলগুলির মধ্যে নেতৃত্বের প্রশ্নে প্রতিযোগিতা রয়েছে৷ আম আদমি পার্টি (আপ), ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস), সমাজবাদী পার্টি, শিবসেনা প্রভৃতি দলও নেতৃত্বের দাবিদার৷ অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে আপ দুটি রাজ্যে ক্ষমতায়৷ মোদীর বিকল্প হয়ে ওঠার লক্ষ্যে বিআরএস নেতা কে চন্দ্রশেখর রাও বুধবার দিল্লিতে জনসভা করে বিজেপি বিরোধী নেতাদের একজোট করতে চাইছেন৷

এদের টপকে যাওয়ার জন্য বেশি আসনে জেতার পাশপাশি সবার আস্থা অর্জন করতে হবে মমতাকে, এমনটাই মত পর্যবেক্ষকদের৷ বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যোগ্যতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রয়েছে৷ কিন্তু যোগ্যতা থাকলেই কি কেউ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদে বসতে পারেন? সবাইকে এক ছাতার নীচে আনা কঠিন৷'' যোগ্যতার প্রশ্নেও বিরোধীরা সন্দিহান৷ প্রবীণ বাম নেতা বিমান বসুর মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য পরিচালনায় যে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে প্রধানমন্ত্রী হওয়া অসম্ভব বলেই মনে হয়৷''

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বিজেপি কম আসনে জিতলে কোন বিরোধী দল কত আসন পেল, সেটাই যোগ্যতার থেকে বড় হয়ে উঠবে৷ পশ্চিমবঙ্গে ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র থাকায় সেটা তৃণমূল নেত্রীকে এগিয়ে রাখবে৷ শুভময়ের মতে, ‘‘ভোটের আগে বিকল্প জোট সম্ভব নয়৷ ফল বেরোনোর পর বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সুযোগ আসতে পারে৷''

নরেন্দ্র মোদী নিজেই নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে অখণ্ড ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী আখ্যা দিয়েছেন৷ বাম নেতা জ্যোতি বসু মসনদের খুব কাছে পৌঁছেও পারেননি৷ মমতা কি বাঙালির সেই আক্ষেপ পূরণ করবেন?