1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অমর্ত্য সেনকে নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য বিতর্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩১ ডিসেম্বর ২০২০

বাড়ি বিতর্কে অমর্ত্য সেনের পাশে তৃণমূল৷ তারা নিশানা করছে বিজেপিকে৷ গেরুয়া শিবিরের দাবি, এটা পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়৷

https://p.dw.com/p/3nPAL
West-Bengal | Pratichi Bhawan, das Haus von Prof. Amartya Sen
ছবি: Payel Samanta/DW

বিতর্কে এবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও তাঁর বোলপুরের বাড়ি৷ বিশ্বভারতী চত্বরের লাগোয়া বাড়ি ‘প্রতীচী'৷ হঠাৎই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ওই বাড়ির ভিতরে এমন কিছুটা অংশ ঢুকে আছে যা সেন পরিবারের এক্তিয়ারভুক্ত নয়৷ এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন সাতাশি বছর বয়েসি কৃতী বাঙালি৷ তিনি জানান, প্রায় ৮০ বছর আগে বাড়ি তৈরি করা হলেও এতদিন কোনও অভিযোগ করা হয়নি৷ কিন্তু আচমকা সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে৷

কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান বিশ্বভারতীর এই বিতর্কে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিশানা করেছেন কেন্দ্রের শাসকদলকে৷ তিনি নোবেলজয়ীকে ‘দাদা' সম্বোধন করে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর এই আহ্বানকে ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন অমর্ত্য সেন৷ তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের যে চিন্তাভাবনা, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ (ঠাকুর), নজরুল(ইসলাম) এসে পড়েন৷ সেইসব বাদ দিয়ে শুধু একদিকে সাম্প্রদায়িকতা করাটা আমার পক্ষে একেবারে শোচনীয়৷ এটার যোগ থাকতে পারে বলে আমি আগে ভাবিনি৷ মুখ্যমন্ত্রীর চিঠির পর মনে হল, নিশ্চিত যোগ আছে৷''

‘‘লেখক, সাংবাদিক সবার উপরই যে অত্যাচার চলছে, তার নবতম সংযোজন অমর্ত্য সেন’’: সুবোধ সরকার

 এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, শান্তিনিকেতনের ‘প্রতীচী'-র মধ্যে বিশ্বভারতীর নিজস্ব জমি ঢুকে গিয়েছে৷ রজতকান্ত রায় উপাচার্যের দায়িত্বভার সামলানোর সময় মৌখিকভাবে বিষয়টি অমর্ত্য সেনকে একাধিকবার জানিয়েছিলেন৷ কিন্তু অধ্যাপক সেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি৷ এদিকে বিশ্বভারতীর পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ বাংলার বুদ্ধিজীবীরা পথে নেমেছেন৷ বিক্ষোভে সামিল কবি সুবোধ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেনের উপর যে ধরনের অন্যায় করা হচ্ছে, সেটা সারা ভারতজুড়েই চলছে৷ লেখক, সাংবাদিক সবার উপরই যে অত্যাচার চলছে, তার নবতম সংযোজন অমর্ত্য সেন৷ নোবেলজয়ী অমর্ত্য যদি বিশ্বভারতীর জমি যদি কব্জা করেই থাকেন, তাহলে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হোক৷ যেহেতু তিনি তাদের সুরে সুর মেলাচ্ছেন না, তাই তাঁকে টেনে নামানোর চেষ্টা চলছে৷''

এই পরিস্থিতিতে বিজেপি ব্যাকফুটে৷ তারা এই বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে রাখতে চাইছে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় বলে৷ বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এটা একেবারেই বিশ্বভারতীর বিষয়৷ বাকিটা ভাই-বোনের বিষয়৷ এই বিতর্ক নাগরিক সমাজ প্রত্যাশা করে না৷ এতে সরকারি বুদ্ধিজীবিরা প্রতিবাদ জানাতেই পারেন৷ পুরোটাই প্রশিক্ষিত প্রতিবাদ৷''

অন্যদিকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ তৃণমূল সুপ্রিমোকে কটাক্ষ করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথ্যপ্রমাণ দেওয়া উচিত৷ কারণ উনি ছুটে গিয়ে ঝোল টানছেন৷'' আবার অধ্যাপক সেনকে বিদ্ধ করে তিনি বলেছেন, ‘‘জমিচোরকে কি নোবেল দেওয়া হয়েছে?''

শান্তিনিকেতন ও অমর্ত্য সেনকে ঘিরে যেভাবে রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে, তাতে ক্ষুব্ধ প্রতিষ্ঠানের সাবেক এবং বর্তমান ছাত্ররা৷ বিশ্বভারতীর ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্সের স্নাতকোত্তরের ছাত্র সোমনাথ সাউ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করার জন্য অমর্ত্য সেনের সঙ্গে কেন্দ্রের একটা সংঘাত বেঁধেছে৷ আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখছি, বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা অমর্ত্য সেনকে নিয়ে নানা নোংরা মন্তব্য করে চলেছেন৷ বিশ্বভারতীর উপাচার্য সেটাই আরো এক কদম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন৷ আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছে৷এই বিষয়টিকে নিয়ে আমরা কয়েকদিনের মধ্যেই প্রতিবাদে নামব৷''

বিশ্বভারতীর সঙ্গে রাজ্য সরকারের টানাপোড়েন ক্রমশ বাড়ছে৷ প্রতিষ্ঠানের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণ বিতর্কে তিক্ততা বেড়েছিল৷ অমর্ত্য সেনের বাড়ি নিয়ে বিবাদের পর তার মাত্রা চড়েছে৷ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া একটি রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বোলপুরের প্রশাসনিক বৈঠকে নিজেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এই বিতণ্ডায় কি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না বিশ্বভারতীর মর্যাদা, সম্মান? অধ্যাপক সেনের প্রতিবেশি তথা বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী, বর্ষীয়ান আশ্রমিক সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অবশ্যই৷ অমর্ত্য সেনের মতো অনেক বিখ্যাত প্রাক্তনী আমাদের পাড়ায় থাকেন৷ আশ্রম থেকে আমাদের সবাইকে বিচ্ছিন্ন করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য৷''

রবীন্দ্রনাথেরশান্তিনিকেতনের শান্ত পরিবেশ আজ কেমন? প্রবীণ আশ্রমিক বলেন, ‘‘আজ আমরা নিজভূমে পরবাসী হয়ে আছি৷ প্রাচীন ঐতিহ্য পাল্টে ফেলা হচ্ছে৷ রাস্তা বন্ধ করে বা দেয়াল দিয়ে ঘেরার চেষ্টা চলছে৷ তৎকালীন ইংরেজ শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই কবি এই শান্তিনিকেতনে আশ্রম গড়ে তুলেছিলেন৷ অন্যান্য কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো গড়ে তুললে শান্তিনিকেতনের নিজস্বতা থাকবে? এটা মানতে পারছি না৷''