1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কিছু মানুষ এমন কেন?

৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ট্রেন থেকে ছড়িয়ে পড়া তেলের জন্য অন্ধকারে আগুনের ঝুঁকির মধ্যেও শত শত মানুষ হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে- এই লাইনে দৃষ্টি আটকে গেল! হ্যাঁ, বলছি মাইজগাঁও এলাকায় তেলবাহী ট্রেন দূর্ঘটনার কথা৷

https://p.dw.com/p/3p0Wt
ট্রেনের ৭টি ট্যাংকার রেল লাইনের পাশে পড়ে যায়৷ছবি: bdnews24

বৃহস্পতিবার রাতে একটি তেলবাহী ট্রেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে সিলেটগামী ওয়াগন লাইনচ্যুত হয়৷ ট্রেন বা সড়ক দূর্ঘটনা বাংলাদেশে মোটেই অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, তবে আমার কথা কিন্তু সেটা নয়৷

ঘটনার পর সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার খলিলুর রহমান ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, ‘‘মাইজগাঁও ও বিয়ানীবাজারের মাঝে গুতিগাঁও এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাওয়ার পথে দূর্ঘটনাটি ঘটে৷ সিলেটের সাথে সারা দেশের রেলপথ আপাতত বন্ধ৷ ট্রেনের ৭টি ট্যাংকার রেল লাইনের পাশে পড়ে যায়৷ এ সময় তেল ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়তে থাকলে স্থানীয় লোকজন হাঁড়ি-পাতিল, বালতি, ড্রাম নিয়ে তেল সংগ্রহ করতে শুরু করে৷”  আর সে এলাকার বাসিন্দা টিটু চন্দ্র এ সম্পর্কে জানান,  ‘‘তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়েন৷ অগ্নিঝুঁকির মধ্যে তেল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শত শত মানুষ৷ রাতের বেলা অন্ধকারের মধ্যে পুলিশ চেষ্টা করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি৷’’

অন্ধকার রাতে শুধু তেলের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছে মানুষ৷ কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার! তবে এমন ঘটনাও বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়,  এ ধরনের কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে সুযোগসন্ধানী অনেকেই সেখান থেকে এটাসেটা চুরি করে থাকে৷ আমার শুধু জানতে ইচ্ছে করে , এ কেমন মানসিকতা ? কেন তারা সংকটজনক পরিস্থিতিতেও শুধু নিজেদের স্বার্থের কথা ভাবেন? এর মূল কারণ কি দেশের পরিস্থিতি বা মানসিক অস্থিরতা, নাকি অভাব? ‘মাগনা' কোনো কিছু পাওয়ার মধ্যে কি এক ধরনের আনন্দ কাজ করে? সেটাই কি ধরে নেবো? তবে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ পরিস্থিতি বা সংকটাপন্ন পরিস্থিতিতেও লুটপাট, চুরি-চামারি হওয়ার কথা আমরা জানি৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব ঘটনা ঘটে থাকে সাধারণত তুলনামূলকভাবে গরিব দেশগুলোতে৷

Nurunnahar Sattar, DW-Mitarbeiterin Bengali Programm
নুরুননাহার সাত্তার, ডয়চে ভেলেছবি: DW/A. Islam

যা-ই হোক, তবে মাইজগাঁও এলাকার তেলবাহী ট্রেন দূর্ঘটনায় পুলিশ নাকি অনেক চেষ্টা করেও তেলের জন্য লোকজনকে সামলাতে পারেনি৷ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই তো যে কোনো দেশের পুলিশের প্রধান দায়িত্ব৷ আসলে আমি অনেকদিন ধরে আছি কড়া নিয়ম-কানুনের এক দেশে, যে দেশে যে কোনো বিপদ-আপদ বা সংকটময় পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে যাওয়া মানে সমস্যার সমাধান অনেকটাই হয়ে যাওয়া৷ পুলিশের প্রতি জার্মানদের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস৷ বাংলাদেশের পুলিশের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন৷ এর পেছনেও দেশের সমাজব্যবস্থা দায়ী বলে আমার ধারণা৷

শুধু অভাবের তাড়নায়ই কি স্থানীয় লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুনের মধ্যে তেল আনতে গেছে ? আর্থিক অসচ্ছলতা একটা কারণ হতে পারে, তবে শুধু অভাবে স্বভাব নষ্ট আমার তা পুরোপুরি মনে হয় না৷ মাঝে মাঝে আমার সত্যিই মনে হয়, সবকিছুতেই ‘প্রথম’ হওয়ার এক অলিখিত অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে, গরিব-ধনী সকলের মধ্যে৷ হোক সেটা, অন্যের কাছ থেকে কিছু কেড়ে নেওয়া, চুরি, ঘুস কিংবা  মাগনা কিছু পাওয়া৷  অমুক করছে, আমাকেও করতে হবে-এমন এক মানসিকতাও কাজ করে অনেকের ভেতরে৷  তবে  এসবের পেছনে অবশ্যই দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বড় ভূমিকা রয়েছে৷ কারণ, কারো ঘরে খাবার নিশ্চিত থাকলে তার তো কখনো রাতের অন্ধকারে সামান্য তেলের জন্য আগুনে হুমড়ি খেয়ে পড়ার কথা নয়! আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান অন্তত তাই বলে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য