1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রেন দুর্ঘটনার প্রধান কারণ চালকের ক্লান্তি

সমীর কুমার দে ঢাকা
৪ অক্টোবর ২০১৯

বাংলাদেশে কেন এত ট্রেন দুর্ঘটনা? চালকদের কি প্রশিক্ষণের অভাব? ট্রেন চালক ফরিদা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন, ‘‘প্রত্যেক চালককে দুই বছর প্রশিক্ষণ নিয়েই ফিল্ডে আসতে হয়৷’’

https://p.dw.com/p/3Qjos
বাংলাদেশের প্রথম নারী রেলচালক সালমা খাতুনছবি: privat

ফলে প্রশিক্ষণের অভাব থাকার কথা না৷ আসলে ডিউটির চাপে ক্লান্ত চালকরা৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘চালক সংকটের কারণে তাদের রোস্টার ঠিক থাকে না৷ কখনও ২৪ ঘন্টাও ডিউটি করতে হয়৷''

মাঝে মধ্যেই বাংলাদেশে ট্রেন লাইনচ্যুত বা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়৷ গত দুই দিনে দু'টি দুর্ঘটনা ঘটেছে৷ বৃহস্পতিবার রংপুরে ইঞ্জিন ঘুরাতে গিয়ে চালক ট্রেনের বগিতেই ধাক্কা দিয়েছেন৷ আর শুক্রবার আখাউড়ায় একটি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে৷ দুই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়৷

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক শামসুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের নজর উন্নয়নের দিকে৷ কিন্তু মেরামত যে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সেদিকে বাজেটও কমে যাচ্ছে৷ বৃটিশ আমলের রেললাইন নিয়মিত সংস্কার করা প্রয়োজন৷ সেগুলো কি হচ্ছে? পাশাপাশি অনেকদিন ধরেই রেলে জনবল কম৷ এটা অন্য সেক্টরের মতো না৷ একজনকে নিয়োগ দিলে তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগাতে সময় লাগে৷ ১৯৯১ সালে তো বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষকে রেল থেকে গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় দেওয়া হয়েছে৷ এরপর কিন্তু খুব বেশি জনবল নেওয়া হয়নি এই সেক্টরে৷''

নুরুল ইসলাম সুজন

সর্বশেষ শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জালালাবাদ এক্সপ্রেসের মালবাহী বগি লাইনচ্যুত হয়৷ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটের রেল যোগাযোগ আবারও সচল হয়েছে৷ 

ট্রেন কেন এত লাইনচ্যুত হচ্ছে? এত বেশি দুর্ঘটনার কারণ কী? জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ব্রিটিশ আমলের রেলপথকে তো খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে কখনো নেওয়া হয়নি৷ আগে মানুষ ট্রেনে চড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতে না৷ এখন অনেক বেশি মানুষ ট্রেনে চড়েন৷ ১৯৭৩ সালে রেলে জনবল ছিল ৬৮ হাজার৷ তখন দেশের মানুষ ছিল ৭ কোটি৷ আর এখন ১৬-১৭ কোটি মানুষের দেশে রেলের জনবল ২৭ হাজার৷ ১৯৮৬ সাল থেকে তো রেলে জনবল নিয়োগ বন্ধই ছিল৷ এরমধ্যে বিএনপি এসে বহু মানুষকে বিদায় করেছে৷ ফলে বড় ধরনের জনবলসংকট তৈরি হয়েছে৷ আমরা নতুন করে কিছু নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছি৷ কিন্তু এরজন্য তো সময় দরকার৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বহু চালককে অবসরে না পাঠিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে রেখে দিচ্ছি৷ তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়৷ আর দেশে সিঙ্গেল লাইনে ট্রেন চলে৷ ফলে কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে পুরো এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়৷ এটা যতদিন না ডাবল লাইন করা যাচ্ছে, ততদিন এই ধরনের কিছু সমস্যা থাকবেই৷''

বৃহস্পতিবার রংপুরে ট্রেনের ইঞ্জিন ঘুরাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছেন৷ এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫০-৬০ জন ট্রেনযাত্রী৷ এদের মধ্যে গুরুতর আহত ১৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ সংশ্লিষ্টরা জানান, সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা পঞ্চগড়গামী উত্তরবঙ্গ মেল ট্রেনটি কাউনিয়া স্টেশনে পৌঁছানোর পর বিকেল সোয়া ৪টার দিকে চালক ইঞ্জিন পরিবর্তন করছিলেন৷ তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে৷ এতে আপেল মাহমুদ (২০) নামে এক শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে নিহত হন৷ 

ফরিদা আক্তার

এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের কেওয়াটখালীতে দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি বগি লাইনচ্যুত হয়৷ এতে দেড় ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল৷ 

ট্রেন চালক ফরিদা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ট্রেনে অটোমেটিক ও ম্যানুয়াল দুই ধরনের ব্যবস্থা আছে৷ দুটো একসঙ্গে কাজ না করলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে যায়৷ এতে চালকের কিছুই করার থাকে না৷ কোনো চালকই চান না দুর্ঘটনা ঘটাতে৷ কিন্তু তারপরও ঘটে যাচ্ছে৷ আমরা যারা ট্রেন চালাই, তারা তো কম্পিউটার না, মানুষ৷ নানা কারণে যে পথ যেতে ১৪ ঘণ্টা লাগার কথা, সেখানে ২৪ ঘণ্টাও লেগে যায়৷ আমাদের রোস্টার বলে কিছু নেই৷ কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে তখন সবাইকে ডেকে আনা হয় ডিউটির জন্য৷ আমরা সামনে যদি একটি গরুকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি তা-ও চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম নেই, আর বলি আল্লাহ আমি এই গরুটিকে বাঁচাতে পারলাম না৷ কারণ, এখানে আমাদের কোনো হাত নেই৷ আমাদের তো পরিবার আছে৷ আমার দুটো মেয়ে আছে৷ তাদেরও সময় দিতে পারি না৷ এবার ঈদের সময় আমার শ্বাশুড়ি বলছিলেন, ‘এটা কেমন চাকরি, ঈদের দিনও ডিউটি করতে হয়৷' আসলে আমাদের চাকরিটাই এমন৷ মানুষকে তার গন্তব্যে পৌঁছে দিতে হবে এটাই আমাদের চাকরি৷'' রেলে বর্তমানে ১৫ জন নারী চালক আছেন বলেও জানাল ফরিদা৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য