রোগা হতে গেলে অন্ত্রকে খুশি রাখতে হবে
৪ ডিসেম্বর ২০১৮বিজ্ঞানীদের ধারণা, শর্ট চেন ফ্যাটি অ্যাসিড অন্ত্র ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযোগ গড়ে তোলে৷ ব্যাকটেরিয়া যখন অন্ত্রের মধ্যে কোনো দুগ্ধজাত পণ্য বা উচ্চ ফাইবারসম্পন্ন খাবার গলিয়ে ফেলে, তখন ফ্যাটি অ্যাসিড সৃষ্টি হয়৷ তাহলে কি খাদ্য বাছাইয়ের মাধ্যমে আমরা সরাসরি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারি? প্রো. মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘‘খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে অবশ্যই আমরা গাট ফ্লোরার উপর প্রভাব রাখতে পারি৷ অন্ত্রের অবস্থা আসলে রান্না ও শরীরের মধ্যে সংযোগের প্রতিফলন৷ অর্থাৎ আমরা যা খাই, তা হজম করতে হয়৷ সেই খাবার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ও স্বাস্থ্যকর উপাদানে রূপান্তরিত হলেই ভালো হয়৷''
এমন ক্যাটাবলাজিম বা তন্তুক্ষয়ের মাধ্যমে আন্ত্রিক ব্যাকটেরিয়া আমাদের মনমেজাজ ও আচরণের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে৷ কারণ বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া নানা রকম নিউরো মেসেঞ্জার উৎপাদন করে – যেমন ডোপামিন৷ সেটি আমাদের মস্তিষ্কের নিউক্লিয়াস অ্যাকুম্বেনস ও নেশা সংক্রান্ত আচরণের উপর প্রভাব ফেলে৷ অথবা সেরেটোনিন, যে হরমোন সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে৷
এই সব পদার্থ আমাদের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেমের উপর প্রভাব ফেলে৷ মানসিক অবসাদের মতো রোগের ক্ষেত্রেও এগুলির ভূমিকা রয়েছে৷ এমনকি শারীরিক ক্লান্তি ও ওজনের উপরেও এই পদার্থ প্রভাব ফেলে৷ প্রো. আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘‘অতিরিক্ত ওজনের মানুষ এবং যে সব মানুষ সহজেই রোগা থাকতে পারে, তাদের অন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ১০ বছর আগেই ধরা পড়েছে৷ প্রাণীর উপর পরীক্ষার মাধ্যমে আরও অগ্রগতি ঘটেছে৷ রোগা ইঁদুরের উপর মোটা ও রোগা মানুষের গাট ফ্লোরা প্রয়োগ করে দেখা গেছে, যে খুব কম সময়ের মধ্যে ইঁদুরের শরীরে দাতার ওজনের প্রতিফলন ঘটেছে৷''
এর কারণ হলো, অতিরিক্ত ওজনের মানুষের গাট ফ্লোরা-র গঠন আলাদা৷ রোগা মানুষের তুলনায় তাতে ব্যাকটেরিয়ার বৈচিত্র্য কম৷ অন্যদিকে ফার্মিকিউটেস নামের বিশেষ এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আধিক্য দেখা যায়৷ এই ব্যাকটেরিয়া খাদ্য হজম করার ক্ষেত্রে বিশেষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে৷ প্রো. মিশায়েলা আক্সট-গাডেরমান বলেন, ‘‘ফার্মিকিউটেস-এর অনুপাত মাত্র ২০ শতাংশ বেড়ে গেলেই আমাদের অন্ত্রের গাট ফ্লোরা খাদ্য থেকে প্রায় ১০ শতাংশ বেশি ক্যালোরি শুষে নেয়৷ শুনতে বেশি মনে না হলেও সারা দিনে এর অর্থ ২৫০ ক্যালোরি৷ এমনটা চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে ৮ থেকে ৯ কিলোগ্রাম বাড়তি ওজন যোগ হয়৷''
তবে এমন পরিস্থিতিতে অসহায় বোধ করার কোনো কারণ নেই৷ ফার্মিকিউটেস ব্যাকটেরিয়া ফাস্ট ফুড, চিনি ও অ্যালকোহলের মতো মেদভরা ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বেশি পছন্দ করে৷ অন্যদিকে খাবারে অনেক ফাইবার, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ফলমূল, শাকসবজি যোগ করলে রোগা করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়া বহাল তবিয়েতে থাকে৷
আমাদের মনমেজাজ, আচরণ ও স্বাস্থ্যের স্বার্থে এমন ব্যাকটেরিয়া সযত্নে পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷
স্টেফানি ক্র্যুগার/এসবি