রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণে কুৎসা
২ মে ২০১৪ভারতে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সপ্তম পর্ব সবে শেষ হলো৷ নির্বাচনি প্রচারকে একটা বিপণন বলা যায় অবশ্যই৷ তাই ভোটের ফলাফলের ওপর সফল বিপণনের ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ এবার বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা যেভাবে অশালীন ও বিদ্বেষমূলক ভাষায় একে-অপরকে আক্রমণ করেছেন বা করছেন, তাতে সংবিধান বা আদর্শ নির্বাচনি আচরণবিধিই শুধু লঙ্ঘিত হয়নি, রুচি, শালীনতা বা সৌজন্যের প্রশ্নকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হয়েছে৷
দেশের ভবিষ্যত কর্ণধার হবেন যাঁরা, তাঁদের ভাষা কখনও কখনও ‘‘তুই-তোকারির'' পর্যায়ে নেমে এসেছে৷ বিপক্ষ দল বা দলের নেতাদের দলীয় নীতি বা কর্মসূচির সমালোচনা করার অধিকার অবশ্যই আছে ভারতের মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায়৷ কিন্তু তাতে শোভনতার একটা ন্যূনতম মাত্রা থাকা বাঞ্ছনীয়৷ ভোট ব্যাংকের রাজনীতিকে ব্যবহার করা হচ্ছে উৎকট ও স্থুলরূপে৷ বিদ্বেষ ছড়ানো গরম গরম ভাষণে শ্রোতা-দর্শকদের তাৎক্ষণিক হাততালি হয়ত পাওয়া যায়, কিন্তু রাজনীতির মূল্যবোধটা যায় নষ্ট হয়ে৷
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে শাহজাদা বলে কটাক্ষ করে তুলনা করেছেন কমেডিয়ানের সঙ্গে৷ প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর স্বামী রবার্ট বাড্রার বিরুদ্ধে ওঠা জমি কেলেঙ্কারি প্রসঙ্গে মোদীকে পাল্টা খোঁচা দিয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর মন্তব্য ‘‘একেবারেই ছেলেমানুষের আচরণ৷ ইনি হতে চান দেশের প্রধানমন্ত্রী? মোদীর হাবভাব যেন ভীতু ইঁদুরের মতো৷''
পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক তরজাটা জমেছে সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি নিয়ে৷ পশ্চিমবঙ্গে মোদী এক জনসভায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘মমতাজী, যে বাংলায় মা সারদার পূজো হয়, সেই মাকে চিটফান্ড বানালেন কীভাবে?'' মমতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘এত বড় সাহস? কে তুই? কোন হরিদাস?'' রাজ্যের সিপিআই-এম নেতা গৌতম দেবের মন্তব্য, ‘‘ভদ্রমহিলার ডিএনএতে গণ্ডগোল৷ মিথ্যা ছাড়া সত্যি বের হয় না৷''
সারদা প্রশ্নে তৃণমূলকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস মুখপাত্র অবিষেক মনু সিংভি বলেছেন, ‘‘টিএমসি মানে কী? তৃণমূল মডেল চিট৷ তৃণমূল তো প্রতারণার মডেল হয়ে গেছে৷ পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের মন্তব্য, ‘‘ভূতের মুখে রাম নাম৷ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস নয় মানুষ বলছে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কর্পারেশন পার্টি৷ সিংভিকে তাঁর ব্যক্তিগত কিছু ঘটনা নিয়ে অশোভন ইঙ্গিত করে বলা হয়, ২০১২ সালে কেন সিংভিকে সংসদীয় কমিটি থেকে এবং দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল?
বিহারে বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিং তাঁর সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষমূলক ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা মোদী বিরোধীতা করবেন, তাঁদের পাকিস্তানে চলে যেতে হবে৷ ভারতে তাঁদের স্থান নেই৷'' একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া৷ এই ধরণের মন্তব্যের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশের কাছে৷ উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী নেতা আজম খানের প্রত্যুত্তর, দ্বিতীয়বার গোধরাকাণ্ড হলে মোদীকে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলা হবে৷'' বিহারের আরজেডি নেতা লালু প্রসাদ মোদীকে সম্বোধন করেছেন গুজরাট দাঙ্গার কষাই বলে৷ পাল্টা ব্যঙ্গ মোদীর৷ ‘‘এক জেল খাটা আসামির মুখে এ কথা মানায় না৷ গরুকে পুজো করে অথচ গবাদি পশুর খাদ্য কেলেঙ্কারিতে হাজতবাস করে এখন কংগ্রেসের সঙ্গে গা ঘষছেন৷''
ভোট প্রচারে বেশির ভাগই ব্যক্তিগত আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণ অকথ্য ভাষায়৷ দেশের ভবিষ্যত সমৃদ্ধি বিকাশ কর্মসূচিতে দলের রোডম্যাপ কী – তা তুলে ধরার চেষ্টা করেননি ভোট প্রার্থী রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা৷